বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে যে সব শর্ত

বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে যে সব শর্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক: গতকাল বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। তবে পুরোদমে শুরু হবে ২৭ জানুয়ারি থেকে। ম্যানুয়ালি ভাঙা হবে ভবনটি। তবে ভাঙার আগে বিপজ্জনক দ্রব্য ও কাচের জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে হবে। ভাঙা বিজিএমইএ ভবনের সব অংশ নেওয়া হবে দোলাইপাড়। এ কাজের জন্য ছয় মাস সময় দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজকে। এ নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজউকের চুক্তিও হয়েছে। আর বিষয়টি মনিটরিং করতে দুটি মনিটরিং কমিটি করেছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

ভবন ভাঙার কাজের শর্তাবলি:

১. কাজটি ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।

২. ভবনের চারদিকে সেফটি কভার ও নেটিং ব্যবহার এবং সেফটি স্টিল ব্রাকেট স্থাপন মালামাল ব্যবহার করতে হবে।

৩. ভবন ভাঙার কাজের ব্যবহার প্রস্তাবিত/নিয়োজিত মেশিনারিজগুলোর চলাচল, নিয়ন্ত্রণ ও কাজ করা অবস্থায় যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৪. শ্রমিকদের নিরাপত্তার পোশাক পরিধান করতে হবে।

৫. ভবনটি ওপর থেকে নিচের দিকে সবকিছু ভাঙতে হবে। ডাম্পিং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৬. ভবন ভাঙার সময় সেখানে কোনও রাষ্ট্রবিরোধী কাজ করা যাবে না।

৭. ভবন ভাঙার সময় কোনও শ্রমিক আহত বা নিহত হলে সেজন্য রাজউক কোনও দায় বহন করবে না। চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানটি সব দায় নেবে।

৮. ভবনের গ্লাস অপসারণের সময় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৯. ভবনের কাছের সড়কে পথচারী ও যানবাহন চলাচল নিরাপদ ও জায়গা রাখতে হবে।

১০. ভবন ভাঙার সময় সার্বক্ষণিক অগ্নিনির্বাপণী ব্যবস্থা প্রস্তুত রাখতে হবে। এছাড়া অক্সিজেন গ্যাস ও অক্সিজেন মুখোশের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় ওষুধসহ একজন চিকিৎসকের নেতৃত্বে একটি দল প্রস্তুত থাকবে।

ভাঙা বিজিএমইএ ভবন যাবে দোলাইপাড়:

বিজিএমইএ ভবনের প্রতিদিনের রাবিশ ও কংক্রিটের অংশ ওই দিনই সরিয়ে নেবে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি। সেগুলো নিয়ে দোলাইপাড়ের একটি খোলা জায়গায় রাখা হবে। এতে রাজউক সহায়তা করবে। দোলাইপাড় থেকে সেগুলো ফোর স্টার বিভিন্ন জায়গায় তাদের ব্যবসার কাজে এসব জিনিসপত্র বিক্রি বা ব্যবহার করতে পারবে।

পুরোদমে ভাঙা শুরু হবে সোমবার (২৭ জানুয়ারি):

ভাঙার কাজ বুধবার উদ্বোধন হলেও পুরোদমে কাজ শুরু করতে আরও ৪-৫ দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছে মেসার্স ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ। তারা ধর্মীয় রীতিনীতি অনুসরণ করে ভাঙার কাজ শুরু করবে। সোমবার থেকে প্রতিষ্ঠানটি পুরোদমে ভাঙার কাজ শুরু করবে।

ভবন ভাঙা শুরুর আগে বিপজ্জনক দ্রব্য সরাতে হবে:

প্রথমে ভবনের বিপজ্জনক দ্রব্য থাকলে তা শনাক্ত করে অপসরাণ করতে হবে। বেইলি ব্রিজটি ভেঙে একটি রাস্তা তৈরি করতে হবে। যানবাহন রাখতে পর্যাপ্ত জায়গা রাখতে হবে। বাইরের গ্লাস ফিটিং অপসারণ করতে হবে। অভ্যন্তরীণ ফিটিংস যেমন বৈদ্যুতিক ফিটিংস, গ্যাস-পানি ফিটিংস অপসারণ করতে হবে। ডেকোরেশন ও পার্টিশন অপসারণ করতে হবে। ছাদ, কংক্রিটের বিম ও কলাম ভাঙা ওপর থেকে নিচের দিকে শুরু করতে হবে। বেজমেন্ট, ভূগর্ভস্থ ট্যাংক অপসারণ করতে হবে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের জন্য জেনারেটর ব্যবহার করা হবে বলেও চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই ভবন ভাঙতে হবে।

ভাঙার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতির নাম:

এক্সকেভেটর, বুলডোজার, কংক্রিট ক্যাজহামার, দীর্ঘ ও উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন ক্রেন, ড্রাম ট্রাক, ফর্ক লিফট, ওয়েল্ডিং মেশিন, বিভিন্ন প্রকার কাটিং মেশিন, বিভিন্ন প্রকার হ্যান্ড টুলস ও গ্যাস কাটার।

ভাঙার কাজে তাদারক কমিটি:

ভবনটি ভাঙার কাজে দু’টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। একটি টপ সুপারভিশন কমিটি, অপরটি সার্বক্ষণিক তদারকি কিমিটি।

ভবন ভাঙার আগের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাবে মেসার্স ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজ:

মেসার্স ফোর স্টার এন্টারপ্রাইজের পরিচালক নসিরুল্লাহ খান বলেন, ‘এর আগে আমরা একটি ১৮ তলা ভবন ভেঙে অপসারণ করেছি। আমাদের সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে। এই ভবনটি ভাঙার ক্ষেত্রে আমরা আরও বেশি সচেতন। এখানে আমরা রাজউক থেকেও পর্যাপ্ত সহযোগিতা পাচ্ছি। তারা আমাদের সব ধরনের সহযোগিতা করছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ভাঙা অংশ দোলাইপাড় পাঠাবো। সেখান থেকে সেগুলো অন্য কাজে ব্যবহার করবো। আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। এই ভবনটি ভাঙার ক্ষেত্রে আমরা লাভ-লস দেখছি না। প্রতিষ্ঠানের পরিচিতির জন্য আমরা কাজ করছি।