বাড়ি নির্মাণে গ্রামের মানুষকে ঋণ দেবে সরকার, ফ্ল্যাটে থাকবে গ্রামের মানুষরাও

ঢাকা: ‘ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়নে সুবিধাভোগীর আওতায় আসছেন গ্রামের মানুষরাও। এরই অংশ হিসেবে নিম্নবিত্তদের বহুতল ফ্ল্যাট বাড়িতে রাখার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নিজেদের প্লান্টে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ও গ্যাস ব্যবহার করবেন তারা। হাতের কাছেই গড়ে উঠবে শহরের মতো নামিদামি স্কুল, বিনোদন পার্ক, কাঁচাবাজার, কমিউনিটি সেন্টার, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। জীবনমান হবে শহরের মতোই। দেশের আবাদি জমি রক্ষা ও পানিবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাসহ বহুতল ভবনকে ঘিরে দারিদ্র্য বিমোচনের সব উপকরণ সৃষ্টি করা হবে গ্রামেই। এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে সরকার। এ কর্মসূচি ও প্রকল্পের নাম ‘পল্লী জনপদ’। এই প্রকল্পের উদ্ভাবক বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি।

পল্লী জনপদ প্রকল্পের নকশা
পল্লী জনপদ প্রকল্পের নকশা

অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কৃষি জমি রক্ষায় এ প্রকল্পে বাড়ি নির্মাণে গ্রামের মানুষকে ঋণ দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই পাঁচবছর মেয়াদি এ প্রকল্পের জন্য অর্থও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যার পরিমাণ ৩১৩ কোটি ২ লাখ টাকা। বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন ‘সহায়তায় বাংলাদেশ পল্লী আবাসনে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা’ প্রকল্পের আওতায় গ্রামের মানুষকে সরকার এ ঋণ দেবে। চলতি অর্থবছর থেকেই এ ঋণ দেয়া শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
পল্লী জনপদ প্রকল্প গ্রামের মানুষের জীবনমান উন্নয়নসহ দারিদ্র্য বিমোচনের নানা কর্মসূচিতে অংশ নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করবে। প্রাথমিকপর্যায়ে সাত বিভাগে একটি করে মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হবে। চারটি ক্যাটাগরিতে প্রতিটি পাঁচতলা ভবনের ৭টি ভবনের একেকটি কমপ্লেক্সে গ্রামের ২৭২ পরিবারের স্থান সংকুলান হবে। আগামী বছরেই ফ্ল্যাট নির্মিত হয়ে ২৭২টি করে পরিবার বসবাস করতে পারবে। পর্যায়ক্রমে তা দেশের সব এলাকায় স্থাপন করা হবে।
এসব বহুতল ভবনে ৪ ধরনের ফ্ল্যাট থাকবে। প্রতিটি ফ্ল্যাটেই বেডরুম, ড্রইংরুম, রান্নাঘর, ডাইনিং স্পেস ও অ্যাটাচড বাথরুম সুবিধা থাকবে। এই প্রকল্পের প্রথমে কাজ শুরু হয়েছে ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর উপজেলার জলির পাড়া গ্রামে। সেখানে ৩ দশমিক ৭৫ একর খাস ভূমির ওপর নির্মিত হচ্ছে এমন ফ্ল্যাট ভবন। এভাবে সিলেট বিভাগের দক্ষিণ সুরমা, খুলনা বিভাগের রূপসা বাটিয়াঘাটা, রংপুরের সদরের নিয়ামতপুর, বগুড়ায় শাজাহানপুর উপজেলার জামালপুরে। প্রতিটি স্থানেই এ প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি কেনা হয়েছে।
ইতোমধ্যেই পাইলট প্রকল্প হিসেবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে। বগুড়া আরডিএ ও সেন্টার ফর ইরিগেশন অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট ২ হাজার ১৭ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বলেও জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
প্রাথমিকভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪২৪ দশমিক ৩৪ কোটি টাকা। যার ৭০ শতাংশ দেবে সরকার ও বাকি ৩০ শতাংশ মিলবে সুবিধাভোগীদের কাছ থেকে। প্রথম বছরের জন্য ৯০ কোটি টাকার বরাদ্দ মিলেছে। পল্লী জনপদের সুবিধাভোগীরা যেন স্বল্পসুদে পরিশোধ করতে পারে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে সেই ব্যবস্থা করে দেবে আরডিএ।

উল্লেখ্য, এর আগে ১৯ আগস্ট ২০১৪ সালে একনেকে পল্লী জনপদ প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে কম জমিতে বেশি মানুষ বসবাসে গ্রাম পর্যায়ে ‘পল্লী জনপদ’ প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এ জন্য প্রাথমিকভাবে সাতটি বিভাগে সাতটি বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য ৪২৪ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক।

২০১৪ সালে রাজধানীর শেরোবাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক’এর বৈঠক
২০১৪ সালে রাজধানীর শেরোবাংলানগর এনইসি সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক’এর বৈঠক

একনেক বৈঠকে পল্লী জনপদ প্রকল্প সম্পর্কে বলা হয়- মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৭০ শতাংশ সরকার এবং বাকী ৩০ শতাংশ বহন করবে সুবিধাভোগীরা। ফ্ল্যাট মালিকরা ১৫ বছরে সরকারকে ৫ শতাংশ সুদহারে ঋণের টাকা পরিশোধ করবে। এই হিসেবে সরকার প্রকল্পের জন্য ৩৬২ কোটি ৯৮ লাখ এবং সুবিধাভোগীরা ৬১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয় করবে।
একনেক সভায় আজ পল্লী জনপদসহ মোট ৮২৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘একনেক সভায় পাস হওয়া মোট প্রকল্প ব্যয়ের ৫২০ কোটি ৩ লাখ টাকা সরকারি কোষাগার থেকে আসবে। ৮৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা আসবে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন থেকে। আর বাকী ২২২ কোটি ৪১ লাখ টাকা পাওয়া যাবে প্রকল্প সাহাস্য হিসেবে।’
পল্লী জনপদ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে জুন, ২০১৭। বাস্তবায়নকারী সংস্থাসমূহ হচ্ছে-সেন্টার ফর ইরিগেশন এন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট (সিআইডব্লিউএম), পল্লী উন্নয়ন একাডেমি এবং সমবায় বিভাগ।
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম হলো-৪তলা বিশিষ্ট ৭টি ভবন এবং গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগী পালনসহ কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ সংক্রান্ত ৩ তলা বিশিষ্ট ৭টি ভবন নির্মাণ। সৌর প্যানেল স্থাপন ও নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ আধার নির্মাণ। অগ্নি নির্বাপকের সুযোগ এবং পরিবেশ উন্নয়নে জলাধার নির্মাণ। বায়োগ্যস প্লান্ট নির্মাণ এবং এই প্ল্যান্ট হতে উৎকৃষ্টমানের জৈবসার উৎপাদন ও বিপনন।
সভায় পাস হওয়া অন্য প্রকল্পসমূহ হলো, ১০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্প্রসারিত কটন চাষ প্রকল্প। এর বাস্তবায়নকাল ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত।
এ প্রকল্প সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশের ১০ জেলার ৩৫ উপজেলায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এতে প্রতিবছর দেশে ৭ থেকে ১০ লাখ বেল কটন বেশি উৎপাদন হবে।
পাট ও বস্ত্র মন্ত্রনালয় সূত্র জানায়, প্রতিবছর ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ থেকে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন বেল কটন আমদানি করতে হয়।