বাংলাদেশি পর্যটক আকর্ষণ করতে হালাল খাবারের উদ্যোগ পশ্চিমবঙ্গের

বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে পশ্চিমবঙ্গ যাতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, তার পরিকল্পনা করছে সে রাজ্যের সরকার।

বিভিন্ন পর্যটন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে সরকার চিন্তাভাবনা করছে যে কীভাবে এক-দু রাতের বদলে বাংলাদেশি পর্যটকদের আরও বেশি সময় পশ্চিমবঙ্গে ধরে রাখা যায়।

এইসব ব্যবস্থার মধ্যে আছে সীমান্ত চেকপোস্টে উষ্ণ ব্যবহার, চিকিৎসা সংক্রান্ত হয়রানির অভিযোগ জমা নেওয়া, হালাল খাবারের দোকানগুলির তথ্য দেয়া, পর্যটক-সুবিধা বৃদ্ধি প্রভৃতি।

‘ইনবাউন্ড ট্যুর অপারেটার্স কাউন্সিল’ হিসাব দিচ্ছে যে প্রতিবছর প্রায় ৫ লক্ষ বাংলাদেশি পর্যটক আসেন পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু তাঁদের বেশিরভাগই এক বা দুই রাত কলকাতায় কাটিয়ে অন্যান্য রাজ্যে চলে যান। কেউ চলে যান দক্ষিণ ভারতে চিকিৎসা করাতে, কেউ আজমীর শরিফে, কেউ আবার কাশ্মীরে ঘুরতে।

কিন্তু কলকাতা, শান্তিনিকেতন, মুর্শিদাবাদ আর দার্জিলিং পাহাড় রাজ্যের এই জনপ্রিয় পর্যটনস্থলগুলিতে যাতে বাংলাদেশিরা আরও বেশি দিন সময় কাটান, তার ব্যবস্থা করা দরকার বলে মনে করছে পর্যটন সংস্থাগুলির সংগঠন ওই ‘কাউন্সিল’।

সংগঠনটির সভাপতি শুদ্ধব্রত দেব বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন, “সুন্দরবন বা দীঘা সমুদ্র সৈকত – এই দুটো জায়গায় আমরা বাংলাদেশিদের আকৃষ্ট করতে পারব না, কারণ অরণ্য আর সমুদ্র তাদের দেশেই আছে। আবার যারা জিয়ারত করতে আজমীর যান, সেটাও পশ্চিমবঙ্গে দেওয়া সম্ভব না। কিন্তু এখানেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দরগা-শরিফ আছে, যেগুলোর কথা আমরা বাংলাদেশিদের কাছে তুলে ধরতে পারি।যদি কোনও একটা বিশেষ দেশের মানুষকে আকৃষ্ট করতে চাই আমরা, তাহলে তাদের বিশেষ চাহিদার কথা মাথায় রেখেই আমাদের পর্যটন পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে, তথ্য ভান্ডার গড়তে হবে।”

পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব বলছিলেন, “লক্ষ লক্ষ মানুষ বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসেন। কেউ শিক্ষার জন্য, কেউ চিকিৎসার জন্য, কেউ আবার শুধুই বিনোদনমূলক ভ্রমণের জন্য আসেন। কিন্তু সেই সংখ্যাটা কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, আমরা সেটাই চিন্তা করছি। বিশ্বের মানুষের কাছে পশ্চিমবঙ্গকে যেভাবে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে তুলে ধরার যে ভিশন মমতা ব্যানার্জী নিয়েছেন, সেখানে বাংলাদেশ স্বাভাবিকভাবেই অগ্রাধিকারের জায়গায় আছে। সেই প্রচেষ্টার ফলশ্রুতিতেই আমরা ঢাকায় যাচ্ছি।”

মি. শুদ্ধব্রত দেব বলছেন, “পশ্চিমবঙ্গে ইতিমধ্যেই যে সব পর্যটনস্থল আছে, সেগুলোতেই বাংলাদেশি পর্যটকদের অন্তত দিন সাতেকের জন্য আকৃষ্ট করা যায়। কোন্ ধরণের স্বাচ্ছন্দ্য দিলে তারা থাকবেন পশ্চিমবঙ্গে সেটা বুঝতে হবে আমাদের। যেমন বহু বাংলাদেশি এসে হালাল খাবারের খোঁজ করেন, সেটা এখানে খুব বেশি পাওয়া যায় না। চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ জানানোর জন্য যদি পর্যটন দপ্তরই একটা বিশেষ বিভাগ খোলে, তাহলে বাংলাদেশিরা অন্তত জানবেন যে কোথাও একটা ভরসা করার জায়গা আছে। সীমান্তে যদি একটু উষ্ণ ব্যবহার করা যায়, স্বাগত জানানো যায়, তাহলেও বাইরে থেকে যারা আসছেন, তাদের ভাল লাগে। এগুলো করতে তো খুব বেশি খরচ হয় না, কিন্তু এই ছোটখাটো ব্যাপারগুলোর দিকেও নজর দেওয়া দরকার।”

পশ্চিমবঙ্গের পর্যটনকেন্দ্র আর অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা সম্বন্ধে বাংলাদেশের মানুষের কাছে তথ্য তুলে ধরতেই রাজ্য সরকারের পর্যটন দপ্তরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা যাচ্ছে এপ্রিল মাসে।

সেখানে ট্যুর অপারেটর্স এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ বা টোয়াবের আয়োজনে যে আন্তর্জাতিক পর্যটন-বাণিজ্য মেলা হচ্ছে, সেখানে এবারই প্রথমবার সংগঠিতভাবে হাজির থাকবে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি প্যাভিলিয়ন। সেদেশের পর্যটন সংস্থাগুলির সঙ্গেও বৈঠক করবে প্রতিনিধিদল।