বহাল থাকল সঞ্চয়পত্রে বর্ধিত করই

নিউজ ডেস্ক : সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে ১০ শতাংশ প্রস্তাব রেখেই অর্থবিল, ২০১৯ পাস হয়েছে। বর্ধিত এ কর আরোপের প্রস্তাব নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। এমনকি সংসদে এ নিয়ে বিরূপ সমালোচনা হয়। এরই প্রেক্ষাপটে সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটি প্রত্যাহার হয়নি।

বড় ধরনের কোনো সংশোধনী ছাড়াই অর্থবিল-২০১৯ পাস হয়েছে। শনিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। বাজেটের আইনিভিত্তি এই অর্থ বাজেট।

এর আগে প্রস্তাবিত অর্থবিলে কয়েকটি বিষয়ে সংশোধনী আনতে অর্থমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার বক্তব্যের পরে সংসদে সমাপনী বক্তব্য রাখেন অসুস্থ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় সংসদে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এরপর অর্থবিলের সংশোধনীর ওপর আলোচনা করেন সংসদ সদস্যরা। এরপর বিলটি পাসের জন্য সদস্যদের দেয়া হয়। সদস্যদের কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়। এ সময় সরকারি দলের সদস্যরা টেবিল চাপড়ে সমর্থন জানান এবং অর্থমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।

গত ১৩ জুন সংসদে বাজেট উপস্থাপনের পর থেকে যেসব বিষয়ে বেশি আলোচনা সমালোচনা হয়েছে সেগুলো হলো- বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে টিআইএন নম্বর বাধ্যতামূলক করা এবং সঞ্চয়পত্রের উৎসে করহার বৃদ্ধির প্রস্তাব। কিন্তু এ দুটি বিষয়ে কোনো সংশোধনী আনা হয়নি। প্রস্তাবিত বাজেটের প্রস্তাবই বহাল রাখা হয়েছে পাসকৃত অর্থবিলে।

নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) জন্য গত ১৩ জুন ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এরপর সংসদে ২৭০ জন সদস্য এর ওপর আলোচনায় অংশ নেন। আগামীকাল রোববার সংসদে বাজেট পাস হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর ১ জুলাই থেকে নতুন অর্থবছর শুরু হবে।

অর্থবিলের সংশোধনী সমূহ

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটের (অর্থবিলের) কয়েকটি বিষয়ে ব্যবসায়ী, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারী সাধারণ মানুষের দাবির প্রেক্ষিতে কিছু সংশোধনী আনার প্রস্তাব করছি। এরমধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানি যে পরিমাণ স্টক ডিভিডেন্ট প্রদান করবেন, একই পরিমাণ নগদ ডিভিত্রে স্টডেন্ট দেবেন। এক্ষেক ডিভিডেন্টের পরিমাণ নগদ ডিভিডেন্টের চেয়ে বেশি দেয়া হয় সেক্ষেত্রে সব স্টক ডিভিডেন্টের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর প্রদান করতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে এটি ১৫ শতাংশ করার হয়েছিল।

এছাড়া পুঁজিবাজারে কোনো কোম্পানির করবর্তী নিট লাভের ৭০ শতাংশ রিটেইন আর্নিংস, রিজার্ভসহ বিভিন্ন খাাতে স্থানান্তর করতে পারবেন। বাকি ৩০ শতাংশ স্টক, ডিভিডেন্ট ও নগদ লভাংশ দিতে হবে। এক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে প্রতিবছর রিটেইন আর্নিংস ও রিজার্ভসহ স্থানান্তর মোট অর্থের ওপর ১০ শতাংশ হারে কর দিতে হবে।

শেয়ারবাজারের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশের সীমা ২৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হোক।

স্থানীয় পর্যায়ে একাধিক মূসক হার প্রচলন করা হচ্ছে। তবে ১৫ শতাংশের নিম্নের হারগুলোতে উপকরণ কর রেয়াত নেয়ার সুযোগ না থাকায় ব্যবসায়ীরা হ্রাসকৃত হারের পরিবর্তে উপকরণ কর গ্রহণ করে ১৫ শতাংশ হারে কর প্রদানে সুযোগ সৃষ্টির জন্য দাবি করেছেন। হ্রাসকৃত হারের পাশাপাশি কেউ চাইলে যেন ১৫ শতাংশ ভ্যাট দিয়ে রেয়াত পদ্ধতিতে অংশগ্রহণ করতে পারে আইনে সে বিধান আনা হবে।

দেশীয় শিল্প রক্ষায় তাঁত শিল্পের ওপর ৫ শতাংশ মূসকের পরিবর্তে প্রতি কেজিতে ৪ টাকা হারে সুনির্দিষ্ট হারে মূসক আরোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেশীয় শিল্প রক্ষায় প্রস্তাবিত বাজেটে বেশকিছু শুল্ক হ্রাস-বৃদ্ধি করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে দেশের কাগজ ও গ্যাস উৎপাদনকারী শিল্প যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দেশীয় মুদ্রণ শিল্পে প্রণোদনা ও বন্ড ব্যবস্থার অপব্যবহার রোধ করতে দেশে উৎপাদন হয় না এমন পেপারগুলোর শুল্কহার যৌক্তিক করা হবে। প্রস্তাবিত বাজেটে আমদানিকৃত কতিপয় পণ্যের শুল্ক হার পূর্ণ নির্ধারণ করা হবে।