‘বর্তমান শিক্ষানীতি ইসলাম ও মুসলমান জাতিসত্ত্বা ধ্বংসের রণকৌশল’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর চরমোনাইর পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেছেন, দেশকে ১৯৪৭- এর পূর্বাবস্থায় নিয়ে যাওয়ার যড়যন্ত্র চলছে। আমরা আজ আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব নিয়ে শংকিত। আমাদের স্বাধীন জাতিসত্ত্বা আজ হুমকির মুখে। আমাদের ধর্ম-বিশ্বাস ও আমাদের স্বকীয় সংস্কৃতি ধ্বংস করার জন্য গভীর চক্রান্ত শুরু হয়েছে। জাতীয় শিক্ষনীতি ২০১০ ও শিক্ষা আইন ২০১৬ সেই ষড়যন্ত্রেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ পাশের প্রত্যেকটা পর্যায়ে আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছিলাম। সরকার আমাদের আপত্তি তোয়াক্কা না করে একতরফাভাবে জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুমোদন দিয়েছিল।

তিনি বলেন, আত্মমর্যাদাশীল একটি স্বাধীন দেশ হিসাবে বাংলাদেশের একটি জাতীয় শিক্ষানীতি অবশ্যই প্রয়োজন। সেই শিক্ষানীতি হতে হবে এ দেশের মানুষের নিজস্ব ঐতিহ্য, ধর্ম এবং সংস্কৃতির পটভূমিকে সামনে রেখে। কিন্তু অত্যন্ত আফসুসের সাথে বলতে হয়, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, বোধ-বিশ্বাস এবং চর্চিত ধর্ম ও সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। বিতর্কিত শিক্ষানীতি ২০১০ এবং প্রস্তাবিত শিক্ষাআইন ২০১৬-এর মতলব যে খারাপ, বর্তমান নতুন সিলেবাসই তার প্রমাণ। এই শিক্ষানীতি বাংলাদেশ ধ্বংসের শিক্ষানীতি। এই শিক্ষানীতি বাংলাদেশ থেকে ইসলাম ও মুসলমান জাতিসত্ত্বা ধ্বংসের রণকৌশল।

বিতর্কিত শিক্ষানীতি, শিক্ষাআইন এবং হিন্দুত্ববাদী ও নাস্তিক্যবাদী পাঠ্যসূচী বাতিলের দাবিতে জাতীয় মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনী বাদ দিয়ে পড়ানো হচ্ছে রাধা-কৃষ্ণের লীলা-খেলা। খোলাফায়ে রাশেদিনের জীবনী বাদ দিয়ে পড়ানো হচ্ছে কালী পুজা আর পাঠা বলীর কাহিনী। মুসলিম সন্তানদের পড়ানো হচ্ছে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়ন। হিন্দুদের দেবী দূর্গার ভক্তি শিখানো হচ্ছে মুসলমানদের সন্তানদের। গল্প-কবিতার মাধ্যমে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কুরআনের প্রতি বিদ্বেষ তৈরী করা হচ্ছে। গরু জবাই করার প্রতি বিরূপ ধারণা সৃষ্টি করে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী দর্শন। ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ১৯৪৭ এর ভারত বিভক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে হুমকির মূখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। আমাদের জাতীয় নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাষানী এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দর্শনকে অপমান করা হচ্ছে।

চরমোনাইর পীর বলেন, হিন্দু ধর্মের ছেলে মেয়েরা হিন্দু ধর্মীয় বিষয়াদী পড়বে, এতে কারো আপত্তি নেই। কিন্তু মুসলমান ছেলে মেয়েদের জন্য হিন্দু ধর্মীয় বিষয়াদী যেভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তা কোন বিবেকবান মানুষ মেনে নিতে পারে না। বিষয়টি অবশ্যই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও উস্কানীমূলক। এই উস্কানীমূলক জঘন্য কাজ যারা করেছে ক্ষমতাসীনরা তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নিলে শুধু সরকারকেই নয়, গোটা জাতিকে এর মাশুল দিতে হবে।

তিনি বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ অনুমোদন লাভের সাথে সাথেই আমাদের জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় সর্বনাশা পরিবর্তন চলে আসে। বিশেষ করে সকল শ্রেণির বাংলা সিলেবাস থেকে মুসলিম ও ইসলামী ভাবধারার সব বিষয় বাদ দেয়া হয়। আমাদের মহানবী হযরত মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনীও বাদ দেয়া হয়েছে। বাদ দেয়া হয়েছে ঐতিহাসিক বিদায় হজ্বের ভাষণ, খোলাফায়ে রাশেদার জীবনী এবং মুসলিম শাসকদের স্বর্ণালী ইতিহাস। বাদ দেয়া হয়েছে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের বীর পুরুষ শহীদ তিতুমীরের বিপ্লবী ইতিহাস। এমনিভাবে একে একে বাংলাদেশের অনেক মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের ইসলামী ভাবধারায় রচিত প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতা পাঠ্যবই থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে পাঠ্য বইতে নতুন করে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে হিন্দু ধর্ম সম্পর্কীয় বিভিন্ন বিষয়াদী। অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে এমন সব প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতা যা আমাদের স্বাধীতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। যা আমাদের মুসলিম সমাজ ও সভ্যতাকে চ্যালেঞ্জ করে।

সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, কারা তৈরী করেছে এই সিলেবাস? এই সর্বনাশা সিলেবাসতো আওয়ামীলীগেরও চেতনা বিরোধী। আওয়ামীলীগের মুসলমান ভাইয়েরা তাদের সন্তানদেরকে কিছুতেই হিন্দুয়ানী বা নাস্তিক্যবাদী শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবে বলে আমার বিশ্বাস হয় না। কারা জাতীয় শিক্ষার সিলেবাস থেকে ইসলাম এবং মুসলমানিত্ব বাদ দিয়ে হিন্দুত্ববাদ ও নাস্তিক্যবাদ অন্তর্ভূক্ত করেছে, তা খুঁজে বের করতে হবে। কারা আমার প্রিয় বাংলাদেশের মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের বাদ দিয়ে হিন্দু লেখকদের লেখা ব্যাপকহারে সিলেবাসে ঢুকিয়েছে তা আমাদেরকে জানতে হবে। কারা আমাদের ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি এবং সভ্যতাকে ধ্বংস করতে চায়, তাদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। যারা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে পৌত্তলিক এবং নাস্তিক বানাতে চায় তারা আমাদের অস্তিত্ত্বের শত্রু। তারা আমাদের স্বাধীনতার শত্রু। তারা এ জাতির ভয়ংকর দুশমন।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত শিক্ষাআইন বাস্তবায়ন হলে দেশ থেকে ইসলামী ধর্মীয় প্রকৃত শিক্ষা বিদায় দেয়া হবে। দেশের কওমী মাদরাসাগুলো হয়তো বন্ধ করে দেয়া হবে; নয়তো নিবন্ধনভূক্ত করে বিতর্কিত বিভিন্ন সিলেবাস পড়াতে বাধ্য করা হবে। প্রস্তাবিত শিক্ষাআইনে আলিয়া মাদরাসার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৫টি করে জেনারেল সাবজেক্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু কোন ইসলামী সাবজেক্ট বাধ্যতামূলক করা হয়নি। প্রস্তাবিত শিক্ষাআইন বাস্তবায়িত হলে দেশে কোন গার্লস স্কুল থাকবে না। ফলে ইসলামবিরোধী সহশিক্ষার আরও বিস্তার ঘটবে। ৪বছর বয়সে প্রাক-প্রাথমিক এবং ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হলে দেশে শিশুদের জন্য মক্তব এবং হিফজখানা বন্ধ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, প্রস্তাবিত শিক্ষাআইন দেশে যাতে কোন হাফেজ-আলেম না হতে পারে এর একটি কৌশলপত্র। এ আইনে ছেলে-মেয়ের মধ্যে ব্যাপকভাবে বেহায়াপনা ও যৌনাচার ছড়িয়ে পড়বে। স্কুল-কলেজগুলোতে বে-আদব ও উশৃঙ্খল সৃষ্টি হবে। কারণ, প্রস্তাবিত শিক্ষাআইনে ছাত্র-ছাত্রীদের শাসন করলে শিক্ষকের জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা অনিয়ম বা উশৃঙ্খলতা করলে কোন প্রতিকার নেই। শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ালে বা কোচিং করলে শাস্তির বিধান আছে। কিন্তু শিক্ষকদের উপযুক্ত কোন বেতন-ভাতার নিশ্চয়তা নেই। প্রস্তাবিত আইনে বারবার বাঙালী সংস্কৃতির সুরক্ষা ও বিস্তারের কথা বলা হলেও ধর্মীয় মূল্যবোধ ও বৃহত্তর জনগোষ্ঠির ধর্ম ইসলামী সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করা হয়েছে। মোট কথা আমাদের দৃষ্টিতে প্রস্তাবিত শিক্ষাআইন একটি অবাস্তব ও অসঙ্গতিপূর্ণ আইন। যা এদেশের মানুষের জন্য মোটেও উপযোগী নয়। তাই আমরা প্রস্তাবিত এ শিক্ষাআইন বাতিল চাই।

দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, একটি কথা অত্যন্ত পরিস্কারভাবে বুঝতে হবে, আমরা কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নই। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বে বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খৃষ্টান মিলেমিশে এদেশে আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি- এই গর্বিত সুনাম আমাদেরকে সুরক্ষা করতে হবে। এ দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বী ভাইদের প্রতি আমাদের কোন ক্ষোভ নেই। চলমান বিতর্কিত সিলেবাসের জন্য এ দেশের হিন্দু সম্প্রদায় দায়ী নয়। সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে এবং মুসলিম নামধারী কিছু মোনাফেকের কারণে এ দেশে সংখ্যালঘুরা বিপদগ্রস্ত হোক, আমরা তা কখনো চাই না।

বিতর্কিত শিক্ষানীতি, শিক্ষাআইন এবং হিন্দুত্ববাদী ও নাস্তিক্যবাদী পাঠ্যসূচী বাতিল না করলে সারাদেশ থেকে ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ এবং সকল বিভাগে বিভাগীয় মহাসমাবেশের মাধ্যমে দেশবাসীকে নাস্তিক্যবাদী পাঠ্যসূচির বাতিলের দাবির সাথে সম্পৃক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী রেজাউল করীম।

ইসলাম ধর্মবিরোধী পাঠ্যসুচী, শিক্ষাআইন ও শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে ইসলামী আন্দোলন ঘোষিত মাসব্যাপী কর্মসূচি পালনশেষে শুক্রবার (২৭ মে) বাদ জুমুআ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জাতীয় মহাসমাবেশে এ ঘোষণা দেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চরমোনাইর পীর এ ঘোষণা দেয়ার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন, ইশা ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম, ইসলামী মুক্তিযোদ্ধা পরিষদ ও ইসলামী আইনজীবি পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ, ওলামায়ে কেরাম, বুদ্ধিজীবি, শিক্ষাবিদ ও সাংবাদিকগণ।

মহাসমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, মাওলানা আবদুল আউয়াল ও মাওলানা আবদুল হক আজাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা নূরুল হুদা ফয়েজীসহ আরো অনেকে।

পাঠ্য সিলেবাসের মতো জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এবং প্রস্তাবিত শিক্ষাআইন-২০১৬ও বাতিল করতে হবে। এসব নীতি ও আইন জাতীকে আলোকিত করার পরিবর্তে গভীর অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাবে।

রেজাউল করীম বলেন, আজকের এই মহাসমাবেশ থেকে নতুন করে সর্বজন গ্রহণযোগ্য জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠনের দাবী জানাচ্ছি। যে শিক্ষা কমিশন হবে নাস্তিক মুক্ত। যে শিক্ষা কমিশন হবে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ও অনুভূতির প্রতি সহনশীল। যে কমিশন হবে আমাদের স্বধীনতা ও জাতীয় নেতাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সরকারের প্রতি আজকের এই মহাসমাবেশ থেকে আমাদের আহবান থাকবে, এখনই বাংলা পাঠ্য বইয়ের বিতর্কিত বিষয়গুলো পাঠদান বন্ধ রাখার নির্দেশ দিন। নতুন শিক্ষা বছরে মুসলমান ছেলে মেয়েদের জন্য তাদের ধর্ম-বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পাঠ্যবই সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করুন। নয়তো এ আন্দোলন গ্রামে গ্রামে, পাড়ায়-পাড়ায়, শহরে-বন্দরে এবং প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়বে।

চরমোনাইর পীর বলেন, দেশে এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন চলছে। শনিবার (২৮ মে) ৫ম ধাপে নির্বাচন হবে। এর আগে ৪দফা নির্বাচন কেমন হয়েছে, দেশের মানুষ অবাক বিস্ময়ে তা দেখেছে। ক্ষমতাসীন সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর একদলীয় একতরফা নির্বাচনের পর দেশে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা পুরোপুরি শেষ হয়ে গেলে যে সব আপদ-মসিবত মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে তা থেকে ক্ষমতাসীনরাও রেহাই পাবে না। আজকের মহাসমাবেশ থেকে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আমি আহ্বান জানাচ্ছি, চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের একটি ধাঁপে কমপক্ষে পরীক্ষামূলকভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখুন, জনগণ আপনাদের কতোটা ভালবাসে! এভাবে জনমতকে অপমান-অশ্রদ্ধা করবেন না। এর পরিণতি ভাল হবে না। জনগনকে বেশিদিন দাবিয়ে রাখা যাবে না। আমরা চাই দেশে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা হোক। জনগণের মৌলিক অধিকার সুরক্ষিত হোক। আমরা এদেশকে ভালবাসি। এখানে আমরা সবাই মিলেমিশে থাকতে চাই। আমরা এদেশের দুঃখী-দরিদ্র মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন চাই। আমরা সুষম উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে চলতে চাই। আমরা সুশিক্ষা, সুশাসন, ন্যায়বিচার এবং সকল নাগরিকের মৌলিক ও মানবিক অধিকারের নিশ্চয়তা চাই। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে আমরা লক্ষ্য করছি, দেশে এখন ন্যায়বিচার নাই। সুশাসন প্রতিষ্ঠার কোন প্রচেষ্টা নাই। নাগরিকদের মৌলিক ও মানবিক অধিকার এবং ভোটাধিকার পদদলিত করা হচ্ছে। সর্বশেষ সুশিক্ষা বিদায় দিয়ে জাতিকে চরম অন্ধকার ও বর্বরতার দিকে ঠেলে দেয়ার গভীর ষঢ়যন্ত্র চলছে। আমরা মনে করি, একমাত্র ইসলামই পারে এ জাতীকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ দেখাতে। ইসলাম ছাড়া এ মজলুম জাতির আর কোন অবলম্বন নাই। তাই আসুন, রাষ্ট্র এবং সমাজ জীবনের সর্বত্র ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্যে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। সর্বত্র ইসলামী আন্দোলনের দুর্গ গড়ে তুলি।

মহাসমাবেশে মুফতী সৈয়দ ফয়জুল করীম বলেন, দেশে আস্তিক ও নাস্তিকের লড়াই শুরু হয়েছে। ইসলাম বিনাশী শিক্ষাআইন, শিক্ষানীতি ও বিতর্কিত সিলেবাস বাতিলে দেশের ঈমানদার জনতা জীবন ও রক্ত দিতে প্রস্তুত আছে।

ড. ঈসা শাহেদী বলেন, ইসলাম মুসলমানদের ঈমানে আঘাত এসেছে। হিন্দুত্ববাদী ও নাস্তিক্যবাদী শিক্ষানীতি, শিক্ষা আইন ও হিন্দুত্ববাদী সিলেবাস বাতিলের এই আন্দোলন শুধু পীর সাহেবের নয়, সকল মুসলমানের। কাজেই সকলকে আন্দোলনে নামতে হবে।

শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে অধ্যক্ষ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, নাস্তিক্যবাদের পৃষ্ঠপোষক শিক্ষামন্ত্রী। তাকে পদত্যাগ করতে হবে। কোন নাস্তিক-মুরতাদের জানাজা এদেশে হবে না।

আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী বলেন, কালিদাস বৈদ্যের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্যই সরকার এই ধর্মবিনাশী শিক্ষা পাঠ্যসুচী করেছে। এটা বাতিল না হলে সারাদেশে আন্দোলনের দাবানল জ্বলে উঠবে।

অধ্যক্ষ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ বলেন, এই শিক্ষানীতি কোন দেশ প্রেমিক মুসলমান মেনে নিতে পারে না। সরকার এই জঘন্য শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে জাতীয় শিক্ষা আইন ২০১৬ পাশ করার উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা আজকের এই মহাসমাবেশ থেকে প্রস্তাবিত শিক্ষা আইন প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ জাতি বিধ্বংসী ষড়যন্ত্রের এই শিক্ষাআইন প্রত্যাখ্যান করবে।

মুফতী ওমর ফারুক বলেন, ইসলামের উপর আঘাত শুরু হয়েছে। এই আঘাত প্রতিহত করতে হবে।

সমাবেশের ভিডিও: