বন্দরে আটকা হাজার কোটি টাকার মালামাল

বন্দরে আটকা হাজার কোটি টাকার মালামাল

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: সাধারণ ছুটি চলাকালীন নিত্যপণ্য ও জরুরি চিকিৎসা সামগ্রীসহ আমদানি-রফতানি স্বাভাবিক রাখতে সীমিত আকারে কাস্টম হাউসগুলো খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু এই নির্দেশনার পরও বিএসটিআই, ডেঞ্জার গুড সাপ্লাই, কোয়ারেন্টাইন ও রেডিয়েশনসহ বাকি বিভাগগুলো বন্ধ থাকায় কাস্টম হাউস মূলত কার্যকারিতা হারিয়েছে। এ কারণে দেশের শীর্ষ শিল্পগ্রুপগুলোর হাজার কোটি টাকার মালামাল আটকা পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে।

বর্তমানে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার সম্মুখীন। এ পরিস্থিতিতে সুযোগ-সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়তা করা এবং আমদানিকৃত পণ্য সামগ্রী বন্দর থেকে দ্রুত ছাড়করণ, ওষুধ ও ভোগ্যপণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা নির্বিঘ্নে রাখা জরুরি একাধিক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কাস্টম হাউসগুলো খোলা রাখার নির্দেশ দিলেও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রায় সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। এ কারণে ব্যবসায়ীরা চাইলে কাস্টম থেকে আমাদানি পণ্য ছাড় করাতে পারছেন না। এর মধ্যে কোথাও কোথাও সীমিত আকারে অফিস খোলা রাখা হলেও অতিরিক্ত চার্জ দাবি করা হচ্ছে। এ কারণে দ্রুত পচনশীল দ্রব্য কনটেইনারেই পচে নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকক্ষেত্রে আমদানি করা অতি জরুরি চিকিৎসাপণ্যও খালাস করা যাচ্ছে না।

এক সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠান জানায়, তেল, চিনি, মিল্ক পাউডার, টুথপেস্টসহ আমদানিকৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড় করানোর জন্য দেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। কিন্তু ২৬ মার্চ সরকারি ছুটি শুরুর পর থেকে চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এ কারণে চাইলেও আমদানিকারকরা এই জনগুরুত্বপূর্ণ মালামালগুলো কাস্টম থেকে ছাড় করাতে পারছেন না।

এছাড়া একইভাবে প্রায় সময় বন্ধ থাকছে ডেঞ্জারাস কার্গো ইন্সপেকশন বিভাগের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নির্ধারিত অফিস, বিভিন্ন খাবার সামগ্রীসহ সংশ্লিষ্ট পণ্য অনুমোদন দেওয়ার দায়িত্বে থাকা রেডিয়েশন বিভাগ, ফলমূল জাতীয় পণ্য খালাসের দায়িত্বে থাকা কোয়ারেন্টাইন বিভাগ।

এদিকে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের ৪০ হাজার একক কনটেইনার জমা হয়ে গেছে। অথচ বন্দরের কনটেইনার (প্রতিটি ২০ ফুট দীর্ঘ) ধারণক্ষমতা ৪৫ হাজার একক। সূত্র বলছে, বন্দর থেকে প্রতিদিন মাত্র ৫০০ এককের বেশি পণ্য বের হচ্ছে না। এ পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী দু’দিনে ধারণক্ষমতা অতিক্রম করে যাবে বন্দরের পণ্যের স্তূপ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক বলেন, বহির্নোঙর ও জেটিতে হ্যান্ডলিং কার্যক্রম এখনো ঠিক রয়েছে। কিন্তু বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি অস্বাভাবিকভাবে কমেছে। এভাবে চলতে থাকলে বন্দরে কনটেইনার জট দেখা দেবে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্বাভাবিক অবস্থায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের ১৭টি শুল্কায়ন শাখা কাজ করে। কিন্তু সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে এখন খোলা আছে মাত্র ৭ থেকে ৮টি শাখা। এসব শাখার অধিকাংশগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন এআরও বা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা।

এর মধ্যে অফিস করছেন ১ নম্বর সেকশন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, ৭ নম্বর (এ) সেকশন একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা, ৯ নম্বর (সি) সেকশনে একজন, ৯ নম্বর (সি) সেকশনে একজন এবং ৯ নম্বর (বি) সেকশনে একজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আরও বা রাজস্ব কর্মকর্তা বা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্বাক্ষর ছাড়া অনেক মালামাল ছাড় করানো সম্ভব হয় না।