প্রশ্নবিদ্ধ অনলাইন পশুর হাট: অনলাইন প্রতারণায় নিঃস্ব বহু মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতারকরা এখন অনলাইনে এখন বেশি সক্রিয়। পুরোনো দিনের প্রতারণার কৌশলও ফিরে এসেছে। এমন পরিস্থিতিতে কুরবানীর পশু অনলাইনে বিক্রির বিতর্কিত পদ্ধতিটি আরও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে কিছু অনলাইন প্রতারক ধরা পড়লেও অধিকাংশ থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আর এসব প্রতারকের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, লকডাউন পরিস্থিতি শুরুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে অসংখ্য অনলাইন শপিং পেজ, গ্রুপ ও সাইট খুলে বসেছে একাধিক প্রতারক চক্র। এসব চক্র নানা রকমের আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে মানুষকে আকৃষ্ট করছে। এর মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, লকডাউনের সুরক্ষাসামগ্রী, বিভিন্ন পেজ-লিঙ্কে ক্লিক করে অর্থ উপার্জন, বিদেশি বন্ধু সেজে উপহার পাঠানো, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি সেজে নিয়োগের নামে অর্থ আত্মসাত্সহ নানাভাবে প্রতারণা শুরু করেছে।

গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যমতে, এই চক্র ১০০ জনকে টার্গেট করলে ১০ জনের ক্ষেত্রে সফল হয়। সম্প্রতি এদের প্রতারণার শিকার হয়েছেন ব্যবসায়ী, প্রবাসী থেকে শুরু করে বিকাশ এজেন্টরা। কৌশলে বিকাশ এজেন্টের সর্বস্ব লুটে নিয়েছে এ প্রতারক চক্র।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা বলছেন, লকডাউনের কারণে অনেক মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এখন চাকরি দেওয়ার নামেই বেশি প্রতারণা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। সর্বশেষ গত ২২ জুন র্যাব ২০ জন প্রতারককে গ্রেফতার করেছে। এরা রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএসে অফিস খুলে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে আসছিল।

বিপদের এই সময়ে চাকরি পেতে অনেকেই তাদের কাছে আবেদন করে। এই সুযোগে আবেদন ফি আর প্রশিক্ষণের নামে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।

র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরানউল্লাহ সরকার বলেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি এক ব্যক্তির নামে একই সময়ে ঢাকা উভয় সিটি করপোরেশন থেকে গাজী ইন্টারন্যাশনাল লি. ও ভিশন বিজনেস সেন্টার নামে দুইটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে মহাখালীর ডিওএইচএস এলাকায় দুইটি অফিস খোলে।

এই প্রতারক চক্র দুইটি কোম্পানিতে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগের জন্য ফেসবুক, অনলাইন ও লিফলেটের মাধ্যমে ভুয়া বিজ্ঞাপন প্রচার করে। এরপর চাকরি-প্রত্যাশীদের কাছ থেকে আবেদন ফি বাবদ ১ হাজার টাকা ও প্রশিক্ষণ বাবদ ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা করে নেয়। কোম্পানির ইউনিট ম্যানেজার, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার এমন সব পদে ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণ-তরুণীদের উদ্বুদ্ধ করে। চাকরি পাওয়ার পর মাস পার হলেও বেতন না পেয়ে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে অনেকে টাকা ফেরত চাইলে তাদেরকে নানাভাবে ভয়-ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়াসহ মারধরও করেছে।

লকডাউনের এই পরিস্থিতির মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করা সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি প্রতারক চক্র। গত মাসে এমন একটি চক্রের ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার প্রায় ১৫ লাখ টাকাও উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম বলেছেন, এখন লকডাউন পরিস্থিতিতে অনেকেই অনলাইনে টাকা লেনদেন করেছেন। আর সেই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। এ চক্রের এক জন মাস্টার মাইন্ড। সে-ই পুরো চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করে। পুরো চক্রের ৩০-৪০ জন সদস্য। মাস্টার মাইন্ডের অধীনে পাঁচটি বিভিন্ন গ্রুপ কাজ করে। এরা বিকাশ-নগদসহ মোবাইলে টাকা লেনদেনের ক্ষেত্রে প্রতারণা করে। এমনকি এই চক্রটি ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ডও জালিয়াতি করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

এছাড়া বছর জুড়ে তো হ্যালো পার্টির প্রতারণা আছেই। এই হ্যালো পার্টি এখন নতুন কৌশল নিয়ে প্রতারণা করছে। সুন্দর উচ্চারণে বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করে ফোন করে। তাদের প্রতারণার শিকার শুধু গ্রাহকরাই নয়, বিকাশ এজেন্টরাও প্রতারিত হচ্ছেন।
এদিকে ১৯ জুন অনলাইন এসডি টিভিতে নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে বিকাশের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাত্ ও প্রতারণার অভিযোগে বরিশাল থেকে কথিত শিল্পপতি মাসুদ আলম নামে এক প্রতারককে গ্রেফতার করেছে র্যাব। এ ছাড়া গত ৫ ও ৬ জুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ফেসবুক ও ইমোতে কিছু ভুয়া অ্যাকাউন্ট খুলে প্রবাসীদের টার্গেট করে ফাঁদপাতা চক্রের ছয় জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।