প্রথমবারের মতো দেশে হচ্ছে পানি গবেষণাগার

প্রথমবারের মতো দেশে হচ্ছে পানি গবেষণাগার

নিজস্ব প্রতিবেদক: পানি বিজ্ঞান সম্পর্কিত শিক্ষা, জ্ঞান, পরামর্শ ও নির্দেশিকার মাধ্যমে পানি ও পানি বিজ্ঞান সংক্রান্ত গবেষণার সুবিশাল পরিসর সৃষ্টি করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে হতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের পানি গবেষণাগার। যেখানে দেশীয় শিক্ষার্থীর পাশাপাশি বিদেশিরাও শিক্ষার সুযোগ পাবেন দেশের সর্ববৃহৎ এবং একমাত্র হাইড্রোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে।

পানি গবেষণাগারের মাধ্যমে হাইড্রোলজিক্যাল শিক্ষা, বাঁধ সংক্রান্ত শিক্ষা, ভেজিটেশন, জীববৈচিত্র্য, অ্যাকুয়াকালচার ইত্যাদি সমন্বয় করার মাধ্যমে জ্ঞানের চর্চা করা হবে বলে জানায় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)।

সরকারি-বেসরকারি, প্রাইভেট থেকে শুরু করে সবাই এখানে গবেষণার সুযোগ পাবে। গবেষণাগার এমনভাবে নির্মাণ করা হবে যেন ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশের শিক্ষার্থীরা এখানে গবেষণার সুযোগ পান।

বাপাউবো’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) এএম আমিনুল হক বলেন, ১০০ বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনা সফল করাসহ পানি ব্যবস্থাপনার জন্য দেশে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক মানের পানি গবেষণাগার নির্মাণ করা হবে। নিয়মনীতি অনুযায়ী এখানে বাংলাদেশের সবাই পানি গবেষণার সুযোগ পাবে। আমরা প্রতিষ্ঠানটি এমনভাবে নির্মাণ করবো যেন বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর সবাই এখানে গবেষণার জন্য আসেন।

বাপাউবো সূত্র জানায়, ৬৭৭ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘আন্তর্জাতিক পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট নির্মাণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে এ উদ্যোগ নেওয়া হবে। প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বাধিক উন্নয়নের জন্য বৈজ্ঞানিক তৎপরতা চালাতে রাজধানীর খিলক্ষেতে এটা নির্মাণ করা হবে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য উন্নতমানের ও অত্যাধুনিক প্রশিক্ষু এবং গবেষণার ব্যবস্থা করা হবে। পানি সেচ ব্যবস্থা, ভূমি পুনরুদ্ধার ও ভূমি উন্নয়নের ফলিত শিক্ষা লাভের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। এর মাধ্যমে নদী ভাঙন ও তীর প্রতিরক্ষা কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষণার দ্বার উন্মোচিত হবে। প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাইড্রোলজিক, ড্রেজিং টেকনলজি ও টাইডাল ফ্লুম গবেষণাগার থাকবে।

হাইড্রোলজিকের মাধ্যমে বিভিন্ন ডিপ্লোমা এবং হায়ার ডিপ্লোমা কোর্সের মাধ্যমে পড়ানো হবে পানিসম্পদ উন্নয়ন এবং পরিকল্পনা বিষয়ক শিক্ষা। পানিবায়ু পরিবর্তন, পরিবেশগত পরিবেশ বিদ্যা এবং ভূতত্ত্ব বিভাগ বিষয়ক শিক্ষা, উপকূলীয় সেডিমেন্টেশন এবং নদী সংস্থান বিদ্যা বিষয়ক শিক্ষা দেওয়া হবে। ড্রেজিং টেকনোলজি ইনস্টিটিউট এবং টাইডাল ফ্লুম অর্থাৎ টার্বুলেন্স সিমুলেশন ওয়েভপুলের মাধ্যমে এরোশন এবং ইনোভেশন সিমুলেশন ল্যাব, টাইডাল এবং মনসন স্টাডি এরিয়া ল্যাব চালানো হবে। এর মাধ্যমে যেন ১০০ বছরের বদ্বীপ পরিকল্পনা সফল করতে পারে সরকার।

ড্রেজিং টেকনোলজি ইনস্টিটিউটে মেক্যানিক্যাল এবং ড্রেজিং বিষয়ে পড়ানো হবে। শুধু তাই নয় আন্তর্জাতিক পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট বায়োডাইভারসিটি এরিয়া ল্যাব, স্যালাইনিটি এবং সিল্টেশন সিমুলেশন এরিয়া ল্যাব, ডেভলপমেন্ট স্কিম মডেল স্টাডি এরিয়া ল্যাব, ওয়াটার কোয়ালিটি মনিটরিং ল্যাব ইত্যাদি বাস্তবায়ন করা হবে যেন পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ একটি উন্নত প্রযুক্তি সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে পারে।

প্রকল্পের আওতায় ১৬টি ভবন নির্মাণ করা হবে। এগুলোর মোট আয়তন হবে ৬৪ হাজার ১৩ বর্গমিটার। এর মধ্যে ১০টি দুই তলা, একটি তিন তলা, দুইটি নয় তলা, একটি ১২ তলা এবং দুইটি এক তলা। প্রকল্পের আওতায় ১৩টি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হবে। এগুলোর মোট আয়তন হবে ৬১ হাজার ৭৭৯ বর্গমিটার। এর মধ্যে একটি তিন তলা, দুইটি চারতলা, তিনটি ছয় তলা, একটি ১০ তলা, দুইটি ১২ তলা, তিনটি ১৫ তলা এবং একটি এ টাইপ ভবন। ৭ হাজার বর্গমিটারের একটি টার্বুলেন্স সিমুলেশন ওয়েভ পুলও নির্মাণ করা হবে। ১৭টি বৈদ্যুতিক স্থাপনাসহ দুইটি সেতুও থাকবে প্রকল্প এলাকায়। একটি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি) ও একটি তরল বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি) নির্মাণ করা হবে। পানি গবেষণাগার বিশ্বমানের করতে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জায় ব্যয় করা হবে ৩ কোটি টাকা।