পৌঁছায়নি ত্রাণ, ৫০ হাজার পানিবন্দি মানুষ অনাহারে

নিউজ ডেস্ক : কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাট বাইপাস ও বুড়িমারী-লালমনিরহাট মহাসড়কের হাতীবান্ধা রেলগেট এবং কারবালাদিঘি এলাকায় তিস্তার পানি ছুঁই ছুঁই।

এদিকে বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। সেই সঙ্গে পানিবন্দি মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। অনাহারে রয়েছেন পানিবন্দি অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। তাদের মাঝে এখনো ত্রাণসহায়তা পৌঁছায়নি।

দুর্গত এলাকায় সরকারি রাস্তা এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে আশ্রয় নেয়া বানভাসি লোকজন খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানীয় জলের চরম সঙ্কটে রয়েছে। রান্না করতে না পারায় শুকনো খাবার খেয়ে দিন পার করছেন কেউ কেউ। অনেকে আবার শুকনো খাবার সংগ্রহ করতে না পারায় থাকছেন অনাহার-অর্ধাহারে।

পাশাপাশি হাতীবান্ধা উপজেলার সঙ্গে গড্ডিমারী, বড়খাতার একমাত্র পাকা সড়কটি পানির তোড়ে ভেঙে দুদিন ধরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। রোববার তিস্তার পানি কিছুটা কমে গেলে বেড়ে যায় মানুষের ভোগান্তি। ঘরবাড়িতে পানি ওঠায় স্থানীয় উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন বন্যার্তরা।

বিকেলে তিস্তার পানি দোয়ানি পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি কুলাঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছে পাউবো।

দুপুরে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় সানিয়াজান নদীতে উজান থেকে বন্যার পানি থেকে ভেসে আসা অজ্ঞাত এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে হাতীবান্ধা থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।

তবে সামগ্রিকভাবে জেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। অনাহারে রয়েছে পানিবন্দি অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। তাদের মাঝে এখনো ত্রাণসহায়তা পৌঁছায়নি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, বানভাসি মানুষের জন্য বরাদ্দ রয়েছে মাত্র দেড়শ টন চাল, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। ফলে কেউ কেউ ত্রাণ পাচ্ছেন আবার অনেকেই পাচ্ছেন না।

গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে তিস্তা ও ধরলার স্রোতে ভেঙে গেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তিনটি বাঁধ ও পাকা সড়ক। বাঁধ ভেঙে আরও আটটি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে ৩৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তিস্তা ও ধরলার স্রোতে গত কয়েক দিনে অর্ধশতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে।

বাসভাসিদের অভিযোগ, ছয়দিন ধরে পানিবন্দি থাকলেও তারা কোনো ত্রাণ পাননি। তেমন কোনো সাহায্য-সহযোগিতা তাদের কেউ করেনি। ফলে অনাহার ও অর্ধাহারে কাটছে তাদের দিন। সরকারিভাবে যে ত্রাণ ও শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই নগণ্য।

অন্যদিকে ছয়দিন ধরে পানিবন্দি থাকা পরিবারগুলোর মাঝে ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে নানা পানিবাহিত রোগ। বন্যাদুর্গত এলাকায় মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে জানান জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল কাশেম।

ত্রাণ সংকটের কথা অস্বীকার করে লালমনিরহাটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আহসান হাবিব বলেন, সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত ১৫০ টন চাল এবং এক লাখ ৫০ হাজার টাকা বিতরণের কাজ চলছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এসব ত্রাণ বিতরণ করবেন।