পাহাড়কে মাদকের রাজ্যে পরিণত করছে উপজাতি সন্ত্রাসীরা

পাহাড়কে মাদকের রাজ্যে পরিণত করছে উপজাতি সন্ত্রাসীরা

খাগড়াছড়ি সংবাদদাতা: চাঁদাবাজির পাশাপাশি উপজাতি সন্ত্রাসীরা খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে চাষ করছে নিষিদ্ধ মাদক গাজা। মূলত লোকচক্ষুর অন্তরাল করতেই গাজা চাষের জন্য দুর্গম পাহাড়ি এলাকাকে বেছে নেওয়া হচ্ছে। দুর্গম পাহাড়ে লোকচক্ষুর অন্তরালে রীতিমত গাজার সাম্রাজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। উপজাতি সন্ত্রাসীরা এক্ষেত্রে সাধারণ পাহাড়িদের দিয়েও গাজার চাষ করাচ্ছে। আর মাদক বিক্রির অর্থে কেনা হচ্ছে মরণাস্ত্র। পাহাড়ে নিয়োজিত গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এ সব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ২২ ডিসেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার মহালছড়ি উপজেলার প্রত্যন্ত কলাবুনিয়া এলাকায় সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়ে ৭ বিঘা জমির গাজার ক্ষেত ধ্বংস করে দিয়েছে। যার বাজার মুল্য আনুমানিক প্রায় ৪ কোটি টাকা।

নিরাপত্তাবাহিনীর মহালছড়ির বিজিতলা সাব জোন কমান্ডার মেজর আসিফ ইকবাল জানান, প্রত্যন্ত ঐ এলাকায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের অবস্থানের খবর পেয়ে তল্লাসীকালে বিশাল এ গাজার ক্ষেতটির সন্ধান পায় সেনাবাহিনী। তার মতে, পাহাড়ের উপজাতি সন্ত্রাসীদের দল ইউপিডিএফ (প্রসীত) গ্রুপ তাদের সংগঠনের অর্থের যোগান দিতে দুই পাহাড়ের মাঝে উর্বর জমিতে ঘেরা দিয়ে সুকৌশলে এবং বিশেষ নিরাপত্তায় এ গাজার চাষ করা হচ্ছিল।

পুলিশ ও গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে গাজার গাছগুলো উপড়িয়ে স্তুপ করে আগুন জ্বালিয়ে ধ্বংস করা হয়।

এদিকে এ ৭ বিঘা গাজার ক্ষেত ধ্বংসের ১০ দিন না যেতেই ২ জানুয়ারী খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার কালা পাহাড় পেরিয়ে দুর্গম দুইল্যতলী গ্রামে মিললো গাজার অভয়ারণ্য। এক বিঘা বা দুই বিঘা নয়, ২০০ বিঘা পাহাড়ি জমিতে গাজার চাষ করা হয়েছে। দুর্গম এলাকা হলেও সেনাবাহিনীর অভিযানের ফলে সন্ধান মেলে এসব গাজা ক্ষেতের।

ঐদিন দুপুরে মেজর আসিফ ইকবালের নেতৃত্বে মহালছড়ি জোনের আওতাধীন দুইল্যাছড়া পাড়ায় প্রায় শত কোটি টাকা মূল্যের ২০০ বিঘা জমির গাজা ক্ষেত শনাক্ত করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে নিরাপত্তা বাহিনী। এ সময় গাজা চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে আটক করা যায়নি। নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতিতে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে অবৈধ গাজা চাষিরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে উপজাতি সন্ত্রাসীরা খাগড়াছড়ির দুর্গম পাহাড়ে গাজার চাষ করছিলো। গাজা চাষের জন্য দুর্গম পাহাড়ি এলাকাকে বেছে নেয়া হয়েছে। মাটিরাঙার ৬ নং ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড মেম্বার জানায়, এলাকায় প্রায় ৫০টি পরিবার বসবাস করে। আগে জানতাম না, এখানে গাজা চাষ হয়। বাস্তবে এসে দেখলাম, এটা যেন গাজার রাজ্য।

মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মহিউদ্দিন আহম্মদ বলেন, দুর্গম পাহাড়ে নজরদারি রাখা খুবই কঠিন। এজন্য সবার অন্তরালে গ্রামের লোকজন গাজার আবাদ করেছে। এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে আটক করা যায়নি। তবে গাজা চাষের সঙ্গে জড়িতদের আটকের চেষ্টা চলছে।

খাগড়াছড়ি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এটি গাজা চাষের মৌসুম। দুর্গম হওয়ায় আঞ্চলিক সন্ত্রাসী বাহিনী গাজার আবাদ করেছে। গ্রামের বাসিন্দারাও গাজা চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেনাবাহিনী মহালছড়ি জোনের নেতৃত্বে বিশাল বিশাল গাজা ক্ষেতের সন্ধান পাওয়া যায়। পরে এসব ক্ষেতের গাজা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।

তার মতে, এখানে সন্ধান পাওয়া গাজার ওজন প্রায় ৪০ মে. টন ও বাজার মূল্য শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। একটি উপজাতি সন্ত্রাসী দল তাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে এলাকাবাসীকে দিয়ে এ মাদক চাষ করাচ্ছে।

গোয়েন্দা তথ্য ও স্থানীয়দের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে মাটিরাঙ্গা সেনা জোনের তৈকাতাং সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার লেফটেন্যান্ট নাসিফ হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত এক অভিযানে এ গাজা ক্ষেতের সন্ধান পায়। পরে এসব গাজা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদের যুগ্ন আহবায়ক আলমগীর বলেন,পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি ব্যবস্থাপনার জটিলতাকে ব্যবহার করে আঞ্চলিক কায়েমী স্বার্থবাদী শক্তিগুলো পাহাড়ের জমির উপর তাদের আথিপত্য নিরস্কুশ করার পায়তারা করছে। তারা এ জমির দখলদারিত্ব বজায় রেখে সেখানে পপি ও গাজার মত মাদক চাষ করতে চায়।

এ মাদক উৎপাদন করে তারা স্থানীয়ভাবে বাজারজাত করে মানুষকে নেশাসক্ত করতে চায়। কেননা নেশাগ্রস্ত মানুষের মগজ ধোলাই করে তাকে অপরাধী কর্মকান্ডে সহজে সম্পৃত্ত করা যায়।

তিনি বলেন, স্থানীয় আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠগুলো উৎপাদিত মাদক বিক্রি করা অর্থ ব্যায় হয় তাদের সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা,অস্ত্র ক্রয় ও তাদের বেতন-ভাতাসহ অন্যানৗ প্রশাসনিক কর্মে। এ সব অস্ত্র ও লোকবল সরকার ও দেশের অখন্ডতা বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। নিরাপত্তা বাহিনীর মাকদ বিরোধী অভিযানের কারনে পাহাড়ে স্বস্তি ফিরে এসেছে।