পাশাপাশি চড়ুই-শালিক

সকালে ঘুম ভাঙতে আর অ্যালার্ম লাগে না। প্রতিবেশীদের ঝগড়া-বিবাদেই সে কাজ হয়ে যায়। গলা সপ্তমে চড়িয়ে চিত্কার-চেঁচামেচি, ধাওয়া, নালিশ রীতিমতো এক কুরুক্ষেত্র। কাঁহাতক সহ্য করা যায়। অগত্যা ছুটে যাই থামাতে। বলছিলাম আমার প্রতিবেশীদের কথা। বারান্দায় পুরোনো প্রতিবেশী চড়ুইদের পাশে বসবাসের সুযোগ দিয়েছিলাম এক শালিক দম্পতিকে। চড়ুইরা আছে বছর সাতেক। গ্রিলের ওপর ভেতরের দিকে পাটাতনের মতো একটা অংশ। এ ফোর সাইজ কাগজের কার্টন এনে নিরাপদ আবাসনের বন্দোবস্ত করেছিলাম চড়ুইদের জন্য। পাশাপাশি পর্যবেক্ষণ করতে চেয়েছি কবুতরের মতো চড়ুইরা খোপে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে কি না? দেখলাম, তিনটি পরিবারের জন্য ঘর তৈরি করে দিলেও সংসার পাতে কেবল একটি দম্পতি। অন্য দুটো খোপে কেবল রাতটুকু কাটানোর সুযোগ পায় দুটো পরিবার। ঘরকন্না, বংশবৃদ্ধির সুযোগ নেই। এ নিয়ে চড়ুইদের মাঝেও ঝগড়া-বিবাদ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া কম হয়নি।
এরপর এল শালিক। সাতসকালে ঝুঁটিশালিকেরা জোরপূর্বক উচ্ছেদ করতে চায় চড়ুইদের। খোপের ভেতর ঢুকে ওদের এত দিনের ঘরদোর থেকে তাড়িয়ে দেয় আরকি। শালিকের তুলনায় অনেক ছোট চড়ুইদের বিপন্ন অবস্থায়, আর্তচিৎকারে স্থির থাকতে পারি না। তার ওপর আমার এত বছরের আশ্রিত প্রতিবেশীদের তাড়িয়ে ওদের আবাসস্থল গ্রাস করবে, সেটাও আমাকে কষ্ট দেয়।
সকালে অফিস যাওয়ার প্রস্তুতির ফাঁকে ফাঁকে হাত ছুড়ে, তোয়ালে নাড়িয়ে শালিকদের শাসনের চেষ্টা করেছি কদিন। কিন্তু ওদের হামলা চলতেই থাকল। তাও এক জোড়া নয়, একেক সময় দু-তিন জোড়া শালিক আসছে বারান্দার খোপগুলোর দখল নিতে। ছুটির দিনে দেখি, সকাল নেই, দুপুর নেই, চড়ুইদের বাসায় দফায় দফায় হামলা ঝুঁটিশালিকদের। ওদের তাড়াতে তাড়াতে কেমন যেন মনটা নরম হয়ে গেল। আসলে শালিকগুলো তো একটুখানি আশ্রয় চায়, ঘর বাঁধার জন্য।
ইট-কাঠের এ শহরে শালিকদের বাসা বাঁধার জায়গা কোথায়? তার ওপর বারান্দার চড়ুইদের বাসা কে দখলে নেবে, এ নিয়ে বিবাদে লিপ্ত হতে দেখেছি একাধিক শালিক দম্পতিকে। সামনের বিদ্যুতের তার-খুঁটিতে অবস্থান নিয়ে চলে তাদের দ্বন্দ্ব-সংঘাত।
আর চুপ থাকতে পারলাম না। শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলাম একপর্যায়ে। মুখোমুখি বক্স দুটোর একটির মুখ ঘুরিয়ে দিলাম উল্টো দিকে। যেহেতু ওখানে কেবল রাত কাটায় একটা চড়ুই পরিবার, ওটাই বরাদ্দ দিলাম শালিকদের। যাতায়াতের সুবিধার জন্য সামনে একটু ফাঁকা জায়গাও রাখা হলো। বক্স ঘুরিয়ে দিতে দেরি, কিন্তু ওটির দখল নিয়ে তাতে ঘরকন্না পাততে দেরি করেনি শালিকেরা। এক ফুট ব্যবধানে মুখ ঘুরিয়ে রাখা সামনের বক্সে তৃপ্তির গান গাইতে গাইতে শালিকদের আগমন-নির্গমনে আশ্বস্ত হলাম, আমার বন্দোবস্তে ওদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়েছে। চড়ুইদের পাশে ওরা মোটামুটি আনন্দেই বসবাস করছে।