পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররম শরীফ উনার বিশেষ কিছু আমলের ফযীলত

পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনার উল্লেখযোগ্য ও শ্রেষ্ঠতম দিন হচ্ছে ১০ই মুহররমুল হারাম শরীফ পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন। এই মুবারক দিনটি বিশ্বব্যাপী এক আলোচিত দিন। কেননা সৃষ্টির সূচনা হয় এ দিনে এবং সৃষ্টির সমাপ্তিও ঘটবে এই দিনে। বিশেষ বিশেষ সৃষ্টি এই দিনেই করা হয় এবং বিশেষ বিশেষ ঘটনা ও এই দিনেই সংঘটিত হয়।
বর্ণিত রয়েছে- আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার থেকে শুরু করে সাইয়্যিদুনা হযরত আদম ছফিউল্লাহ আলাইহিস সালাম পর্যন্ত প্রায় সকল হযরত নবী-রসূল আলাইহিমুস সালাম উনাদের কোনো না কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা এই দিনে সংঘটিত হয়েছে। যার কারণেই এই  দিনটি আমাদের সবার জন্য এক সুমহান দিন, রহমত, বরকত, সাকীনা, মাগফিরাত হাছিল করার দিন। ফলে এই সুমহান দিনে বেশ কিছু আমল করার ব্যাপারে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন- পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ উপলক্ষে দু’দিন রোযা রাখা।
রোযা রাখার ফযীলত:
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
عن حضرت ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول صلى الله عليه و سلم افصل الصيام بعد رمضان شهر الله المحرم.
অর্থ: হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র রমযান শরীফ উনার রোযার পর উত্তম রোযা হলো মহান  খালিক্ব মালিক রব মহান আল্লাহ পাক উনার মাস পবিত্র মুহররমুল হারাম শরীফ মাস উনার রোযা। (মুসলিম শরীফ)
عن حضرت ابى قتادة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صيام يوم عاشوراء احتسب على الله ان يكفر السنة التى قبله.
অর্থ: হযরত আবূ কাতাদাহ রদ্বিয়াল্লাহ তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র আশূরা শরীফ উনার রোযা বিগত এক বছরের গুনাহখাতা ক্ষমা করে দেয়। (মুসলিম শরীফ)
عن حضرت ابن عباس رضى الله تعالى عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم صوموا التاسع والعاشر وخالفوا فيه اليهود.
অর্থ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা ৯ ও ১০ই মুহররমুল হারাম রোযা রেখে ইহুদীদের বিরোধিতা করো। (পবিত্র তিরমিযী শরীফ)
রোযাদারকে ইফতার করানোর ফযীলত:
পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ উপলক্ষে রোযাদার ব্যক্তিকে ইফতার করানোর ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত হয়েছে-
من فطر مؤمنا ليلة عاشوراء من المحرم فكانما افطر عنده جميع امة سيدنا حبيبنا صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ উনার দিন যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাবে, সে যেন সমস্ত উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদেরকেই ইফতার করালো। সুবহানাল্লাহ!
পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়ানোর ফযীলত:
পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়ানোর ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
عن حضرت عبد الله بن مسعود رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال من وسع على عياله فى النفقة يوم عاشوراء وسع الله عليه سائر سنته
অর্থ: “যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন পরিবারবর্গকে ভালো খাওয়াবে পরাবে মহান আল্লাহ পাক তিনি সারা বৎসর তাকে সচ্ছলতা দান করবেন।” সুবহানাল্লাহ! (তিরবানী শরীফ)
গরিবদের পানাহার করানো ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানো:
পবিত্র আশূরা শরীফ উনার মধ্যে গরিবদের পানাহার করানো ও ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলানোর ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
من مسح فيه على رأس يتيم واطعم جائعا وسقى شربة من ماء اطعم الله تعالى من موائد الجنة وسقاه الله تعالى من الرحيق السلسبيل.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ উনার দিন কোনো মুসলমান যদি কোনো ইয়াতীমের মাথায় হাত স্পর্শ করে এবং কোনো ক্ষুধার্তকে খাদ্য খাওয়ায় এবং কোনো পিপাসার্তকে পানি পান করায় তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে জান্নাতের দস্তরখানায় খাদ্য খাওয়াবেন এবং সালসাবীল ঝর্ণা থেকে পানীয় তথা শরবত পান করাবেন। সুবহানাল্লাহ!
চোখে (ইছমিদ) সুরমা দেয়ার ফযীলত:
পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ উনার দিন চোখে (ইছমিদ) সুরমা দেয়ার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
من اكتحل يوم عاشوراء بكحل فيه مسك لم يشك عينه الى قبيل من ذلك اليوم.
অর্থ: নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন মেশক মিশ্রিত সুরমা চোখে দিবে সেদিন থেকে পরবর্তী এক বৎসর ওই ব্যক্তির চোখে কোনো প্রকার রোগ হবে না। সুবহানাল্লাহ! (শুয়াবুল ঈমান)
গোসল করার ফযীলত:
পবিত্র আশূরা শরীফ উনার দিন গোসল করার ফযীলত সম্পর্কে পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-
من اغتسل فيه عفى ولم يمرض الا مرض الموت وامن من الكسل والتعليل
অর্থ: আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, “যে ব্যক্তি পবিত্র আশূরা মিনাল মুহররমুল হারাম শরীফ উনার দিন গোসল করবে মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি ওই ব্যক্তিকে রোগ থেকে মুক্তি দান করবেন। মৃত্যু ব্যতীত ওই ব্যক্তির কোনো কঠিন রোগ হবে না এবং ওই ব্যক্তি অলসতা ও দুঃখ কষ্ট হতে নিরাপদ থাকবে।” সুবহানাল্লাহ!
অতএব, প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ ও মহিলা সকলের জন্য দায়িত্ব-কর্তব্য হলো- পবিত্র আশূরা শরীফ উনার আমল সম্পর্কে জেনে সে মুতাবিক আমল করে মহান খালিক্ব মালিক রব আল্লাহ পাক উনার ও উনার রসূল রহমতুল্লিল আলামীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের খালিছ সন্তুষ্টি মুবারক হাছিল করা।