নিত্যপণ্যের দামে ক্ষুব্ধ ক্রেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সবজি, মাছ ও গোশতের এমন ব্যাপক চড়া দামে বিপাকে পড়ছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। রামপুরা বাজারে বাজার করতে আসা একজন ক্রেতা বলেন, আমাদের দেশ যেন একটা মগের মুল্লুক। কেউ আগুনে পুড়ে মরে, কেউ না খেয়ে মরে। আবার কেউ মানুষকে জিম্মি করে টাকা-পয়সা বানানোর পাঁয়তারা চালায়। সাধারণ মানুষের সমস্যা দেখার যেন কেউ নাই।
তিনি বলেন, দেশে হঠাৎ কি এমন হয়ে গেল সব কিছুর দাম হুহু করে বেড়ে যাচ্ছে? দেশে তো বন্যা, খরা বা কোন দুর্ভিক্ষ হয়নি। অরাজক কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টিও হয়নি। তাহলে সবকিছুর দাম এতো কেন? বাজারে গোশতের যে দাম তাতে আমাদের মত নিম্ন আয়ের মানুষের পক্ষে মাসে এক-দুবার গোশত খাওয়ার উপায়ও নেই। সবজি কিনে খাবো তারও উপায় নেই। বেশিরভাগ সবজির দাম প্রায় ১০০ টাকা। আর মাছ যেন সোনার হরিণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঙাস ও তেলাপিয়া ছাড়া বাজার থেকে অন্য মাছ কেনার উপায় নেই।
মাছ, গোশত ও সবজির চড়া দামে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে মাছ ও গোশতের দাম খুব বেশি। কিন্তু দাম নিয়ন্ত্রণে কারো কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখছি না। জিনিসপত্রের দামের বিষয়ে দায়িত্বশীল কারো কোনো বক্তব্যও শুনছি না। যত দুর্ভোগ সব নিম্ন আয়ের মানুষের।
তিনি বলেন, প্রতিবছর রোজার সময় আসলেই বিভিন্ন মহল বাজার মনিটরিংয়ে তৎপর হয়। কিন্তু রোজার আগেই যে সব জিনিসের দাম বহুগুণে বেড়ে যায়, সে বিষয়ে যেন কারোর কোনো ধারণা নেই। রোজা আসতে এখনো এক মাসের বেশি সময় বাকি। অথচ এখনই সব জিনিসের দাম বেড়ে নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
প্রতি কেজি গরুর গোশতের দাম সাড়ে পাঁচশ টাকার উপরে। পাকিস্তানি কক মুরগির কেজি ছাড়িয়েছে ৩০০ টাকা। লাল লেয়ার মুরগির কেজি পৌঁছেছে আড়াইশো টাকায়। বয়লার মুরগির কেজি ২০০ টাকার কাছাকাছি। রাজধানীর বাজারগুলোতে এমন চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে গোশত।
গোশতের দামের পাশাপাশি স্বস্তি নেই মাছ ও সবজিতেও। পাঙ্গাস ও তেলাপিয়া ছাড়া কোনো মাছের কেজি ২০০ টাকার নিচে মিলছে না। আর হাতে গোনা দু-একটি সবজি বাদে বেশিরভাগের দাম ১০০ টাকার কাছাকাছি।
গতকাল জুমুয়াবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, রামপুরা, শান্তিনগর, মালিবাগ হাজীপাড়া, খিলগাঁও অঞ্চলের বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বয়লার মুরগির কেজি আগের সপ্তাহের মতো বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা থেকে ১৭৫ টাকা। লাল লেয়ার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। আর পাকিস্তানি কক মুরগি গত সপ্তাহের মতো ২৯০ থেকে ৩১০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে গরুর গোশতের কেজি পৌঁছে গেছে সাড়ে ৫০০ টাকায়। বাজার ভেদে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৫৩০ থেকে ৫৬০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫২০ থেকে ৫৩০ টাকা কেজি। এর মাধ্যমে গত এক মাসে প্রতি সপ্তাহেই গরুর গোশত দাম কিছু না কিছু বেড়েছে।
পাশাপাশি স্বস্তি দিচ্ছেনা ডিমের দামও। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম নতুন করে না বাড়লেও খুচরা পর্যায়ে এক পিস ডিম ১০ টাকার নিচে মিলছে না। আর পাইকারিতে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা।
এদিকে তিন সপ্তাহ ধরে চড়া দামে বিক্রি হওয়া সবজির দাম এখনও কমেনি। চড়া দামের বাজারে তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হওয়া পেঁপে, টমেটো, শসা ও গাজরের দাম কিছুটা বেড়েছে।
গরুর গোশতের দামের বিষয়ে খিলগাঁওয়ের ব্যবসায়ী কালু মোল্লা বলেন, গত সপ্তাহে ৫২০ টাকা বিক্রি করেছি। আজ ৫৪০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত গরু কিনতে আমাদের খরচ বাড়ছে। ফলে আমরা বাধ্য হচ্ছি গোশতের দাম বাড়াতে। আমাদের ধারণা, সামনে রোজা আসার কারণেই এখন দাম কিছুটা বেড়ে গেছে। তবে রোজার সময় নতুন করে আর দাম বাড়বে না বলে মনে করেন তিনি।
সবজির দামের বিষয়ে শান্তিনগরের ব্যবসায়ী আফজাল বলেন, নতুন আশা সবজির দাম এখন কিছুটা কমেছে। কিছুদিন আগে তো পটল, বরবটি কচুর লতি ১০০ টাকা কেজির নিচে পাওয়া যাচ্ছিল না। কিন্তু এখন পাওয়া যাচ্ছে। আর যেসব সবজি আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে তার দাম তো একটু বাড়বে। সরবরাহ কম থাকলে দাম বাড়বে এটাই স্বাভাবিক। সবজির দাম কেউ কারসাজি করে বাড়ায় না। কারণ সবজি মজুদ করে রাখা যায় না।