দেশের নাগরিকদের ব্যয় সক্ষমতা কমছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে বেড়েই চলেছে বেকারত্ব। প্রতিবছর ১৬ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হলেও চাকুরির বাজারে কর্মসংস্থানের সন্ধানে আসছেন ২২ লাখ বেকার। প্রতিবছরই ৩ দশমিক ১ শতাংশ হারে বাড়ছে বেকার। চাকরি না হওয়ায় ও চাকরির গড় মজুরি কমে যাওয়ায় এবার দেশের মানুষের ব্যয়ক্ষমতাও কমছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাবে খাদ্য-বস্ত্র-সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য ২০১০ সালে মাথাপিছু খরচ হয়েছিল প্রতিমাসে ১১ হাজার ৩ টাকা। ২০১৬ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৫ হাজার ৪২০ টাকা। কিন্তু ২০১৮-১৯ সালে মানুষের ব্যয় করার ক্ষমতা কমে গেছে । কত কমেছে সরকারি কোন হিসাব নেই। তবে বেসরকারি হিসাবে ব্যয় কমে ৪২০ টাকা কমে ১৫ হাজার টাকা হয়েছে। এ কারণে বহু পরিবার দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটাতে আগের চাইতে অধিক চাপ অনুভব করছেন। খরচ কমাতে মানুষ চাহিদা কমাচ্ছে। তাই সকল প্রকার পণ্যের উৎপাদন কমেছে। মানুষের সঞ্চয় কমে গেছে গত ৬ মাসে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে ৫০ শতাংশ। ব্যাংককেও সঞ্চয়ে টান। প্রায় সবগুলো ব্যাংককেই তারল্য সংকট চলছে। দেশের বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে টান পড়েছে। শিল্পখাতে বেসরকারি ঋণ ২১ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও তা ১৬ শতাংশ অতিক্রম করতে পারেনি।

অর্থনীতিবিদরা জানাচ্ছেন, মানুষের ব্যয় করার ক্ষমতা কমে যাওয়ায়, খাদ্য গ্রহণ কমেছে। ২০১০ সালে যেখানে প্রতিদিন একজন ২ হাজার ৩১৮ ক্যালরি গ্রহণ করতো। ২০১৬ সালে ক্যালরি গ্রহণ কমে হয়েছে ২২১০। গত ৬-৭ বৎসর কৃষকের আয় প্রায় কিছুই বাড়েনি। কৃষিমন্ত্রণালয় বলছে, ২০০৪-০৫ হইতে ২০১১-১২ সাল পর্যন্ত চাষির আয় গড়ে সাড়ে ৫ শতাংশ হারে বেড়ে ছিল। কিন্তু তার পর আয়বৃদ্ধির হার কমিয়া বৎসরে গড়ে ১.৩ শতাংশ হয়েছে। ২০১০ সালে অকৃষিতে কর্মসংস্থান ছিল ৬৪ ভাগ লোকের। ২০১৬ সালে তা কমে ৬২ ভাগ হয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, সামাজিক সুরক্ষার প্রকল্পগুলিও বহু মানুষের মৌলিক চাহিদা মিটাতে পারেনি। অপুষ্টি, রক্তাল্পতা, অশিক্ষা আজও দারিদ্রের ফাঁদ বুনে চলেছে।

বিশ্বব্যাংকের ২০১৮ সালের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বাড়লেও দারিদ্র্য কমেনি। বিশ্বের ৫টি দারিদ্র্য প্রধান দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। তাদের হিসাবে দেশে অতি দ্রারিদ্র্য ২ কোটি ৪১ লাখ। এই মানুষগুলো দৈনিক ৬২ টাকা আয় করতে পারেন না।