দিল্লির দাঙ্গা: বিচারের আশা দেখছেন না মুসলমানরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নাসির খানকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ার আগে বন্দুকধারী হিন্দুত্ববাদীরা চিৎকার করে স্লোগান দিয়েছিল, জয় শ্রী রাম।’ পরমুহূর্তেই নাসির খানের বাম চোখে আঘাত হানে ঘাতকের বুলেট।

কাঁপা কাঁপা হাতে আহত চোখে স্পর্শ করতেই রক্তে পিচ্ছিল হয়ে যায় তার আঙুল। চোখ হারানোর বিনিময়ে নাসির খানের জীবন রক্ষা হলেও গত বছর ভারতের রাজধানীতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় শহীদ হয়েছেন অর্ধশতাধিক জন।

৩৫ বছরের নাসির খান এখনো ধুঁকছেন তার ক্ষতের যন্ত্রণায়। অন্যদিকে তার ওপর হামলাকারীদের এক বছর পরেও দাঁড় করানো হয়নি বিচারের কাঠগড়ায়। তিনি বলেন, তার মামলায় পুলিশের অনাগ্রহের কারণে যথাযথ বিচার পাচ্ছেন না তিনি।

নয়াদিল্লির উত্তর ঘন্ডা মহল্লায় বাস করা নাসির খান বলেন, আমার একমাত্র অপরাধ, আমার নামে ধর্ম প্রকাশ পেয়েছে।’
গত বছরের রক্তাক্ত দাঙ্গায় দিল্লির ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিম বাসিন্দারা বলছেন, হিন্দু দাঙ্গাবাজদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ পুলিশ আমলেই নিচ্ছে না।
কিছু লোক এখনো আশা করছেন আদালত তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে। তবে বেশিরভাগই বিশ্বাস করেন, প্রধানমন্ত্রী মোদির হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে বিচার ব্যবস্থাকে তাদের দমন করতেই ব্যবহার করা হবে।

কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠনগুলোর প্রতিবেদনে বলা হয়, মোদির ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতৃত্ব ও দিল্লির পুলিশ বাহিনী উন্মত্ত হিন্দুত্ববাদী কর্মীদের সহিংসতায় সহায়তা করেছে।

গত বছর দিল্লিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন স্থান থেকে বারবার সাহায্যের জন্য আবেদন সত্ত্বেও পুলিশ কোনো সাড়া দেয়নি।
দাঙ্গার পাঁচ মাস পর তদন্তকারীদের কাছে পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ঘটনার সাথে জড়িত হিন্দু দাঙ্গাবাজদের বিষয়ে ছাড় দেয়ার জন্য অনুরোধ করে চিঠি পাঠালে দিল্লি হাইকোর্টে তার সমালোচনা করা হয়।

দাঙ্গার এক বছর পর ক্ষতিগ্রস্ত মুসলমানরা আরো রক্তপাতের আশঙ্কা করছেন। অনেকেই তাদের দীর্ঘদিনের বাড়িঘর অল্প দামেই বেচে দিয়ে অন্যত্র স্থানান্তরিত হয়েছেন।

যারা নিজের আবাসভূমিতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মহল্লার দরজা তারা ধাতব দরজা দিয়ে সুরক্ষিত করছেন। অনেকেই বলছেন, এক বছর আগে ঘটনার সাথে জড়িতদের কোনো বিচারই হবে না।

গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ২০ দিন নাসির খানকে হাসপাতালে কাটাতে হয়। তখন থেকেই বিচারের জন্য তিনি চেষ্টা চালালেও পুলিশ তাকে প্রতি পদক্ষেপেই ফিরিয়ে দিয়েছে।

পুলিশের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে নাসির খান অন্তত ছয় হিন্দুত্ববাদী কর্মীর কথা উল্লেখ করেন, যাদের তিনি সহিংসতায় অংশ নিতে দেখেছিলেন।
জবানবন্দীতে তিনি বলেন, অভিযুক্তরা এখনো আমার ঘরে আসে এবং আমার পুরো পরিবারকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’

পুলিশ অভিযোগপত্রে নাসির খানের আহত হওয়ার স্থান থেকে এক কিলোমিটার দূরে এক ঘটনার কথা উল্লেখ করে। পুলিশ জানায়, বিবাদমান দুই দলের মধ্যে গুলি বিনিময়ের সময় ক্রসফায়ারে নাসির খান আহত হন।

নাসির খানের মতো দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অবিচারের শিকার হওয়া দিল্লির মুসলিম বাসিন্দাদের ঘটনার চিত্র প্রায় সবারই একই রকম।
দিল্লির বাসিন্দা হারুন নিজের চোখে হিন্দু প্রতিবেশীদের হাতে তার ভাই মারুফকে খুন হতে দেখেছেন। ঘটনার বিপুল সাক্ষী থাকলেও পুলিশ হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে পারেনি।

হারুন জানান, পুলিশ প্রতিনিয়ত তাকে হুমকি দিচ্ছে মামলা তুলে নেয়ার জন্য। তিনি বলেন, আমরা আগেও একা ছিলাম এবং এখনো একাই আছি।’