দশ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৮৩৮৮ কোটি টাকা

দশ ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৮৩৮৮ কোটি টাকা

নিউজ ডেস্ক : আমানতকারীদের অর্থ নিরাপদ রাখতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয় ব্যাংকগুলোকে। কিন্তু অনিয়ম দুর্নীতির ফলে অনেক সময় চাপে পড়তে হয়। নিয়মবহির্ভূত ঋণ বিতরণের ফলে ঝুঁকিতে পড়ে সম্পদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী এ মূহুর্তে মূলধন সঙ্কটে রয়েছে দেশের ১০টি ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির পরিমাণ সর্বমোট ১৮ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক নীতিমালা অনুযায়ী সম্পদের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বাংলাদেশে বর্তমানে ব্যাসেল-৩ নীতিমালার আলোকে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ অথবা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি সে পরিমাণ মূলধন রাখতে হচ্ছে। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, খেলাপি ঋণের প্রভাবে মূলধন ঘাটতি মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে ১০টি ব্যাংক। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এসব ব্যাংকের ১৮ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ও বিশেষায়িত খাতের ৬টি, বেসরকারি খাতের তিনটি ও বিদেশি একটি ব্যাংক রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি মূলধন ঘাটতি রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের ৮ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল ৮ হাজার ৮৪৭ কোটি টাকা। ক্রিসেন্ট গ্রুপ ও অ্যাননটেক্স গ্রুপ জালিয়াতির অকুস্থল জনতা ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। এর আগে ডিসেম্বর শেষে ঘাটতি ছিল ৫ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা।

এ ছাড়া ঋণের নামে অর্থ লুটে নেওয়া বেসিক ব্যাংকের ঘাটতিও কিছুটা কমেছে। ব্যাংকটির বর্তমান ঘাটতি ২৩৬ কোটি টাকা। গত ডিসেম্বরে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল ৩ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। তবে রূপালী ব্যাংকের গত ডিসেম্বর শেষে ২০ কোটি টাকা উদ্বৃত্ত থাকলেও মার্চে এসে ঘাটতি রয়েছে ১৫৪ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক ১ হাজার ৫৪ কোটি টাকা ঘাটতি বেড়েছে। গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির ঘাটতি ছিল ৮৮৩ কোটি টাকা। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি হয়েছে ৭৩৪ কোটি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৫৬৯ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের ৪৩৪ কোটি, এবি ব্যাংকের ৩৭৬ কোটি ও বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঘাটতি হয়েছে ৫৪ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনিয়ম, দুর্নীতি আর নানা অব্যবস্থাপনায় ব্যাংক খাতে চলছে এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। যাচাই-বাছাই না করে ভুয়া প্রতিষ্ঠানে ঋণ দেওয়া হয়েছে, যা পরবর্তী সময়ে খেলাপি হয়ে পড়ছে। এসব ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে। বাড়তি অর্থ যোগাতে হাত দিতে হচ্ছে মূলধনে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে সংকট। এসব সমস্যা সমাধানে ব্যাংকিং খাতে আইনের প্রয়োগ ও জবাদিহীতা নিশ্চিত করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা বিতরণকৃত ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ছিল ৯৩ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই মূলধন ঘাটতি বাড়ে। দশটি ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের মূলধন ঘাটতি থাকলেও কিছু ব্যাংক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি রাখতে সক্ষম হয়েছে। সব মিলিয়ে পুরো খাতে ১১ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি রয়েছে। গত বছর একই সময়ে ২৩ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতি ছিল।