দরিদ্রদের প্রকল্পের সুবিধা পায় ধনীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: কাঠ আহরণের মাধ্যমে বন উজাড়কে নিরুৎসাহিত করতে ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্ট পার্টিসিপেটরি অ্যাফরেস্টেশন অ্যান্ড রিফরেস্টেশন (সিআরপিএআর) শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে সরকার। এক্ষেত্রে যাদের আয়ের ৬০ শতাংশই বন থেকে আসে, তাদেরই প্রকল্পের উপকারভোগী হিসেবে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়।

কিন্তু বাস্তব চিত্র বলছে, প্রকল্পের সুবিধাভোগী হিসেবে যাদের নির্বাচন করা হয়েছে, তাদের বনের ওপর নির্ভরশীলতা কম। বনজীবী দরিদ্র পরিবারের বদলে স্থানীয় ধনী ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোই এ প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে বেশি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অধীন বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) মূল্যায়ন প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।

প্রকল্পের মূল্যায়নে আইএমইডি বলছে, আয়ের উৎস হিসেবে যাদের বনের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি অর্থাৎ, ন্যূনতম ৬০ শতাংশ আয় বন থেকেই আসে, প্রকল্পে উপকোরভোগী হিসেবে তাদেরই নির্বাচন করার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে যাদের নির্বাচন করা হয়েছে, তাদের বনের ওপর নির্ভরশীলতা কম। প্রকল্পের অধীন যেসব স্থানে কম আয়ের মানুষকে সুবিধা দেয়া হয়েছে, সেসব স্থানের বাসিন্দাদের আয় বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে যেসব অঞ্চলের বেশি আয়ের মানুষকে সুবিধা দেয়া হয়েছে, সেসব এলাকার স্থানীয়দের আয় খুব একটা বেশি বাড়েনি।

বেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ প্রকল্পের মাধ্যমে উপকারভোগী প্রায় ছয় হাজার পরিবারকে সুবিধা দেয়া হয়েছে। এসব উপকারভোগীর মধ্যে ৬৪ শতাংশ ধনী পরিবার রয়েছে। অন্যদিকে মধ্যবিত্ত আছে প্রায় ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ মাত্র ৬ শতাংশ দরিদ্র বনজীবী এ প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে, যার মধ্যে অতিদরিদ্র পরিবার ২ শতাংশ।

মূল্যায়নে আরো বলা হয়, প্রকল্পের মাধ্যমে সুবিধাভোগী পরিবারগুলোর আয় বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। নোয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে দরিদ্র পরিবারগুলোকে সুবিধা দেয়ার কারণে সেখানকার সুবিধাভোগী এলাকার বাসিন্দাদের আয় বেড়েছে তিন গুণেরও বেশি। অন্যদিকে বরিশালে সামাজিক বনায়ন এলাকায় ধনী পরিবারগুলোকে সুবিধা দেয়ায় সেখানকার সুবিধাভোগী এলাকার বাসিন্দাদের আয় বেড়েছে মাত্র ১১ শতাংশ।

বরিশাল ও চট্টগ্রামের নয় জেলায় বাস্তবায়ন করা হয়েছে প্রকল্পটি। প্রকল্পের সংশোধিত প্রাক্কলিত ব্যয় ২৭৬ কোটি ২৪ লাখ টাকা হলেও প্রকৃত ব্যয় হয়েছে ২৬৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। প্রকল্প থেকে ১৩ ধরনের সহায়তা করা হয়েছে বেশি। এর মধ্যে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উন্নত শাকসবজির বীজ, ফলদ ও বনজ গাছের চারা এবং সঞ্চয় ও ঋণ, হাঁস-মুরগি এবং উন্নত চুলা সুবিধা পেয়েছে ৯৩-৯৯ শতাংশের বেশি পরিবার। অন্যদিকে গভীর ও অগভীর নলকূপ, স্যানিটারি ল্যাট্রিন সহায়তা, সোলার পাওয়ার, আর্থিক অনুদান, গরু-ছাগল এবং জমি বর্গা নিয়ে সবজি ও ধান চাষ ছাড়াও অন্যান্য সুবিধা দেয়া হয়েছে।

জানা গেছে, প্রকল্পের মাধ্যমে দেয়া সুবিধার কারণে পরিবারগুলোর গড় আয় বেড়েছে ৬০ শতাংশ। এর মধ্যে নোয়াখালী উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের গড় আয় ৩ হাজার ২৭৯ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৭৯৮ টাকায়। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের গড় আয় ৬ হাজার ১১৭ থেকে বেড়ে উন্নীত হয়েছে ১১ হাজার ৪৩৫ টাকায়। অন্যদিকে যেসব অঞ্চলের মানুষের গড় আয় বেশি ছিল, সেখানে সুবিধা দেয়ার কারণে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। কক্সবাজার উত্তরে গড় আয় ৮ হাজার ৭৫২ থেকে ৭ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৯ হাজার ৩৭১ টাকা। এছাড়া বরিশাল সামাজিক বনায়ন এলাকায় আয় ৮ হাজার ২১৯ থেকে ১১ শতাংশ বেড়ে উন্নীত হয়েছে ৯ হাজার ১২০ টাকায়।