থ্রিজিতে ৩২ হাজার কোটি টাকায় ৬ হাজার কোটি টাকা আয়, ফোরজিতে শঙ্কা!

থ্রিজিতে মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর বিনিয়োগ ৩২ হাজার কোটি টাকা। বিশাল অঙ্কের এই বিনিয়োগ থেকে উঠে এসেছে ৬ হাজার কোটি টাকা। আগামীতে আসছে ফোর-জি প্রযুক্তি। সেই প্রযুক্তিসেবা দিতেও অপারেটরগুলোকে বিপুল অঙ্কের বিনিয়োগ করতে হবে। থ্রিজির মতো ফোরজিতে বিনিয়োগ করে সেই টাকা কবে ফেরত আসবে, তা নিয়ে শঙ্কিত অপারেটরগুলো।

এদিকে প্রকাশিত ফোরজির গাইডলাইন নিয়ে মোবাইলফোন অপারেটরগুলো প্রায় ২৩টি কনসার্ন পাঠিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে। ওইসব কনসার্ন বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না এলে অপারেটরগুলো ফোরজির নিলামে নাও যেতে পারে, এমন গুঞ্জন রয়েছে। জানা গেছে, বিদ্যমান সমস্যাগুলোর সমাধান হওয়ার আগ পর্যন্ত ফোরজিতে যেতে অপারেটরগুলোর আগ্রহ কম। এসব সমস্যার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য—তরঙ্গমূল্য, টেক নিউট্রালিটি, সিম রিপ্লেসমেন্ট।

ফোরজি প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, ‘অনেক দেশে ফোর-জি চলে এসেছে। ফাইভ-জিতেও চলে গেছে। আমরাও এক জায়গায় বসে থাকব না। ফোরজি বাংলাদেশে আসবেই, এটা হলো বটম লাইন। এখন আমরা রুলস ফলো করব। আমরা তাদের (মোবাইলফোন অপারেটর) কনসার্ন (আপত্তির বিষয়গুলো) নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেছি। এখনও সেই ধারাটা অব্যাহত আছে। বিটিআরসি তাদের বিষয়গুলো এক্সপ্লেইন করেছে। সেটা নিয়েও আমরা অপারেটরগুলোর সঙ্গে বসব। আমরা তাদের প্রতিটি কনসার্নের জায়গায় অ্যাড্রেস করেছি। যেগুলো তাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে বলে তারা মনে করছেন, সেগুলোর ব্যাখ্যা  আমাদের কাছে এসেছে। আমরা তাদের নিয়ে বসব। বিটিআরসি অপারেটরদের নিয়ে ফোরজির টেস্ট রানও করিয়েছে। ফলে মোবাইল অপারেটররা ফোরজির নিলামে অংশ নেবে না, এমনটা হওয়ার কোনও সুযোগই নেই। বাংলাদেশে ফোরজি আসবেই এবং এ বছরই আসবে।’

মোবাইলফোন অপারেটরগুলো ফোরজির গাইডলাইন নিয়ে প্রায় ২৩টি কনসার্ন পাঠিয়েছে। সেসব কনসার্নের কোন কোন জায়গা পরিবর্তন হবে, কিভাবে দেখা হবে, তা জানতে চাইলে টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেখা গেল নীতিমালার কোনও একটা জায়গার প্রথম ৫ লাইন না পড়ে ৬ নম্বর লাইনটি কনসার্ন হিসেবে তুলে দেওয়া আছে। হয়তো প্রথম ৫ নম্বর লাইনেই বলে দেওয়া আছে ৬ নম্বর লাইনটির কী অর্থ হবে। এভাবে তাদের বহু কনসার্নই আমরা রিফিউজ করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যখন বসব (অপারেটরগুলোর সঙ্গে), তখন একটু খানি বিরক্তি নিয়েই বসব। কারণ আমাদের সামনে যখন কাগজ উপস্থাপন করা হয়, আমরা ধরেই নেই, অপারেটরগুলোর প্রতিনিধিরা এই হোমওয়ার্ক করেই এসেছেন যে, এটাতে আসলেই আপত্তি আছে, নাকি ব্যাখ্যাটা হয়নি। কিন্তু তাদের হোমওয়ার্কটা হয়নি। তারপরও যে কনসার্নগুলো তারা উপস্থাপন করেছেন, সেগুলো পয়েন্ট আকারে আসারই কথা নয়। এভাবে আমরা দেখছি, ২৩টির মধ্যে অধিকাংশ আমাদের পরিবর্তন করার প্রয়োজনই নেই। ওখানেই সমাধান আছে।’

প্রতিমন্ত্রী আরও জানান, ‘অপারেটরগুলোকে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল, কনটেন্ট ফিল্টারিং, লোকেশন পিন পয়েন্ট ইত্যাদি বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে।’

মোবাইলফোন অপারেটরগুলোর সংগঠন অ্যামটবের মহাসচিব টিআইএম নূরুল কবীর বলেন, ‘থ্রিজিতে ৩২ হাজার কোটি বিনিয়োগ করে অপারেটরগুলোর আয় হয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা! ফলে ফোরজিতে আসতে গেলে অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলোর সমাধান জরুরি, কার্যকরি ব্যাখ্যাও প্রয়োজন।’

এদিকে দেশের থ্রিজি সেবা নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। দেশের সব জায়গায় এখনও থ্রিজি পৌঁছেনি। ফলে ফোরজি নিয়ে তাই এক ধরনের সমালোচনাও রয়েছে।

গত বছরের শুরুতেই জানা যাচ্ছে, দেশে আসছে ফোরজি। কিন্তু ওই বছর তরঙ্গের নিলাম আয়োজনও করা সম্ভব হয়নি। গত বছরের অক্টোবর মাসে অনুষ্ঠিত ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৬-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছিলেন, ২০১৭ সালে সারাদেশে ফোরজি চালু হবে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় গত বছরের ৫ ফ্রেব্রুয়ারি রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ২০১৭ সালে দেশে ফোরজি চালুর পদক্ষেপ হিসেবে স্পেক্ট্রামের নিলাম অনুষ্ঠিত হবে এবং বর্তমান সরকারের মেয়াদের মধ্যেই এই সেবা চালু করা হবে।

এদিকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম গত ডিসেম্বরের একেবারে শেষ দিকে নতুন বছরে ফোরজি বা এলটিই (লং টার্ম ইভোলিউশন) সেবা চালু হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

এদিকে মোবাইলফোন অপারেটরগুলো যতই ‘বিদ্যমান সমস্যার সমাধান না হলে ফোরজি নিয়ে বাজারে আসা সম্ভব হবে না’ বলুক না কেন, ভেতরে ভেতরে তারা ঠিকই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বাজারে আসার। অনেক অপারেটর এরইমধ্যে ফোর-জি মোবাইল সিম বিক্রিও শুরু করেছে।

মোবাইলফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের হেড অব এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন সৈয়দ তালাত কামাল বলেন, ‘আমরা ফোরজিসেবা দিতে প্রস্তুত। সর্বশেষ আমাদের যে নেটওয়ার্ক আপগ্রেডেশন হলো, সেটা আসলে ফোরজি নেটওয়ার্কেরই আপগ্রেডেশন। সরকার ঘোষণা দেওয়ামাত্রই কিছু কারিগরি নিয়ম অনুসরণ করে আমরা গ্রাহকদের ফোরজি সেবা দিতে পারব।’

মোবাইলফোন অপারেটর রবির অপারেটরটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ইকরাম কবীর বলেন, ‘ফোরজি বা এলটিই হলো মোবাইল মোবাইল নেটওয়ার্কের উন্নয়নের পরবর্তী ধাপ। এই সেবা গ্রাহকদের থ্রিজির চেয়ে দ্রুত গতির ইন্টারনেটসেবা দিতে সক্ষম হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘ফোরজির জন্য ডিভাইস ইকোসিস্টেম তৈরি আছে কিন্তু কিছু ইস্যু রয়েছে, যেগুলোর এখনও কোনও সমাধান হয়নি।’