তেল আমদানি কমাতে ২৭৮ কোটি টাকার প্রকল্প

তেল আমদানি কমাতে ২৭৮ কোটি টাকার প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে চাহিদার তুলনায় ভোজ্যতেলের উৎপাদন কম। চাহিদা পূরণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারকে ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয়। এতে সরকারের ব্যয় বাড়ে। ভোজ্যতেলের এই আমদানি ব্যয় কমাতে ২৭৮ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ শীর্ষক প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর (ডিএই), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই), বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অয়েল ওয়ার্ল্ডের তথ্য দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালে দেশে অপরিশোধিত পাম অয়েল আমদানি হয়েছে ১৫ লাখ ৬০ হাজার টন। ২০১৮ সালে পাম অয়েল আমদানির পরিমাণ ছিল ১৭ লাখ ২০ হাজার টন। অপরদিকে ২০১৯ সালে দেশে মোট ৮ লাখ ৪০ হাজার টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে। ২০১৮ সালে দেশে সয়াবিন তেল আমদানির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৮০ হাজার টন। এর বিপরীতে ২০১৯ সালে দেশে ১৫ লাখ ৯০ হাজার টন সয়াবিন তেলবীজ আমদানি হয়েছে। ২০১৮ সালে ১৩ লাখ ৫০ হাজার টন সয়াবিন তেলবীজ আমদানি হয়েছিল। ২০১৮ সালে দেশে ৪ লাখ ৩০ হাজার টন সরিষা তেলবীজ আমদানি হয়েছিল গত বছর এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার টনে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ইকোনমিক রিভিউয়ে বলা হয়েছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভোজ্যতেল আমদানিতে বাংলাদেশ সব মিলিয়ে ১১৬ কোটি ১০ লাখ ডলার ব্যয় করেছে। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ১৮৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার। তেলবীজ আমদানিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪০ কোটি ২০ লাখ ডলার ব্যয় হয়েছে। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৫৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।

জানা গেছে, দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা ১৯-২০ লাখ টন। এ চাহিদার বিপরীতে তেলজাতীয় শস্য উৎপাদন হচ্ছে ১০ লাখ টন। এখান থেকে ভোজ্যতেল পাওয়া যাচ্ছে চার থেকে পাঁচ লাখ টন। ফলে দেশে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে প্রায় ১৪ থেকে ১৫ লাখ টন। কৃষি মন্ত্রণালয় মনে করে দেশে তেলবীজ উৎপাদন না বাড়ার কারণেই ভোজ্যতেল চাহিদার অধিকাংশ পরিমাণ আমদানির মাধ্যমে পূরণ করতে হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায় তেলজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ এবং উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ ও আমদানি ব্যয় কমানোই প্রকল্প গ্রহণের মূল উদ্দেশ্য। এর বাইরেও আরও কয়েকটি উদ্দেশ্যে এ প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে সরকার। সেগুলো হচ্ছে-প্রচলিত শস্য বিন্যাসে গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রমাণিত স্বল্পমেয়াদি তেল ফসলের আধুনিক জাত অন্তর্ভুক্ত করা। বর্তমান তেলবীজ (সরিষা, তিল, সূর্যমুখী, চীনাবাদাম, সয়াবিন) আবাদি এলাকা ৭ দশমিক ২৪ লাখ হেক্টর থেকে বাড়িয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশে উন্নীত করা। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত তেলবীজের আধুনিক প্রযুক্তির সম্প্রসারণ। মৌ-চাষ অন্তর্ভুক্ত করে তেলজাতীয় বীজের হেক্টর প্রতি ফলন ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ বাড়ানো। ব্লকভিত্তিক কৃষক দল (৭৫৭২টি) গঠনের মাধ্যমে কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদার ও টেকসই করা। গবেষণা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত প্রজনন বীজ ব্যবহার করে প্রকল্প মেয়াদে বিএডিসি কর্তৃক ১ হাজার ৫২ দশমিক ৩২ টন ভিত্তি বীজ উৎপাদন এবং সরবরাহ নিশ্চিত করা। তেলবীজের উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দেশে ভোজ্যতেলের আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনা।