তীব্র অর্থসঙ্কটে পেশা পাল্টাচ্ছেন শিক্ষকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে ঘোর বিপদে পড়েছেন ১০ লাখ বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী।

বেতনের সঙ্গে প্রাইভেট টিউশনিও বন্ধ। ফলে সংকট আরো বেড়েছে। উপায় না পেয়ে উদ্যোক্তারা স্কুল বিক্রি করে দিতে চাচ্ছেন। অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুলও বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। রাস্তার মোড়ে, স্কুলের সামনে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব স্কুল বিক্রির নোটিশ ঝুলছে।

দেশে প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ৬ লাখ শিক্ষক কর্মরত। টিউশন ফির টাকায় বাড়িভাড়া, বিভিন্ন বিল, শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠানে নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সন্তানরা লেখাপড়া করে। বর্তমানে তারা বেতন দিতে পারছে না। আবার নন-এমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে সাড়ে ৭ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় ৮০ হাজার। এ ছাড়া এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রয়েছেন কয়েক লাখ অস্থায়ী ও খ-কালীন শিক্ষক। এই শিক্ষকদের বেশির ভাগ বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন থেকে রক্ষায় অন্য পেশায় যাচ্ছে।

রাজধানীর মাটিকাটায় ১৫ বছর ধরে চলছে আইডিয়াল পাবলিক স্কুল। প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীসংখ্যা ৩০০। শিক্ষক-কর্মচারী ২৫ জন। স্কুলটি বিক্রি করে দিতে নোটিশ টাঙানো হয়েছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আফসোস করে বলেন, প্রতি মাসে প্রতিষ্ঠানটির পেছনে আমার খরচ সোয়া এক লাখ টাকা। মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়িভাড়া ও শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করেছি। এরপর আর দিতে পারছি না। বাড়িওয়ালা বলে দিয়েছেন, এক মাসের ভাড়া মওকুফ করবেন। তার পরও তো অনেক টাকা দরকার। কোথায় পাব? দেনা না বাড়িয়ে তাই স্কুলটি বিক্রি করে দেওয়ার নোটিশ দিয়েছি। ন্যূনতম দাম পেলেই বিক্রি করে দেব।

সাভারের বাইপাইলের সৃজন সেন্ট্রাল স্কুল অ্যান্ড কলেজটিও বিক্রির নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক শামীম ইকবাল বলেন, প্রতি মাসে আমার খরচ ৮০ হাজার টাকা। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিউশন ফি পেয়েছি। মার্চ পর্যন্ত বাড়িভাড়া ও শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করেছি। এখন আর উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। ফলে স্কুল বিক্রির নোটিশ টাঙিয়েছি।’

বাংলাদেশে কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের মহাসচিব সাফায়েত হোসেন বলেন, ৪ মাস ধরে বাড়িভাড়া ও শিক্ষকদের বেতন পরিশোধ করতে না পারায় ব্যক্তিমালিকানাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের ৭০ শতাংশ শিগগিরই বন্ধ হয়ে যাবে।