তিন স্তরে ভ্যাট আদায়, থাকছে কৃষি ও স্বাস্থ্য বীমা

দেশে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের রেকর্ড রিজার্ভ

নিউজ ডেস্ক: আগামী ২০১৯-২০২০ অর্থবছর থেকে তিন স্তরে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট আদায় করা হবে। এছাড়াও কৃষি ও স্বাস্থ্য বীমা প্রচলনের পাশাপাশি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা থাকছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে এক প্রাক-বাজেট আলোচনার পর অর্থমন্ত্রী সংবাদিকদের এ কথা জানান।

বৈঠকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, প্রাক্তন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান, প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী ও অন্যান্য স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর তিন স্তরে ভ্যাট আদায় করা হবে। এই তিনটি স্তর হবে ৫, ৭ ও ১০ শতাংশ। এই ভ্যাট হার আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। বর্তমানে অনেক ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আছে সে ক্ষেত্রে কী হবে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেটিকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।

বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ‘এমপিওভুক্তি’ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে আমরা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করতে পারিনি। এর একটি কারণ ছিল দেশে অসংখ্য বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বেশির ভাগই নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে অগ্রাধিকার তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

তিনি উদাহরন দিয়ে বলেন, ‘দেখা গেছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের সংখ্যা ৪০ জন, সেখানে ছাত্র রয়েছে ৩২ জন। এভাবে তো কোন প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যেগুলো যোগ্য বলে বিবেচ্য হবে সেগুলোকে পর্যায়ক্রমে এমপিওভুক্তি করা হবে। পদ্ধতিটা এমনও হতে পারে যে, ১০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আগামী অর্থবছরে ৩৩ শতাংশ করে এমপিও দিলাম। আবার এমনও হতে পারে যে প্রথম বছরে ১০০-এর মধ্যে ৩৩টিকে এমপিও দিলাম পরবর্তী দুই বছরে অন্যগুলোকে দিলাম। এ দু’টির যে কোনো একটি হতে পারে।

খেলাপি ঋণ আদায় সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, আশা করছি এতে অনেক খেলাপি ঋণ আদায় সম্ভব হবে। যে সব ঋণ স্বাভাবিকভাবে আদায় করা কঠিন সেসব ঋণ আদায়ের দায়িত্ব অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিকে দেওয়া হবে। এ কোম্পানি কোনো শক্তি খাটিয়ে নয় বরং নিয়মকানুনের মাধ্যমে ঋণ আদায় করবে।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে হাওর অঞ্চলে অতি বন্যার কারণে ফসল নষ্ট হয়। এতে করে কৃষকেরা চরম ক্ষতির মুখে পড়েন। তাদের এ ক্ষতি কমিয়ে আনতে আগামী বাজেটেই কৃষকদের ইন্স্যুরেন্সের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনারও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আগামী বাজেটে কিভাবে একটি পরিবার থেকে অন্ততপক্ষে একজনের কর্মসংস্থান করতে পারি তা করার জন্য এমপিরা অনুরোধ করেছেন। এতে করে আমরা যে সেইফটি নেট করেছি, তার প্রয়োজনীয়তা এক সময় থাকবে না। এমপিরা রপ্তানি বাড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন। তারা রপ্তানি খাতে আরো বৈচিত্র আনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

আয়কর ও করপোরেট কর কমানোর ইঙ্গিত দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘করপোরেট কর যতটা সম্ভব কমানো হবে। রাজস্ব আহরনের প্রধান উৎস ভ্যাট, আয়কর ও করপোরেট কর। তাই রাজস্ব আদায়ের দিকেও নজর রাখতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে করের হার না বাড়িয়ে এর আওতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হবে।