ঢাবিতে পিসিপি নেতাদের নির্যাতন থেকে মুক্তি চায় সাধারণ উপজাতী শিক্ষার্থীরা

নিউজ নাইন২৪, ঢাবি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) জগন্নাথ হলে ফের ৫ পাহাড়ি আদিবাসী ছাত্রকে মারধর করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) নেতাকর্মীরা।  নিজেদের দলীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করা, ছাত্রলীগ করা এবং পিসিপি নোতাকর্মীদের কথা মত না চলার কারণেই তাদেরকে মারধর করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বৃহস্পতিবার (১২ মে) এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি ও হলে পাহাড়ি ছাত্রদের নিরাপত্তা চেয়ে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর দুটি আবেদনপত্র দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।

মারধরের শিকার ছাত্ররা- অংছিং মারমা, উসাচিং মারমা, বাচনু মারমা, উমংসিং মারমা এবং রোনাল চাকমা। তারা সবাই জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

ভুক্তভোগীরা জানান, গতবছর পিসিপির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি হয়। এ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমাদেরকে সংগঠনের বিভিন্ন কাজে বাধ্য করে। সংগঠন না করলে মারধর করে প্রায়ই। সর্বশেষ গত ৫ মে হলে পাহাড়ি ছাত্রদের নবীনবরণের ঘটনার জের ধরে প্রথমে ৪ জন এবং পরে ১ জনকে বেদম প্রহার করা হয়।

তারা জানান, প্রতিবছর পাহাড়ি ছাত্রদের নবীনবরণ হতো ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জুম্ব শিক্ষার্থী’ ব্যানারে। যা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিকভাবে হতো। কিন্তু এ বছর তারা শুধু ‘পিসিপি’ ব্যানারে নবীনবরণ করে। পিসিপি চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির স্টুডেন্টস উইং (সম্পূর্ণ রাজনৈতিক) হওয়ায় অন্য পাহাড়ি ছাত্ররা তা মেনে নিতে চায়নি।

এ জন্য অং ছিং মারমা পাহাড়ি ছাত্রদের একটি ফেসবুক গ্রুপে বিষয়টির সমালোচনা করে একটি স্ট্যাটাস দেয়। এরপরই গত মঙ্গলবার (১০ মে) গভীর রাতে একটি রুমে ডেকে নিয়ে হলের দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সুমন মারমাসহ ১০ পিসিপি নেতাকর্মী অং ছিংসহ ৪ পাহাড়ি ছাত্রকে বেদম মারধর করে।

এ ঘটনায় গত বুধবার (১১ মে) রাতে রোনাল চাকমা নামে আরেক পাহাড়ি ছাত্রকে মারধর করা হয়। রোনাল চাকমা ছাত্রলীগ করার অপরাধেই মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদেরকে মারধর করার পর হল থেকে চলে যেতে বলা হয় এবং অন্যথায় আরো খারাপ পরিণতি হবে বলে হুমকি দেয় পিসিপি নেতাকর্মীরা।
এদিকে এ ঘটনার বিচার দাবি করে অংছিং ও রোনাল চাকমা পৃথকভাবে হল প্রাধ্যক্ষ বরাবর দুটি আবেদন করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাহাড়ি এক ছাত্র জানান, পিসিপির নেতাকর্মীরা সমগ্র পাহাড়ি ছাত্রদের নাম ব্যবহার করে হল প্রভোস্ট থেকে সিট বরাদ্ধ নেয়। কিন্তু তাদের দলীয় কার্যক্রম না করলে বিভিন্নভাবে তারা মারধর করে। আমরা এ সংগঠনের অত্যাচার থেকে মুক্তি চাই।

এ বিষয়ে সুমন মারমার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো তথ্য দিতে অস্বীকার করেন। পরে কার নেতৃত্বে তাদের মারধর করা হয়েছে জানতে তিনি  বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কোনো কিছু বলতে চাচ্ছি না।’

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. অসীম সরকার বলেন, ‘আমি অভিযোগটি পেয়েছি। পাহাড়ি ছাত্ররা নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছে। আমি তদন্ত কমিটি গঠন করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’