ডি-৮ দেশগুলো বিমান তৈরি, রক্ষণাবেক্ষণে তুরস্কের সাহায্য চায়

রক্ষণাবেক্ষণে তুরস্কের সাহায্য চায়

নিউজ ডেস্ক: বিশ্বের বিমান শিল্পের গুরুত্বপুর্ণ খেলোয়াড়ে পরিণত হয়েছে তুরস্ক। ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর গ্রুপ ডি-৮-এর বেশিরভাগ সদস্য তাদের বিমান শিল্পের কেন্দ্র ও কারিগরি রক্ষণাবেক্ষণের ঘাঁটি হিসেবে তুরস্ককে বিবেচনা করছে।

অর্থনৈতিক সহযোগিতা সংস্থা ডি-৮-এর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক।

মিশর ও ইরান ছাড়া ডি-৮ এর বাকি সদস্যরা তুরস্কের সঙ্গে সামরিক ও বাণিজ্যিক বিমান সম্পর্কিত সহযোগিতার জন্য অনুরোধ করেছে। ‘মালয়েশিয়া অ্যান্ড ইন্দোনেশিয়া বিজনেস কাউন্সিলে’র ‘ফরেন ইকনমিক রিলেসন্স বোর্ডে’র (দেইক) ভাইস-চেয়ারপার্সন হালিল তোকেল রোববার এ কথা জানিয়েছেন।

তুরস্কের জাতীয় পতাকাবাহী তার্কিশ এয়ারলাইন্সের কারিগরি রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও ওভারহল কেন্দ্রের (টার্কিশ টেকনিক) উপদেষ্টা তোকেল বলেন, তুরস্ককে বিমান রক্ষণাবেক্ষণ সুবিধা স্থাপন করতে বলা হয়েছে। আশগাবাদ ও অন্যান্য কেন্দ্র বলেছে, আসুন বিমান রক্ষণাবেক্ষণ কারখানা তৈরি করুন।

টার্কিশ টেকনিক সম্প্রতি ইস্তাম্বুল বিমানবন্দরে নতুন হ্যাঙ্গার নির্মাণ শেষ করেছে। এর ভেতরে রয়েছে ৬০,০০০ বর্গমিটার জায়গা। এটা তুরস্কের সবচেয়ে বড় হ্যাঙ্গার।

সম্প্রতি ডি-৮-এর বৈঠকে সদস্যদেশগুলো বিমান শিল্পে সহযোগিতা বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করে এবং তুরস্ক যেন এসব দেশে রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করে তার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

তোকেল উল্লেখ করেন যে শুধু এফ-১৬ জঙ্গিবিমান রক্ষণাবেক্ষণ থেকেই বছরে আয় হয় ১ বিলিয়ন ডলার। এসব দেশে শত শত সামরিক ও বেসামরিক বিমান রয়েছে। তাছাড়া মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার ফাইটার জেট প্রয়োজন।

তিনি বলেন, দেশ দুটি বিশেষ করে তুরস্কের টিএফ-এক্স ন্যাশনাল কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এমএমইউ)-এর ব্যাপারে আগ্রহী। টার্কিশ এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (টিএআই) ও প্রেসিডেন্সি অব ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিজ (এসএসবি) যৌথভাবে এই জঙ্গিবিমান তৈরি করেছে।

তোকেল বলেন, বিভিন্ন টানাপোড়ন কাটিয়ে উঠার পর এসব দেশে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।

এমএমইউ হলো লকহিড মার্টিনের তৈরি এফ-৩৫ লাইটনিং-টু জঙ্গিবিমানের মতো পঞ্চম প্রজন্মের জঙ্গিবিমান। টার্কিশ বিমান বাহিনীর হাতে থাকা যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত এফ-১৬ বিমানগুলো বদলে ফেলতে দেশীয়ভাবে এটি তৈরি করা হচ্ছে। ২০৩০-এর দশকের মধ্যে পালাক্রমে এফ-১৬গুলো বাতিল করা হবে।

২০২৯ সাল নাগাদ দেশীয় ইঞ্জিন ব্যবহার করে দেশীয় বিমানটি প্রথম আকাশে উড়তে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তবে ডি-৮ দেশগুলো এখনো কোন যৌথ প্রকল্প শুরু করেনি বলে তোকেল উল্লেখ করেন।

তার মতে, এর পেছনে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণ রয়েছে। তবে এখন সহযোগিতার ধারণাটি শক্তিশালী হচ্ছে। এই পর্যায়ে পাকিস্তান বলছে তুরস্ক হলো ভ্রাতৃপ্রতীম দেশ। মালয়েশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার, তারা বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে।

তিনি ইংগিত দেন যে কয়েক মাস আগে পাকিস্তানে ডি-৮ বেসামরিক বিমান কর্তৃপক্ষগুলোর একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে তার্কিশ টেকনিকও যোগ দেয়।

তোকেল বলেন, আমরা সেখানে একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছি। তিনটি প্রস্তাব ছিলো আমাদের। আমরা বলেছি আটটি কর্তৃপক্ষকে মিলে একটি একক কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে। এটা হবে ইউরোপের এভিয়েশন অথরিটির আদলে। আমরা আটটি দেশের বিমান শিল্পকে সমন্বয় করতে অনুরোধ করেছি।

টার্কিশ টেকনিক এ ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে উল্লেখ করে তোকেল বলেন, আমরা ডি-৮-এর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষগুলোকে একত্রিত করবো। আমরা তাদেরকে পরস্পরের সঙ্গে পরিচিত করাবো। আমরা আটটি দেশের বিমান রক্ষণাবেক্ষণ কোম্পানিগুলোকে একটি ছাতার নিচে আসার প্রস্তাব করেছি।

তুরস্কের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নাজমুদ্দিন আরবাকানের সময় ১৯৯৭ সালের ১৫ জুন যাত্রা শুরু করে ডি-৮। মুসলিম বিশ্বের আটটি উদীয়মান অর্থনীতিকে নিয়ে এই অর্থনৈতিক গ্রুপিংটি গঠন করা হয়।

সূত্র: ডেইলি সাবাহ