ডাকসু: পর্যবেক্ষণকারী শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চান প্রাধ্যক্ষগণ

নিউজ ডেস্ক: বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েকজন শিক্ষক অননুমোদিতভাবে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্রে গিয়ে সামাজিক যোগাযোগ ও প্রচার মাধ্যমে নির্বাচন সম্পর্কে অসত্য তথ্য ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন বলে দাবি করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা (প্রোভোস্ট)। এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে উপাচার্যের কাছে দাবি করেছে প্রাধ্যক্ষ কমিটি।

গতকাল (১৮ মার্চ) সন্ধ্যায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভায় প্রাধ্যক্ষরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। আজ মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকালে জনসংযোগ দফতরের পরিচালক মাহমুদ আলমের স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সব হলে সুষ্ঠু ও গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন হলগুলোর প্রাধ্যক্ষরা।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভায় বলা হয়েছে, ‘এক গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবে কতিপয় বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে অশান্ত ও অস্থিতিশীল করার হীনপ্রয়াসে কোনও কোনও মহল লিপ্ত হয়েছিল। দীর্ঘ প্রায় তিন দশক পর অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অসত্য উস্কানিমূলক তথ্য পরিবেশন ও বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মহলকে আহ্বান জানানো হয়।
নির্বাচনের আগের দিন এক বিবৃতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, আমরা অঙ্গীকার করছি যে নির্বাচনের দিনে স্বেচ্ছাসেবী পর্যবেক্ষক দল হিসেবে ভোটকেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করবো এবং আমাদের অভিজ্ঞতা জাতির সঙ্গে শেয়ার করবো। নির্বাচনের দিন আটজন শিক্ষক বিভিন্ন কেন্দ্রে ঘুরেছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন।

শিক্ষকদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি বিষয়ে প্রভোস্ট কমিটির আহ্বায়ক ও কবি সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষ সাবিতা রেজওয়ানা রহমান  বলেন, ‘কয়েকজন শিক্ষক প্রধান রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি ছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পালন করে মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করেছে। সেজন্য আমরা উপাচার্যের কাছে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তি নেওয়ার দাবি জানিয়েছি ।
এদিকে স্বেচ্ছাসেবী পর্যবেক্ষক হিসেবে নির্বাচনের দিন মাঠে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক কামরুল হাসান মামুন বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে এমন কিছু বলা হয়নি যাতে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক সিনিয়র শিক্ষক, উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ওই একই অভিযোগগুলোইতো করেছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, অনেক প্রার্থী, ভোটার-শিক্ষার্থীরা নির্বাচন চলাকালে এবং নির্বাচনোত্তর সময়ে সততা, আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দীর্ঘ প্রায় তিন দশক পর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের এক বিরাট কর্মযজ্ঞ আয়োজনের জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং প্রাধ্যক্ষ, আবাসিক শিক্ষক ও সংযুক্ত শিক্ষকরাসহ দায়িত্বরত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।’

এতে আরও বলা হয়, ‘ভোটের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ, ধৈর্যশীল আচরণ এবং সুশৃঙ্খল পরিবেশ বজায় রাখাসহ তারা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে প্রাধ্যক্ষবৃন্দ সভায় সেসবের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং উপস্থিত ভোটারদের কেউ ভোট দিতে পারেনি বা কারও ভোট অন্য কেউ দিয়েছে বা কেউ ভোট দিতে বাধাপ্রাপ্ত বা হেনস্তার শিকার হয়েছেন—এমন কোনও অভিযোগ তারা পাননি।

সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, আগামী (২৩ মার্চ) শনিবার সকাল ১১টায় নবনির্বাচিত ডাকসু ও একইসঙ্গে সংশ্লিষ্ট হল সংসদ কার্যকরী পরিষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ডাকসু ও হল সংসদের নবনির্বাচিত কার্যকরী পরিষদের সদস্যদের পরিচিতি ও শুভেচ্ছা বিনিময় এবং দায়িত্বভার গ্রহণসহ পরবর্তী কার্যক্রম বিষয়ে আলোচিত হবে।

এ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রক্টর অধ্যাপক ড.এ কে এম গোলাম রব্বানী।