টাকার জন্য মুসলমানদের সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত মোদির

ভারতের নাজুক অর্থনীতিতে নাগালের বাইরে কর্মসংস্থান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আর্থিক সঙ্কট কাটাতে মোদি সরকার এখন মুসলমানদের সম্পত্তি বিক্রি করতে চাইছে। ভারতে নয় হাজারেরও বেশি মুসলমানদের সম্পত্তি বিক্রি করবে নরেন্দ্র মোদি সরকার। তাদের আশা, এই সম্পত্তি বিক্রি করে পাওয়া যাবে এক লাখ কোটি টাকা। সেই প্রক্রিয়া যাতে দ্রুত ও বাধাহীনভাবে হয়, সে জন্য সরকার তিনটি কমিটি তৈরি করেছে। অমিত শাহের নেতৃত্বে মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটি ছাড়াও ক্যাবিনেট সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে আরও দুটি কমিটি করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্রের মুসলমানদের সম্পত্তি সরকার দ্রুত বিক্রি করতে চায়। কারণ, এই দুই রাজ্যে সম্পত্তি বিক্রি করে সবচেয়ে বেশি টাকা পাওয়া যাবে। উত্তর প্রদেশে প্রায় পাঁচ হাজার মুসলমানদের সম্পত্তি আছে। তবে সরকারের কাছে অগ্রাধিকার পাবে, কলকাতা বা মুম্বইয়ের মুসলমানদের সম্পত্তি বিক্রি করা। কারণ ওই দুই শহরে জমি ও বাড়ির দাম অনেক বেশি।
দেশভাগের সময় প্রধাণত যে মুসলিমরা ভারত ছেড়ে পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন এই সম্পত্তি ছিল তাদের। হিসাব বলছে, পশ্চিমবঙ্গেই এরকম সম্পত্তির পরিমাণ দুই হাজার ৭২৫টি। দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গ, বিশেষ করে কলকাতা ছেড়ে তারা চলে গিয়েছিলেন তখনকার পূর্ব পাকিস্তানে। সারা দেশে মুসলিমদের সম্পত্তির পরিমাণ হল নয় হাজার ২৮০টি, যা প্রধাণত মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, উত্তর প্রদেশে ছড়িয়ে।
নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বিজনেস এডিটর জয়ন্ত রায়চৌধুরি মনে করে, এখন মুসলমানদের সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আর্থিক কারণে। গনমাধ্যমকে সে বলেছে, ‘মূলত কলকাতা ও মুম্বাইয়ের সম্পত্তি বিক্রি করে ভালো টাকা পাওয়া যাবে। তাই ওই দুই শহর বা বলা ভালো দুই রাজ্যের মুসলমানদের সম্পত্তি আগে বিক্রির চেষ্টা করবে সরকার। তবে এই সম্পত্তি বিক্রি করতে কিছুটা সময় লাগতে পারে। সেই প্রক্রিয়া দ্রুত করার জন্য এতগুলি কমিটি করা হয়েছে। কোনও সন্দেহ নেই এই টাকাপেলে সরকারের সমস্যা কমবে।’
তিন বছর আগে মুসলমানদেরসম্পত্তি বিক্রির রাস্তা সুপ্রিম কোর্ট সুগম করে দিয়েছিল। সর্বোচ্চ আদালতের রায় ছিল, মুসলমানদের সম্পত্তি হলে তা বিক্রি করে দেওয়া উচিত। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অমিতাভ সিনহার মতে, এই সম্পত্তি বিক্রির ক্ষেত্রে কোনও আইনগত জটিলতা নেই। গনমাধ্যমকে জানিয়েছে, ‘কিছু সম্পত্তি সরকারের কাছে আছে। কিছু জবরদখল হয়ে আছে। সেই সব সম্পত্তি খালি করে বিক্রি করাটা সরকারের দায়িত্ব। সরকার যদি একদিনে দিল্লিতে জবরদখল কলোনি খালি করে দিতে পারে, তা হলে বেআইনি দখলদারদেরও দ্রুত হঠিয়ে দিতে পারে। দরকার হলে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তা হতে পারে। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে বিক্রির ক্ষেত্রে আইনগত জটিলতা নেই এটা বলা যেতে পারে। আর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও একই পন্থা অনুসরণ করা হয়।’
তবে জয়ন্ত মনে করে, ‘জবরদখল হয়ে থাকা মুসলমানদের সম্পত্তি বিক্রি করতে গেলে মামলা হতেই পারে। তার জন্য বিক্রির ক্ষেত্রে কিছুটা দেরি হতে পারে। তবে সরকার দ্রুত বিক্রির ব্যবস্থা করতে চাইছে এ নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।’ দেশভাগের সময় পূর্ব পাকিস্তান থেকে এসেছিলেন প্রবীণ সাংবাদিক দীপ্তেন্দ্র রায়চৌধুরির পরিবার। গনমাধ্যমকে  জানিয়েছে ‘যাদের কাছে জমি-বাড়ির দলিল বা প্রমাণপত্র ছিল, তারা টাকা পেয়েছেন। আমাদের কাছে না থাকায় আমরা পাইনি। তেমনই পশ্চিমবঙ্গের জমি, বাড়ি ছেড়ে যাঁরা চলে গিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে প্রমাণ থাকলে তাঁরা সম্পত্তির টাকা পেয়ে গিয়েছেন। সেই সম্পত্তি এখন সরকারের। তারা তা বিক্রি করতেই পারে। দ্রুত করার চেষ্টাও অস্বাভাবিক কিছু নয়।’ আর্থিক সঙ্কট কাটাতে তাই মুসলমানদের সম্পত্তি বিক্রির দিকেই নজর দিল মোদি সরকার।