জ্বালানি তেল আমদানিসহ ক্রয় কমিটিতে ৮টি প্রস্তাব অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় সাড়ে ১২ লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেল আমদানিসহ ৮টি প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’। এতে মোট ব্যয় হবে ৩,৮৯৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা । গতকাল বুধবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ক্রয় কমিটির এ ভার্চুয়াল সভায় সভাপতিত্ব করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু সালেহ মুস্তফা কামাল এক ভার্চুয়াল ব্রিফিং-এ সংবাদিকদের জানান, বৈঠকে আগামী পঞ্জিকা বছরের জানুয়ারি-জুন প্রান্তিকের জন্য আন্তর্জাতিক কোটেশনের মাধ্যমে চার ক্যাটাগরির ১২ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৯ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন গ্যাস অয়েল (ডিজেল), ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন জেট এ-১ ফুয়েল, ৮০ হাজার মেট্রিক টন মেরিন ফুয়েল, ৪৫ হাজার মেট্রিক টন মো-গ্যাস (অকটেন) ও ২০ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল রয়েছে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির প্রিমিয়ামসহ এসব জ্বালানি তেল আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ৪২ কোটি ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ৬৫০ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় এর পরিমাণ হচ্ছে ৩ হাজার ৫৮৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

তিনি জানান, চারটি প্যাকেজে এসব জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে ‘ইউনিপ্যাক সিঙ্গাপুর পিটিই লিমিটেড’ থেকে দুটি (এ ও বি) প্যাকেজে মোট ৯ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন গ্যাস অয়েল এবং মোট ১ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন জেট এ-১ ফুয়েল আমদানি করা হবে। অবশিষ্ট দুটি (ডি ও ই) প্যাকেজের আওতায় ৮০ হাজার মেট্রিক টন মেরিন ফুয়েল ও ৪৫ হাজার মেট্রিক টন মো-গ্যাস (অকটেন) আমদানি করা হবে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান সিঙ্গাপুরের ‘ভিটল এশিয়া পিটিই লিমিটেড’ থেকে।

অতিরিক্ত সচিব জানান, সভায় চলতি অর্থবছরে ‘কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড’ (কাফকো) থেকে চুক্তিবদ্ধ সাড়ে ৬ লাখ মেট্রিক টন ইউরিয়া সারের মধ্যে ৮ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগড গ্র্যানুলার ইউরিয়া সার ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

তিনি জানান, সভায় চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় ‘সৌদি বেসিক ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন’ থেকে ৮ম লটে ২৫ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক গ্র্যানুলার (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে প্রায় ৫৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব জানান, সভায় চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় চুক্তির আওতায় ‘কাতার কেমিক্যাল অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি’ থেকে ৬ষ্ঠ লটে ২৫ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক প্রিল্ড (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।
তিনি জানান, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ‘শতভাগ পল্লী বিদ্যুতায়নের জন্য বিতরণ নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ (রাজশাহী, রংপুর, খুলনা ও বরিশাল বিভাগ) (১ম সংশোধিত)’ শীর্ষক প্রকল্পের তিনটি প্যাকেজের তিনটি লটে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয়ের তিনটি পৃথক প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্যাকেজ নং ডিএনই (ডব্লিউ)-জি-৪৮-এর লট-১-এর আওতায় কন্ডাক্টর, এসিএসআর ও বিয়ার ক্রয় করা হবে। এ কাজটি পেয়েছে দমেঘনা স্টার ক্যাবল ও ইলেকট্রিক্যাল এ্যাপলাইয়ার লিমিটেড’।এতে ব্যয় হবে ৬৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। প্যাকেজ নং ডিএনই (ডব্লিউ)-জি-৪৮-এর লট-৩-এর আওতায় কন্ডাক্টর, ইন্স্যুলেটেড ৬০০ ভোল্ট ক্রয় করা হবে। এ কাজটি পেয়েছে ‘মেসার্স রংপুর মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’। এতে ব্যয় হবে ৪৬ কোটি ১১ লাখ টাকা।

প্যাকেজ নং ডিএনই (ডব্লিউ)-জি-৩১-এর লট-৩-এর আওতায় ১১ কেভি ও ৩৩ কেভি আন্ডারগ্রাউন্ড ক্যাবল ক্রয় করা হবে। এ কাজটি পেয়েছে ‘পলি ক্যাবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’। এতে ব্যয় হবে ২০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।

অতিরিক্ত সচিব জানান, এছাড়া সভায় ২০২১ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজি ভার্সন), ইবতেদায়িও দাখিল স্তরের কাগজসহ ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৫৩৫ কপি বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ গ্রহণের (দরপত্র নম্বর ৪৭৫৮৭৬)-এর ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫১ লাখ টাকা। সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৩ লাখ পারিবারিক সাইলো ক্রয় করবে সরকার ।

গতকাল বুধবার সচিবালয়ে ক্রয় কমিটি’র বৈঠকের আগে ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র এক ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৩ লাখ পারিবারিক সাইলো ক্রয়সহ দুটি প্রস্তাবের নীতিগত অনুমোদন এবং একটি প্রস্তাবের ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দেয়া হয়। এগুলো হচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত ‘দরিদ্র, অনগ্রসর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি এবং দুর্যোগপ্রবণ এলাকার জনগোষ্ঠীর নিরাপদ খাদ্য সংরক্ষণের জন্য হাউজহোল্ড সাইলো সরবরাহ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৩ লাখ পারিবারিক সাইলো ক্রয় এবং ২০২১ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক (বাংলা ভার্সন) স্তরের বিনামূল্যের বিতরণযোগ্য পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের জন্য বাফার হিসেবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ১ হাজার মেট্রিক টন মুদ্রণ কাগজ ক্রয়ের প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।

এছাড়া ‘গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন এবং আধুনিক নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত সমবায়ভিত্তিক বহুতল ভবন বিশিষ্ট ‘পল্লী জনপদ’ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রায়োগিক গবেষণা প্রকল্পের মোট ৭টি সাইটের মধ্যে ৩টি সাইটের পূর্ত কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে অনুসরণে বাস্তবায়নের ভূতাপেক্ষ অনুমোদন দেয়া হয়।