জুটমিল শ্রমিকদের বকেয়া-বোনাসের দাবি শ্রমিক ফ্রন্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঈদের আগে খালিশপুর, দৌলতপুর, কে.এফ.ডিসহ রাষ্ট্রায়ত্ব জুটমিলের স্থায়ী, অস্থায়ী, বদলি নির্বিশেষে সব শ্রমিকের বকেয়া মজুরি, বর্তমান স্কেলে ঈদ বোনাস পরিশোধ ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ গ্রেফতার শ্রমিক নেতাদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট।

গতকাল শুক্রবার (২২ মে) সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন ও সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব বুলবুল এক বিবৃতির মাধ্যমে এ দাবি জানান।

নেতারা বলেন, শ্রম আইন- ২০০৬-এর ৪ (৮) ধারা অনুসারে কোনো শ্রমিকের শিক্ষানবিশীকাল হবে ৩ মাস। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশীকালের মেয়াদ আরও ৩ মাস বৃদ্ধি করা যাবে। শিক্ষানবিশীকাল শেষে কনফারমেশন লেটার দেওয়া না হলেও সংশ্লিষ্ট শ্রমিক স্থায়ী বলে গণ্য হবেন। আর ৪ (৫) ধারা অনুসারে কোনো শ্রমিককে অস্থায়ী শ্রমিক বলা হবে যদি কোনো প্রতিষ্ঠানে তার নিয়োগ এমন কোনো কাজের জন্য হয় যা একান্তভাবে অস্থায়ী ধরনের এবং যা সীমিত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ কোনো স্থায়ী কাজের জন্য নিযুক্ত শ্রমিকের শিক্ষানবিশীকাল সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পরও ওই শ্রমিককে অস্থায়ী শ্রমিক হিসেবে গণ্য করা শ্রম আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

‘আইন থাকলেও খালিশপুর, দৌলতপুর, কে.এফ.ডিসহ রাষ্ট্রীয় ৫টি পাটকলের শতভাগ শ্রমিক বছরের পর বছর নিয়মিত কাজ করার পরও বি.জে.এম.সি কর্তৃপক্ষ ওই শ্রমিকদের স্থায়ী পরিচয়পত্র দেয়নি। এখন তারা অস্থায়ী শ্রমিকের অজুহাতে আইন ও মানবিকতাকে পদদলিত করে করোনা দুর্যোগে রাষ্ট্র ঘোষিত সাধারণ ছুটির সময়ের মজুরি থেকে নিম্ন আয়ের অসহায় এ শ্রমিকদের বঞ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। রাষ্ট্রায়ত্ব কারখানা শ্রমিকদের জন্য ঘোষিত মজুরি কমিশন-২০১৫ বহু আগেই বাস্তবায়ন হওয়ার পরও পূর্বের মজুরি কাঠামোর ভিত্তিতে ঈদ বোনাস দিতে চাওয়া রাষ্ট্রের আইন অস্বীকার করার শামিল।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এছাড়া এই শ্রমিকদের নতুন মজুরি কমিশনের হিসেবে এরিয়ারের টাকা এবং সাধারণ ছুটি ঘোষণার পূর্বের কয়েক সপ্তাহের মজুরি এখনও বকেয়া রয়েছে। সাধারণ সময়ে মজুরি বকেয়া থাকলে ধার-কর্য করে জীবনযাপন করা গেলেও করোনাকালে সেই সুযোগ না থাকায় শ্রমিকরা মজুরি ও ঈদ বোনাস পরিশোধের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিজেএমসি’র উচিত ছিল করোনা সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে শ্রমিকদের খাদ্য ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে পদক্ষেপ নিয়ে উদাহরণ তৈরি করা। কিন্তু ন্যূনতম মানবিকতা না দেখিয়ে আন্দোলন দমনের কৌশল হিসেবে স্থানীয় স্বার্থান্বেষী মহলকে দিয়ে প্রায় ৬ শতাধিক শ্রমিকের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। খালিশপুর জুট মিল শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। গ্রেফতার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যেও। উৎসব দূরে থাক, অর্থকষ্টে, খাদ্যাভাবে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শ্রমিকদের জীবন বাঁচানোই দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।

বিবৃতিতে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের স্বৈরতান্ত্রিক ও অমানবিক আচরণের তীব্র নিন্দা জানানো হয় এবং শ্রমিকদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃত খালিশপুর জুট মিল শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয়। সার্বিক পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বরাদ্দ দেওয়ার পরও বিজেএমসি শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া পরিশোধসহ অবিলম্বে শ্রমিকদের ৫ দফা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানায় সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট।