‘জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ ডলারের বাজারে ভারসাম্য ফিরবে’

‘জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ ডলারের বাজারে ভারসাম্য ফিরবে’

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ বৈদেশিক মুদ্রা বাজার তথা ডলারের বাজারে চাহিদা ও সরবরাহে ভারসাম্য ফিরে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সোমবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের মূল ভবনের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য জানান।

এদিন সমসাময়িক বিষয় নিয়ে ডাকা জরুরি এ সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশে ডলার সংকটের শুরু গত বছরের শেষ দিকে। চলতি বছরের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে তা প্রকট আকার ধারণ করে। এরপর দেশের বাজারে হু হু করে বাড়তে শুরু করে ডলারের দাম। এতে জ্বালানি তেলসহ আমদানিনির্ভর সব পণ্যের দাম বাড়ে। উচ্চ মূলস্ফীতির কারণে আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খেতে হয় সাধারণ মানুষকে।

সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, ব্যাংকগুলো প্রতিদিনই বাণিজ্যিক ঋণপত্র বা এলসি খুলছে। তবে কিছু সামাজিক মাধ্যমে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। ডলারের কিছু সংকট থাকলেও এলসি খোলা বন্ধের কোনো নির্দেশনা দেয়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। সক্ষমতা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো পণ্যের বিপরীতে এলসি খুলছে। বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়মিত ডলার সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি ভবিষ্যতেও দিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, চলতি মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত এলসি খোলা হয়েছে ১ হাজার ২৬৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত অক্টোবর মাসের একই সময়ে (প্রথম ১০ দিনে) যা ছিল ১ হাজার ২৩২ মিলিয়ন ডলার। গত অক্টোবর মাসে মোট এলসি খোলা হয়েছে ৪ হাজার ৭৪৩ মিলিয়ন ডলার।

প্রধানত করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতির বহির্খাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়। এ কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখন টালমাটাল। এরই প্রভাবে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে সরবরাহ চাহিদায় ব্যত্যয় ঘটতে থাকে।

জি এম আবুল কালাম আজাদ বলেন, কমার্শিয়াল এলসি ওপেন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। নিজ নিজ ব্যাংক তাদের রেমিট্যান্স আয় ও রেমিট্যান্স ব্যয় সাপেক্ষে ব্যবহারযোগ্য বৈদেশিক মুদ্রা তহবিল বিবেচনায় ঋণপত্র খুলছে, খুলে যাবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পরিপূর্ণ গাইডলাইন মোতাবেক তদারক করছে। বিশেষ তদারকিতে ওভার ইনভয়েসিং এবং আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের অনেক তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

তিনি জানান, আজ পর্যন্ত বিদেশি মুদ্রায় কোনো লোন ডিফল্ট হয়নি এবং বাংলাদেশ ব্যাংক তা হতেও দেবে না। প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক পরামর্শ ও সাপোর্ট দিয়ে যাবে। এছাড়া অগ্রাধিকার খাত এবং জরুরি পণ্য (জ্বালানি, সার ও খাদ্য) আমদানিতে সরকারি ঋণপত্রের মূল্য পরিশোধে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রেখে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকারি ঋণপত্রে ডলার সাপোর্ট দিয়ে চলেছে এবং যাবে।

রেমিট্যান্স নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেন, চলতি বছরের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ৬৫১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; যা গত বছর একই সময় এসেছিল ৬৪১ মিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে এখানে প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৮ শতাংশ। গত বছরের জুলাই থেকে সর্বশেষ ১০ নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ১ শতাংশ।

তিনি জানান, এছাড়া মোট রপ্তানি ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ৪০ হাজার ৬৩৭ মিলিয়ন, যা পূর্ববর্তী বছর ছিল ৩৬ হাজার ৪৬ মিলিয়ন ডলার। রপ্তানিও ক্রমবর্ধনশীল।