ছাত্র নিহতের ঘটনায় চলছে অবরোধ

নিজস্ব প্রতিবেদক  :সু-প্রভাতের বাসচাপায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নিহতের ঘটনায় দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বাসচালকের সর্বোচ্চ শাস্তিসহ আবরারের নামে একটি ফুটওভার ব্রিজ করে দেয়ার আশ্বাস দেয়ার পরও সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের অবরোধে বিমানবন্দর থেকে বাড্ডা হয়ে রামপুরা-গুলিস্তান রুটের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এর আগে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দাবি মেনে আশ্বাস দেন উত্তর সিটি কর্পোরশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে রাধানীর কুড়িল মোড়ে বিমানবন্দর থেকে বাড্ডা হয়ে রামপুরা-গুলিস্তান রুটের যান অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। নতুনবাজার মোড় ও গুলিস্তান থেকে ছেড়া আসা যান অন্য রুটে ঘুরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে এসব এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে প্রগতি সরণির রোডের নর্দায় দুর্ঘটনাস্থলে যান মেয়র। এ সময় বিইউপির তৃতীয় বর্ষের ছাত্র অনিক হাসানসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী মেয়রের সঙ্গে কথা বলেন ও লিখিতভাবে ১২ দফা দাবি পেশ করেন। মেয়র ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান।

মেয়র বলেন, ‘আগামী দুই মাস কিংবা সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে এ জায়গায় আবরার চৌধুরীর নামে ফুটওভার ব্রিজ করে দেবো। আপনারা আমাকে একটু সময় দেন। এ ঘটনায় আপনাদের মাঝে থেকে ২-৫ জনকে নিয়ে আমরা একটি কমিটি গঠন করবো। প্রয়োজনে আপনাদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবো। আপনাদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আলোচনা করব।’

তিনি বলেন, এ ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাসের মালিকদের সযুক্ত করা হবে। এছাড়া সড়কে শৃঙ্খলা আনা সম্ভব নয়। এ কাজটি আমরা দ্রুত করব।

মেয়র আরও বলেন, সড়কসংশ্লিষ্ট যতগুলো সমস্যা রয়েছে সেগুলো সমাধানে তোমরা আমাদের সঙ্গে থাকো। আমরা একটি একটি করে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে কাজ করব।

ঘাতক বাসচালকের বিচারের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঘাতক চালকের বিচার করতেই হবে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার সর্বোচ্চ বিচার হবে।’

মেয়র আতিকুল ইসলামের আশ্বাস উপেক্ষা করে পরবর্তীতে আট দফা দাবি পেশ করেন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হচ্ছে-

১. পরিবহন সেক্টরকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে এবং প্রতি মাসে বাসচালকের লাইসেন্সসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চেক করতে হবে।
২. আটক চালক ও সম্পৃক্ত সবাইকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৩. আজ থেকে ফিটনেসবিহীন বাস ও লাইসেন্সবিহীন চালককে দ্রুত সময়ে অপসারণ করতে হবে।
৪. ঝুঁকিপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় সব স্থানে আন্ডারপাস, স্পিড ব্রেকার এবং ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করতে হবে।
৫. চলমান আইনের পরিবর্তন করে সড়ক হত্যার সাথে জড়িত সবাইকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৬. দায়িত্ব অবহেলাকারী প্রশাসন ও ট্রাফিক পুলিশকে স্থায়ী অপসারণ করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৭. প্রতিযোগিতামূলক গাড়ি চলাচল বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে বাসস্টপ এবং যাত্রী ছাউনি করার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং
৮. ছাত্রদের হাফ পাস (অর্ধেক ভাড়া) অথবা আলাদা বাস সার্ভিস চালু করতে হবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের পক্ষে এসব দাবি ঘোষণা করেন বিইউটি শিক্ষার্থী শামীম আল হাসান। দাবি ঘোষণার পাশাপাশি এসব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা কোনো আশ্বাস শুনতে চাই না। আমাদের দাবি বাস্তবায়ন চাই।

এ সময় ঘটনাস্থলে যান বিইউপির রেজিস্ট্রার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুব সারোয়ার। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘মেয়রের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। যে দাবিগুলোতে আইনি জটিলতা আছে সেগুলোর আইনগত দিক দেখে ব্যবস্থা নেবেন।’

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রাজধানীর বসুন্ধরা গেট এলাকায় সু-প্রভাত বাসের চাপায় মারা যান আবরার আহমেদ চৌধুরী। তিনি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আরাফাত আহমেদ চৌধুরীর বড় ছেলে।

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-অপারেশন) আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, ঘাতক সু-প্রভাত বাস ঢাকা-মেট্রো-ব ১১-৪১৩৫ চালককে আটক করা হয়েছে। চালকের নাম সিরাজুল ইসলাম (২৯)। তার ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির কাগজপত্র ঠিক আছে কিনা যাচাই-বাছাই চলছে। এ ঘটনায় হেলপার পলাতক।