সন্ত্রাসী সংগঠন বিবেচনায় ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করল সরকার, দাবি উঠেছে ছাত্র শিবির নিষিদ্ধেরও

ছাত্রলীগ সহসভপতির চাঁদাবাজি

ডেস্ক: আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনে তাদের নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বেশ কিছু সংগঠন।  বৃহস্পতিবারের (২৪ অক্টোবর) মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী প্ল্যাটফর্মটি। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে আয়োজিত এক সমাবেশ থেকে তারা বৃহস্পতিবারের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিধিদ্ধ করতে সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে।

সম্প্রতি একই দাবি তুলেছেন আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে “সন্ত্রাসী সংগঠন” ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে।”

আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাষ্ট্রপতির অনুমোদনক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ থেকে এ বিষয়ে গেজেট জারি করা হয়েছে।

এতে সই করেন জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-২ এর সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন।

গেজেটে বলা হয়, ‘যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করিয়া বিগত ১৫ বৎসরের স্বৈরাচারী শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজী, ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল এবং এতৎসম্পর্কিত প্রামান্য তথ্য দেশের সকল প্রধান গণমাধ্যমে প্রকাশিত হইয়াছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হইয়াছে।

গেজেটে আরও বলা হয়, গত ১৫ জুলাই হইতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উন্মত্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করিয়া শতশত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের হত্যা করিয়াছে এবং আরো অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করিয়াছে।

গেজেট জারি বলা হয়, সরকারের নিকট যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ রহিয়াছে যে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উস্কানিমূলক কর্মকান্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যের সহিত জড়িত রহিয়াছে।

সরকার ‘সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯” এর ধারা ১৮ এর উপ-ধারা (১) এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ”-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করিল এবং উক্ত আইনের তফসিল-২ এ “বাংলাদেশ ছাত্রলীগ” নামীয় ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ সত্ত্বা হিসাবে তালিকাভুক্ত করিল।

উল্লেখ্য, ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হত্যা, ধর্ষণ, হামলাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের রুমকে টর্চার সেলে পরিণত করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নির্যাতন অভিযোগ রয়েছে ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান, ব্যবসয়ী প্রতিষ্ঠান থেকে চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল বরাবরই। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সরকার পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলে । ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলেন শিক্ষার্থীরা। সেই দাবির প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সরকারকে আল্টিমেটাম দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক হিসেবে আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, “ছাত্রলীগের হাতে এখনো রক্ত লেগে আছে। যে ছাত্রলীগের হাতে মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাদের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। এই সপ্তাহের মধ্যে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে হতে।”

তবে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী। তিনি ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “জুলাই আগস্ট মাসে যারা গণহত্যার সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের বিচার সর্বপ্রথম করতে হবে। এর মধ্যে ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও রয়েছে। কিন্তু আমরা সেই রকম কিছু লক্ষ করছি না। ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করার আগে সব থেকে বেশি জরুরি হলো দোষীদের বিচার করা।”

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মাহির শাহরিয়ার রেজা ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের সঙ্গে ছাত্র শিবির ও ছাত্র সমাজকেও নিষিদ্ধে দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমরা চাই সন্ত্রাসী ও স্বাধীনতা বিরোধী সংগঠনকে নিষিদ্ধ করা হোক। ৯০ এর আন্দোলনের পর ঢাবিতে ছাত্র সমাজ ও শিবির নিষিদ্ধ ছিল। এখন তাদের নিষিদ্ধ করতে হবে। এই সঙ্গে সন্ত্রাসী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রলীগকেও নিষিদ্ধ করতে হবে ক্যাম্পাসগুলোতে।”

আইন করে ছাত্রলীগেকে নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “আইন করে নিষিদ্ধের ব্যাপারে এই মূহুর্তে আমরা কোনো মন্তব্য করছি না। কারণ, যখন যে সরকার আসে তারা নিজেদের মতো করে কাজ করে। এই বিষয়টি নিয়ে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।”