চেক জালিয়াতি: বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

চেক জালিয়াতি: বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা

রাজশাহী সংবাদদতা: রাজশাহীতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) তিনজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এসব মামলা করে। মামলায় চেক জালিয়াতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করা হয়েছে।

তিনটি মামলায় তাদের বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধকোটি টাকা লোপাট করার অভিযোগ আনা হয়েছে। বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুদকের রাজশাহী সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলা তিনটি করা হয়েছে। এই কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আমির হোসাইন বাদী হয়ে মামলাগুলো করেন।

দুদক জানায়, ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিএমডিএর রাজশাহীর গোদাগাড়ী জোন-২ এর কার্যালয়ে অর্থ লুটপাটের অভিযোগে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এ মামলার আসামিরা হলেন- গোদাগাড়ী জোন-২ এর তৎকালীন কোষাধ্যক্ষ খাবির উদ্দিন (৪৫) এবং একই কার্যালয়ের তৎকালীন সহকারী প্রকৌশলী জি এফ এম হাসনুল ইসলাম (৫৫)। হাসনুল এখন বিএমডিএর রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলায় কর্মরত। আর খাবির উদ্দিন গোদাগাড়ী থেকে নওগাঁর মান্দায় বদলি হয়েছিলেন। সেখানে সাময়িক বরখাস্ত হয়েছেন।

এ দুজনের বিরুদ্ধে ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭১৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া শুধু খাবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়েছে। সেখানে তার বিরুদ্ধে ১১ লাখ ৩৯ হাজার ১১৮ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। আরেক মামলায় বিএমডিএর মতিউর রহমান (৫০) নামে সাময়িক বরখাস্ত এক সহকারী হিসাবরক্ষকের বিরুদ্ধে ১ লাখ ২১ হাজার ৩২২ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

খাবির ও হাসনুলের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, হাসনুল গোদাগাড়ীতে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থাকাকালে আয়-ব্যয় কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি বিল ভাউচার পাস, চেক ইস্যু এবং কর্তৃপক্ষের গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়নের যাবতীয় দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় সেই অফিসে কোষাধ্যক্ষ ছিলেন খাবির উদ্দিন। তিনি কোষাধ্যক্ষ হিসেবে ক্যাশ বই সংরক্ষণ, আয়-ব্যয়ের হিসাব লিপিবদ্ধকরণ, চেক প্রস্তুত ও লিপিবদ্ধকরণ, চেক রেজিস্টারে চেকের তথ্য রেকর্ডভুক্তকরণ ও সংরক্ষণ এবং ইস্যু করা চেকের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।

তারা দুজনে চেক টেম্পারিং করে সরকারি অর্থ লোপাট করেছেন, এমন অভিযোগ পাওয়ার পর দুদক গতবছর বিভিন্ন নথিপত্র জব্দ করে। চেকের কপি ও মুড়ি বই পর্যালোচনায় দেখা যায়, খাবির উদ্দিন ব্যাংক থেকে টাকা তোলার জন্য চেকে এবং চেকের মুড়িতে সমপরিমাণ টাকার অঙ্ক লিপিবদ্ধ করে আয়-ব্যয় কর্মকর্তার সই নেন। কিন্তু ব্যাংকে চেকগুলো দেওয়ার আগে সুকৌশলে টাকার অঙ্ক পরিবর্তন করে নিতেন। এভাবে বেশি টাকা তুলতেন।

চেক পর্যালোচনায় দেখা যায়, চেকের মুড়ি অনুযায়ী টাকার অঙ্ক লেখার সময় বামপাশে অতিরিক্ত জায়গা ফাঁকা রেখে আয়-ব্যয় কর্মকর্তার সই নিতেন তিনি। পরবর্তীতে ইচ্ছামাফিক টাকার অঙ্ক পরিবর্তন করে নিতেন।

এ প্রক্রিয়ায় ১৮০টি চেকে টাকার অঙ্ক কাটাকাটি বা ওভার রাইটিংয়ের মাধ্যমে ১৮০টি চেকে প্রকৃতপক্ষে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৪ টাকা তোলা যেত। কিন্তু টাকার অঙ্ক ও কথায় পরিবর্তন করে তোলা হয়েছে ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার ১৫২ টাকা। খাবির উদ্দিন ও জি এফ এম হাসনুল ইসলাম যোগসাজশ করেই বিভিন্ন খাতের বিপরীতে অতিরিক্ত ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭১৮ টাকা তুলেছেন।

এদিকে, শুধু খাবিরের বিরুদ্ধে করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গোদাগাড়ী জোন-২ এ কর্মরত থাকাকালে তিনি ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোবাইল ভেন্ডিং ইউনিটের (এমভিইউ) রিচার্জের বিপরীতে ডিলারদের প্রাপ্য কমিশনের ওপর আদায় করা আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১০ লাখ ৮৮ হাজার ২৪৮ টাকা এবং মানি রশিদ বইমূলে আদায় করা ৫০ হাজার ৮৭০ টাকাসহ মোট ১১ লাখ ৩৯ লাখ ১১৮ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া তিনি এসব রশিদ বই গায়েব করে দেন।

তৃতীয় মামলার আসামি মতিউর রহমানও গোদাগাড়ী জোন-২ এ সহকারী হিসাবরক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি এমভিইউ রিচার্জের বিপরীতে ডিলারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত কমিশনের ওপর প্রযোজ্য আয়কর ও ভ্যাটের অর্থ আদায় করে বিএমডিএ এর সংশ্লিষ্ট খাতে জমা দেননি। এভাবে তিনি ১ লাখ ২১ হাজার ৩২২ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

মোহনপুর উপজেলার সহকারী প্রকৌশলী জি এফ এম হাসনুল ইসলাম মামলার বিষয়ে কিছু জানেন না দাবি করে বলেন, আমি যথাযথভাবে চেক সই করতাম। সেই চেক নিয়ে যদি কেউ টেম্পারিং করে, তাহলে এর দায়তো আমার না। এজন্য আমি কোনোভাবেই দায়ী নই।