ভালো যাচ্ছেনা চীনের অর্থনীতি, কমছে আমদানি-রফতানি

নিউজ নাইন২৪, ডেস্ক: বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারছে না চীন। ক্রমশ নিচের দিকে যাচ্ছে আমদানি রফতানি। গত মার্চে অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে চীনে যেমন পণ্যের চাহিদা বেশি ছিল, তেমনি বহির্বিশ্বেও চীনা পণ্যের চাহিদায় ঊর্ধ্বগতির আভাস পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এক মাস পরই পুরো বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে।

দেশটির শুল্ক বিভাগের দেয়া তথ্যে দেখা যায়, এপ্রিলে দেশটির আমদানি-রফতানি দুটিই কমে গেছে। খবর এএফপি ও সিনহুয়া।

গতকাল চীনের শুল্ক বিভাগ জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমসের (জিএসি) পক্ষ থেকে জানানো হয়, ডলার হিসেবে বার্ষিক ভিত্তিতে চীনের রফতানি ১ দশমিক ৮ শতাংশ কমে গেছে। বিগত ২৫ বছরের মধ্যে চীনের অর্থনীতি সবচেয়ে শ্লথগতিতে প্রসারিত হচ্ছে। অর্থনীতির এ পরিস্থিতি দেশটির রফতানির ওপরও প্রভাব ফেলছে; যার সূত্র ধরে ডলারের হিসাবে গত ১০ মাসের মধ্যে নয় মাসই রফতানি সংকোচনের মধ্যে রয়েছে। যদিও স্থানীয় মুদ্রা ইউয়ানে হিসাব করলে তা বেড়েছে বলেই দেখা যায়। এদিক থেকে এপ্রিলে চীনের রফতানি ৪ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে শুল্ক বিভাগ।

পরিসংখ্যান দফতরের তথ্যে একটি বিষয় স্পষ্ট, মার্চে অপ্রত্যাশিতভাবে রফতানি বৃদ্ধি খুবই সাময়িক ঘটনা। সামগ্রিক পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, চীন সরকারের প্রবৃদ্ধির উচ্চাভিলাষী লক্ষ্যপূরণ বেশ কষ্টকর হবে।

অন্যদিকে এপ্রিলে চীনের আমদানিপূর্ববর্তী মাসের তুলনায় ১০ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে; যা ৫ শতাংশ হ্রাসের পূর্বাভাসের চেয়ে অনেকটাই বেশি। আগের মাসে চীনের আমদানি ৭ দশমিক ৬ শতাংশ সংকোচিত হয়েছিল।

এপ্রিলে সব মিলিয়ে ১৭ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের পণ্য রফতানি করেছে চীন। আর আমদানি হয়েছে ১২ হাজার ৭০০ কোটি ডলার সমপরিমাণের পণ্য। ফলে এ সময় দেশটির বাণিজ্য উদ্বৃত্ত বেড়ে ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। এক বছর আগে যা ছিল ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।

মুডি অ্যানালাইটিকসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আমদানির উপাত্তগুলো বেশ দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। ফলে সামনের সময়গুলোয় শিল্প-কারখানায় উত্পাদন ও রফতানিতেও তেমন গতি থাকবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। বেসরকারি জরিপে দেখা গেছে, এপ্রিলে চীনের শিল্প-কারখানায় উত্পাদন আরেক দফা কমে গেছে। দেশটির শিল্প ও কারখানা কার্যক্রমের জরিপ করে থাকে কাইজিন। এর পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্সটি টানা ১৪ মাস ধরে নিম্নমুখী রয়েছে।

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে জিডিপির উপাত্তে দেখা যায়, গত বছরের দ্বিতীয়ার্ধে মারাত্মক শ্লথগতির পর দেশটির অর্থনীতি আবার স্থিতিশীলতার দিকে এগুচ্ছে। জানুয়ারি থেকে মার্চ প্রান্তিকে তা বার্ষিক ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হারে সম্প্রসারিত হয়েছে। কিন্তু এর পরও চীনা অর্থনীতির এ পরিস্থিতি ক্ষণস্থায়ী বলে উদ্বেগ রয়েই গেছে। কারণ চীন এখন রফতানিনির্ভরশীলতা থেকে বের হয়ে অর্থনীতিকে অভ্যন্তরীণ ভোক্তা ব্যয়মুখী করে তুলতে চাইছে।

গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়, চীন অর্থনীতির মডেল পরিবর্তনের যে চেষ্টা করছে তাতে এশিয়ার দেশগুলো ভুক্তভোগী হবে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানের মতো চীনের শীর্ষস্থানীয় রফতানিকারক দেশগুলোকে সবচেয়ে মাশুল গুনতে হবে।