গৃহ নির্মাণ ঋণের নতুন নীতিমালা

নিউজ ডেস্ক : এখন থেকে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের চাকরিজীবীরাও ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিসের চাকরিজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করে সরকারি কর্মচারীদের জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহ নির্মাণ ঋণ নীতিমালা জারি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

এই নীতিমালার আওতায় সরকারি চাকরিজীবীদের মতো জুডিশিয়াল সার্ভিসের কর্মকর্তারাও ৫ শতাংশ সুদে গৃহ নির্মাণ ও ফ্ল্যাট কেনার জন্য সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। তাদের জন্য সর্বনিম্ন ঋণের সিলিং নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা। এই ঋণ ২০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। ঋণে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ আরোপ করা হবে না।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এই নীতিমালাটি ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। নতুন এই পরিপত্র জারি হওয়ার ফলে অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে গত বছরের ৩০ জুলাই যে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল সেটি বাতিল বলে গণ্য হবে।

পরিপত্র অনুযায়ী, বিচার বিভাগীয় বা জুডিশিয়াল সার্ভিসে ৪র্থ ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের (৪৪,৪৫০/তদূর্ধ্ব) কর্মকর্তারা ঢাকা মহানগর/সব সিটি করপোরেশন বা বিভাগীয় সদরে গৃহ নির্মাণ বা ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য সর্বোচ্চ ৭৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। জেলা সদরের জন্য পাবেন ৬০ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য কর্মকর্তাদের গৃহ নির্মাণের জন্য ঋণ দেওয়া হবে ৫০ লাখ টাকা।

একইভাবে বিচার বিভাগের ৬ষ্ঠ গ্রেড ও ৫ম গ্রেড (৩০,৯৩৫ থেকে ৩৪,৫৪০ টাকা) কর্মকর্তারা ঢাকা মহানগরী, সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগী সদরে গৃহ নির্মাণের জন্য ঋণ পাবেন ৬৫ লাখ, জেলা সদরের জন্য ৫৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য সর্বোচ্চ ঋণ দেওয়া হবে ৪৫ লাখ টাকা।

সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুযায়ী, জাতীয় বেতন কাঠামোর ৫ম গ্রেড ও তদূর্ধ্ব, যাদের বেতন স্কেল ৪৩ হাজার টাকা বা এর বেশি তারা প্রত্যেকে ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরে গৃহ নির্মাণে ঋণ পাবেন ৭৫ লাখ টাকা। জেলা সদরে এর পরিমাণ হবে ৬০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকায় ৫০ লাখ টাকা।

বেতন কাঠামোর ৯ম গ্রেড থেকে ৬ষ্ঠ গ্রেড পর্যন্ত বা যাদের মূল বেতন ২২ হাজার থেকে ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা, তারা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদর এলাকার জন্য ৬৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৫৫ লাখ এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৪৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।

১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত যাদের মূল বেতন ১১ হাজার থেকে ১৬ হাজার টাকা তারা ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৫৫ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ৩০ লাখ টাকা ঋণ পাবেন।

১৪তম থেকে ১৭তম গ্রেড বা ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার ২০০ টাকা বেতন স্কেলে ঢাকাসহ সব সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য ৪০ লাখ টাকা, জেলা সদরের জন্য ৩০ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২৫ লাখ টাকা ঋণ পাবেন। ১৮তম থেকে ২০তম গ্রেড বা ৮ হাজার ২৫০ টাকা থেকে ৮ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত মূল বেতন পান এমন কর্মচারীরা ঢাকাসহ সিটি করপোরেশন ও বিভাগীয় সদরের জন্য গৃহ নির্মাণ ঋণ পাবেন ৩০ লাখ টাকা। জেলা সদরে এটি হবে ২৫ লাখ টাকা এবং অন্যান্য এলাকার জন্য ২০ লাখ টাকা।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নীতিমালা অনুযায়ী, গৃহ নির্মাণ ঋণ নেওয়ার সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৫৮ বছর করা হয়েছে। এতে সর্বোচ্চ ঋণসীমা ৭৫ লাখ টাকা ও সর্বনিম্ন ঋণ ২০ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। ঋণের সুদ গড়ে ১০ শতাংশ ধরা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের কাছ থেকে সুদ নেওয়া হবে ৫ শতাংশ। সুদের বাকি ৫ শতাংশ ভর্তুকি হিসেবে সরকার পরিশোধ করবে। এই অর্থ সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে দেওয়া হবে। প্রতি বছর বাজেটে ভর্তুকি অর্থ বরাদ্দ দেওয়া থাকবে বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

সরকার বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে যেকোনো সময় সুদের হার পুনঃনির্ধারণ করতে পারবে বলেও পরিপত্রে উল্লে করা হয়েছে। ঋণের বিপরীতে সুদের ওপর সুদ অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি সুদ নেওয়া হবে না। কোনো প্রসেসিং ফি বা আগাম ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে কোনো অতিরিক্ত ফি দিতে হবে না। ঋণ পরিশোধের মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ২০ বছর। সরকারি তফসিলি ব্যাংক ও বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করবে।

গৃহ নির্মাণ কাজের ওপর ভিত্তি করে মঞ্জুরিকৃত ঋণ সর্বোচ্চ চারটি কিস্তিতে ছাড় করা হবে। আর রেডি ফ্ল্যাট অথবা জমিসহ তৈরি বাড়ির কেনার ক্ষেত্রে পুরো ঋণ এক কিস্তিতে দেওয়া যাবে বলেও নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। অনিবার্য কারণবশত মাসিক কিস্তি পরিশোধে দেরি হলে ওই দেরির জন্য আরোপযোগ্য সুদ শেষ কিস্তির সঙ্গে যুক্ত হবে। এছাড়া, গৃহ নির্মাণের ক্ষেত্রে প্রথম কিস্তির ঋণের অর্থ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ এক বছর পর এবং ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে ঋণের অর্থ প্রাপ্তির সর্বোচ্চ ছয় মাস পর ঋণ গ্রহীতার মাসিক ঋণ আরম্ভ হবে।

নীতিমালা অনুযায়ী প্রাইভেট প্লটের ঋণের জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে বিভিন্ন দলিল জমা দিতে হবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে জমির মূল মালিকানা দলিল; এসএ বা আরএস রেকর্ডীয় মালিক থেকে মালিকানা স্বত্বের প্রয়োজনীয় ধারাবাহিক দলিল; সিএস, এসএ, আরএস, বিএস ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিটি জরিপ খতিয়ান জাবেদা নকল; জেলা বা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস কর্তৃক ইস্যু করা ১২ বছরের নির্দায় সনদ (এনইসি)। আর ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে জমা দিতে হবে রেজিস্ট্রি করা বায়না চুক্তি ও ফ্ল্যাটের মালিকানা দলিল (বন্ধক দেওয়ার আগে)।

সরকারি বা লিজ প্লটের জন্য ঋণ আবেদনের সাথে যে প্রমাণাদি জমা দিতে হবে, সেগুলো হচ্ছে- প্লটের বরাদ্দপত্রের ফটোকপি, দখল হস্তান্তর পত্রের ফটোকপি, মূল লিজের দলিল ও বায়না দলিলের ফটোকপি, ফ্ল্যাট ক্রয়ের রেজিস্ট্রি করা বায়না চুক্তি, ফ্ল্যাটের বরাদ্দপত্র ও ফ্ল্যাটের মালিকানা দলিল (বন্ধক দেওয়ার আগে)।

এছাড়া, উভয় ক্ষেত্রে ঋণ আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে নামজারি খতিয়ানের জাবেদা নকল, হাল সনের খাজনা রসিদ, জমির মালিক কর্তৃক ডেভেলপারের দেওয়া রেজিস্ট্রি করা আমমোক্তারনামা দলিল, জমির মালিক ও ডেভেলপারের সঙ্গে রেজিস্ট্রি করা ফ্ল্যাট বণ্টনের চুক্তিপত্র, অনুমোদিত নকশার ফটোকপি, ফ্ল্যাটের মাটি পরীক্ষার রিপোর্টের ফটোকপি, সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নির্ধারিত ছকে ইমারতের কাঠামো নকশার ফটোকপি ও ভারবহন সনদ, ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্ঘ স্মারক, সঙ্ঘ বিধি ও রিহ্যাবের নিবন্ধন সনদের সত্যায়িত ফটোকপি, ডিজাইন মোতাবেক কাজ করার ব্যাপারে ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের দেওয়া আন্ডারটেকিং, অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণ নাই মর্মে ডেভেলপারের দেওয়া স্ট্যাম্প পেপারে ঘোষণাপত্র, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত কপি, বেতনের সনদপত্র, সত্যায়িত ছবি ও সই। ঋণ নেওয়ার জন্য সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান মনোনীত করার আগে অর্থ বিভাগের গৃহ ঋণ সেলের অনুমতি নিতে হবে। তবে এ কার্যক্রম যখনই বাস্তবায়ন হোক না কেন ব্যয়সহ সব শর্ত গত ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে বিবেচনা করা হবে।

কোনো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু ও দুর্নীতি মামলার ক্ষেত্রে চার্জশিট দাখিল হলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এ নীতিমালার আওতায় তিনি ঋণ গ্রহণের যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না। সরকারি চাকরিতে চুক্তিভিত্তিক, খণ্ডকালীন ও অস্থায়ী ভিত্তিতে নিযুক্ত কোনো কর্মচারীও এ নীতিমালার আওতায় ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন না।

নীতিমালায় হয়েছে, কোনো কর্মচারী ঋণ নেওয়ার পর স্বেচ্ছায় চাকরি ছাড়লে বা বাধ্যতামূলক অবসর, বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত হলে আদেশ জারির তারিখ থেকে ঋণের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য সুদ বাবদ সরকার কোনো ভর্তুকি দেবে না। এ ক্ষেত্রে ঋণের অপরিশোধিত অর্থ সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর পেনশন সুবিধা বা আনুতোষিক সুবিধা থেকে আদায় করা হবে।

ঋণগ্রহীতার মৃত্যু হলে তার পারিবারিক পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা থেকে যতটুকু সম্ভব ঋণ পরিশোধ করা হবে। এর পরও ঋণ পাওনা থাকলে উত্তরাধিকারদের কাছ থেকে তা আদায় করা হবে।

এতে বলা হয়েছে, অর্থ বিভাগের আওতায় গঠিত একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি এ নীতিমালার বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ করবে। এই নীতিমালা বাস্তবায়নে কোনো অস্পষ্টতা দেখা দিলে তা সরকার এবং বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করা হবে।