ইরানি গোলাপ ‘গুলে মুহম্মদী’ মুসলিম সভ্যতার নজির

মোহম্মদি গোলাপ
নিউজ নাইন২৪, ফিচার ডেস্ক: ইরানি গোলাপের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। নানা প্রকার গোলাপের মধ্যে এক ধরনের গোলাপ আছে যার নাম গুলে মুহাম্মদি বা মুহাম্মদি গোলাপ। এর ঘ্রাণ খুবই মিষ্টি এবং এ দিয়ে উন্নতমানের পারফিউম ও সুরভিত খাবার তৈরি করে স্থানীয় চাহিদা মেটানো হয় ও রপ্তানিও হয়ে থাকে।

বিশেষত আরব দেশসমূহ, মালয়েশিয়া, ভারত, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশে গুলে মুহাম্মদি (মুহাম্মদি গোলাপ) পানি, আতর ও সুরভিত খাবার রপ্তানি হয়ে থাকে। সাধারণত ৩০ কেজি গোলাপের পাপড়ি দিয়ে প্রক্রিয়াকরণের মধ্য দিয়ে ৮০ লিটার গোলাপ পানি উৎপাদিত হয়।

গোলাপ, গোলাপ পানি ও গোলাপ দিয়ে তৈরি নানাবিধ খাবারের জন্য ইরানের কাশান বিশ্বখ্যাত। বসন্তকাল (২১ এপ্রিল থেকে ২১ মে) গোলাপ সংগ্রহ করার উত্তম সময়। তবে বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য মে মাসের শুরু থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অধিকাংশ গোলাপ আহরিত হয়ে থাকে। কিছু কিছু স্থানে সারা বছর গোলাপ পাওয়া গেলেও মূলত বাণিজ্যিক ও স্থানীয়ভাবে বসন্তকালেই গোলাপ তোলা হয়। এপ্রিল থেকেই গোলাপের সৌরভ কাশান ও কামসার থেকে আশেপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

কাশানের বিশ্বখ্যাতি গোলাপ, গোলাপ পানি ও গোলাপ দিয়ে তৈরি নানাবিধ খাবারের জন্য। বসন্তকাল (২১ এপ্রিল থেকে ২১ মে) গোলাপ সংগ্রহ করার উত্তম সময়। তবে বিভিন্ন কাজে ব্যবহারের জন্য মে মাসের শুরু থেকে জুন মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত অধিকাংশ গোলাপ আহরিত হয়ে থাকে। কিছু কিছু স্থানে সারা বছর গোলাপ পাওয়া গেলেও মূলত বাণিজ্যিক ও স্থানীয়ভাবে বসন্তকালেই গোলাপ তোলা হয়। এপ্রিল থেকেই গোলাপের সৌরভ কাশান ও কামসার থেকে আশেপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।
কাশানের গোলাপ উৎসব পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে খুবই প্রিয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে, এমনকি বিদেশ থেকেও পর্যটকরা গোলাপ উৎসবে যোগ দিতে কাশানে আসেন। এ সময় কাশানে অতিরিক্ত প্রায় ৮০,০০০ (আশি হাজার) লোকের সমাগম ঘটে। প্রতি বছর মে মাসের মাঝামাঝি কাশানে গোলাপ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। এ সময় কাশান যেন নববধূর মতো রঙিন হয়ে ওঠে। সেলজুক শাসনামল থেকে এর প্রচলন হয়ে আসছে।

কাশানের গোলাপ বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়। এখানকার গোলাপ উৎপাদন ও গোলাপ পানি ও গোলাপ দিয়ে নানা রকম সুরভিত খাবারের রেওয়াজ সুপ্রাচীন। প্রায় ২৫০০ বছর থেকে এখানকার মানুষ গোলাপের বহুবিধ ব্যবহার করে আসছে। মুসলিম সভ্যতা থেকে গোলাপের নানাবিধ ব্যবহার শিখে উপকৃত হয়েছে হিন্দু-খ্রিস্টানসহ নানা ধর্মের মানুষ। তারাও পরবর্তীতে মুসলমানদের মতো ধর্মীয় কাজে গোলাপ পানি ব্যবহার শুরু করে।

আবে জমজম পানির সাথে মুহাম্মদী গোলাপের প্রক্রিয়াজাত পানি মিশিয়ে পবিত্র কা’বা ঘর ধৌত করা হয়ে থাকে। এখানকার গোলাপ ও গোলাপের সৌরভ মিশিয়ে নানা জাতীয় খাবার, মিস্টান্ন, পারফিউম, প্রসাধনী ও ঔষধ তৈরি করা হয়। গোলাপ পানির সাথে চিনি মিশ্রণ করে সিরাপ তৈরি করা হয়। এছাড়া চা, কফি, আইসক্রিম, হালুয়া, রাইস পুডিং, লাচ্ছি, ফলের জুস প্রভৃতির সাথে গোলাপ মিশিয়ে খাবার তৈরি করা হয়।

গোলাপের প্রক্রিয়াজাতকরণের পরে যে উচ্ছিষ্ট থাকে তা পশুখাদ্য ও জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গোলাপ দিয়ে আধুনিককালে তৈল উৎপাদন আরম্ভ হয়েছে। যা সাধারণত কসমেটিক তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অতীতে স্থানীয়ভাবে হাতে গোলাপ প্রক্রিয়াজাত করলেও আধুনিককালে কাশানে মেশিনের মাধ্যমে কারখানাজাত হয়ে সুবাসিত গোলাপ পৌঁছে যায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, যদিও এখনও প্রাচীন পদ্ধতিতে গোলাপ প্রক্রিয়াজাতকরণ অব্যাহত আছে।

১৯৭৪-৭৫ সাল থেকে বাণিজ্যিকভাবে কাশানে গোলাপ ফুল দিয়ে নানাবিধ সামগ্রী উৎপাদিত হতে শুরু করে। এখন কাশানে গোলাপ ফুলের পণ্য তৈরির জন্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে উঠেছে কাশান ও কামসারে। তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বমানের গোলাপ সুগন্ধি হতে হলে প্রতি ১০০ মিলিলিটারে ৩৫ মিলিগ্রাম বা ৩৩০ পিপিএম থাকতে হয় যা কাশান ও কামসারের মুহাম্মদি গোলাপ থেকে উৎপাদিত হয়ে থাকে। প্রতি বছর প্রায় ৬০০০ টন গোলাপ এখানে উৎপাদিত হয়।