খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণে ‘কঠোর আইন প্রয়োগ দরকার’

নিউজ ডেস্ক:  খেলাপি ঋণ বা নন-পারফরমিং লোনকে ব্যাংক শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী রাহেল আহমেদ। খেলাপি ঋণকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ‘আরেকটু কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ হওয়া দরকার’ বলে মনে করেন তিনি।

আজ বুধবার দুপুরে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেডের ২৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
এ বছর ব্যাংক শিল্পের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে রাহেল আহমেদ বলেন, ‘এই শিল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নন-পারফরমিং লোন। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে শুরু করে অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী-সবাই এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন এবং সতর্কতামূলক পদক্ষেপ আছে। ভবিষ্যতে এ বিষয়টাকে যাতে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা যায়, যতখানি সম্ভব সবাই কাজ করছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় পরামর্শ চাওয়া হচ্ছে, আমরা সেটা দিচ্ছি। আমি ইন্ড্রাস্টির পক্ষ থেকে বলব-আমাদের আইনগত যে কাঠামো আছে, অর্থনীতি আদালত আছে সেই অর্থঋণ আদালতের যে পরিধি, সেটাকে আরও বাড়ানো। আজকে যে অবস্থা, সেই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো সময় এসেছে, আরেকটু কঠোরভাবে সেই আইনের প্রয়োগটা হওয়ার দরকার আছে’।

তিনি আরও বলেন, ‘আগামী এক বছর, দেড় বছরে সেটা (খেলাপি ঋণ) কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই দেখবার বিষয়।’

খেলাপি ঋণের বিষয়টা প্রাইম ব্যাংক যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন রাহেল আহমেদ।

দুই শতাংশ পরিশোধ করে খেলাপি ঋণগুলো নিয়মিত করার প্রস্তাব দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তার মতে, ঋণখেলাপিরা সাত শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করবে। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, ঋণখেলাপিরা ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধ করবে।

৯ শতাংশ হারে সুদ আর মোট ঋণের দুই শতাংশ পরিশোধ করে নিয়মিত করা খেলাপিদের ফেস করার উদ্যোগ আপনাদের জন্য কতটা সহনীয় বলে মনে করেন-জানতে চাইলে রাহেল আহমেদ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ওই সার্কুলার আমরা পাইনি। যেহেতু এখন পর্যন্ত সেই পলিসি আমাদের হাতে আসেনি লিখিতভাবে, আমার মনে হয় না-এ ব্যাপার আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে। উনি একটা পরিকল্পনার কথা বলেছেন। আমি নিশ্চিত এ বিষয়ে বিশদভাবে আমাদের সঙ্গে আলাপ হবে। আমরা এ বিষয়ে গাইডেন্স পাব। আমার বিশ্বাস, সেই গাইডেন্সটা আমাদের সবার মতামতের ভিত্তিতে সর্বজনবিদিত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী সরকারি ব্যাংকের ক্ষেত্রে ডিপোজিট ৬০ শতাংশ এবং ইন্টারেস্ট ৯ শতাংশ ঘোষণা করেছিলেন। এজন্য সরকারি তহবিল থেকে ১০০ কোটি টাকা বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে পরিশোধ করারও অনুমতি দিয়েছেন তিনি। সে তহবিলগুলো আপনারা পাচ্ছেন কি না, আমরা জানি না। তবে সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, এই তহবিলগুলা বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে দেয়া হচ্ছে। প্রাইম ব্যাংক ৬ ও ৯ ডিপোজিটের মধ্যে থাকতে পারবে কিনা-জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন, ‘আপনি ৯ ও ৬ শতাংশের কথা বলেছেন। মার্কেট নিজেই রিট্রেক্ট করে, মার্কেট নিজেই এটাকে ঠিক করে দেয়। ৯, ৮, ৭, বা ৬-এ রকম কোনো পয়েন্ট ধরে কাজ করা কঠিন হয়ে যায়। আমরা সবাই চেষ্টা করছি, যতখানি সম্ভব একটা গ্রাহকবান্ধব ব্যাংকিং ব্যবস্থা উপহার দেয়ার জন্য। আমাদের যে গ্রাহকরা আছে, তাদের যাতে কোনো কষ্ট না হয়, সেটা আমরা সবসময় চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করব ৯ কেন, আরও কমে যদি দেয়া যায়, সেটা দেয়ার চেষ্টা করব। সেক্ষেত্রে ডিপোজিটের রেটটা মার্কেটে যদি কমে আসে, তাহলে অবশ্যই আমরা গ্রাহকদের সরবরাহ করতে পারব।’

‘আমরা মনে করি, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। এক দিনে বা এক রাতে কোনো কিছু হয় না। আমি নিশ্চিত, সবাই এটা বোঝেন। আমরা যারা স্টেকহোল্ডার আছি, সবাই মিলে কাজ করলে এটা না পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নাই’, যোগ করেন রাহেল আহমেদ।

প্রফিটের গ্রোথ যাতে সাসটেইনেবল (স্থিতিশীল) থাকে, মানসম্পন্ন লাভ যেন ওখানে আসে, সেটার দিকে প্রাইম ব্যাংক নজর দিচ্ছে বলেও জানান এই প্রধান নির্বাহী।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. গোলাম রব্বানী, মো. তৌহিদুল আলম খান ও মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান চৌধুরী প্রমুখ।