খালেদা জিয়া কারাগারে রাজার হালে আছে: প্রধানমন্ত্রী

সাড়ে ১১ লাখ কৃষককে পুনর্বাসনে ৯৮ কোটি টাকার সহায়তা

নিউজ ডেস্ক : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে নিয়মিত সুবিধার বাইরেও সুবিধা ভোগ করছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ব্যথার সমস্যা পুরনো। আগেও তাকে মাঝে-মধ্যে হুইল চেয়ারে বসতে হয়েছে। বরং খালেদা জিয়া কারাগারে রাজার হালে আছেন।’ বুধবার (৪ ডিসেম্বর) গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

খালেদা জিয়াকে সন্ত্রাস-দুর্নীতির ‘গডমাদার’ আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯১ সালে বিএনপি যখন সরকারে আসে, তখন আমেরিকায় খালেদা জিয়ার নিক্যাপ রিপ্লেস করা হয়, অপারেশন হয়। পরবর্তী সময়ে আবার সৌদি আরবে করা হয়। তিনি যখন বিদেশে শপিং মলে শপিং করতেন, হুইল চেয়ারে বসে শপিং করতেন। সেই চেয়ার তার দলের নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালু ঠেলতেন আর তিনি শপিং করতেন। এমনকি হজের সময়ও ফালুকে খালেদা জিয়ার হুইল চেয়ার ঠেলতে দেখা গেছে। কাজেই বিএনপি চেয়ারপারসনের হুইল চেয়ারে বসা তো নতুন কিছু না। সেটা বহু যুগ ধরে জাতি দেখে আসছে।’

সরকারপ্রধান বলেন, ‘পৃথিবীতে শুনিনি সাজাপ্রাপ্ত আসামির জন্য আবার কাজের বুয়া থাকে। মানুষ এমনি কাজের বুয়া পায় না, আর খালেদা জিয়ার জন্য স্বেচ্ছায় একজন কারাবরণ করছে, খালেদা জিয়ার সেবা করার জন্য। এই বাড়তি সুবিধা পর্যন্ত তাকে দেওয়া হচ্ছে। সরকারের কোনও প্রতিহিংসা থাকলে তিনি এই সুবিধা পেতেন না।’ তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কোনও দেশে এই দৃষ্টান্ত কেউ দেখাতে পারবে না যে, কোনও সাজাপ্রাপ্ত আসামি তার সেবার জন্য কাজের বুয়া রাখতে পারেন। কিন্তু খালেদা জিয়া সেটা পাচ্ছেন।’

খালেদা জিয়ার পরিবার খুনির পরিবার
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ দেশে সন্ত্রাসের গডমাদার হচ্ছেন খালেদা জিয়া। বাংলা ভাই সৃষ্টি থেকে শুরু করে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা, হরতাল-অবরোধ ডেকে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা, এতিমের টাকা চুরি করা—হেন কোনও অপকর্ম নেই, যা তিনি করেননি।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘ভোট চুরি, মানুষ হত্যা, আগুন দিয়ে পোড়ানো, দুর্নীতি, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ মানুষ হত্যা অর্থাৎ জিয়া যেমন খুনি ছিল, খালেদা জিয়াও আরেক খুনি, তার ছেলেও খুনি। এই পরিবারটাই খুনের পরিবার। মানুষ খুন করা, দুর্নীতি করা, অর্থ আত্মসাৎ করা ছাড়া আর কিছুই জানে না তারা।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জন্য অনেকের মায়াকান্না দেখি। খালেদা জিয়া যে মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করলো, তার হুকুমে কত মায়ের কোল খালি হয়েছে, কত বোন বিধবা হয়েছে, কত বোন আগুনে পুড়ে বিকৃত চেহারা হয়েছে, সেটা লোকেরা ভুলে যায় কেন? ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, আইনজীবী—কেউ তো বাদ যায়নি। দরদটা যারা দেখায়, তাদের আবার আগুনে পোড়া মানুষের চেহারাটা একটু দেখে আসা উচিত।’

অবাধ বাকস্বাধীনতা আছে
দেশে বাকস্বাধীনতা নেই বলে যারা অভিযোগ করেন, তাদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে মানুষ কথা বলার অবারিত সুযোগ পাচ্ছেন! টকশোতে গিয়ে মিষ্টি-টক সব কথা বলে যাচ্ছেন। তারপরও এ সরকারের আমলে কথা বলার অধিকার নেই! আসলে এ ধরনের পরচর্চা করা এটা তাদের অভ্যাস।’

আওয়ামী লীগের হাত ধরেই উন্নতি

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই দেশের মানুষের উন্নতি হয়েছে দাবি করে দলটির সভাপতি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ আসার আগে যদি এতই উন্নতি হয়েছে, তাহলে দারিদ্র্যের হার কমেনি কেন? প্রবৃদ্ধির হার বাড়েনি কেন? মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি হয়নি কেন? একমাত্র আওয়ামী লীগ যখন সরকারে এসেছে, তখন এসব হয়েছে। আমরা ৮ দশমিক ১৩ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছি। মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করতে পেরেছি। গ্রামগঞ্জে মা বোন থেকে শুরু করে প্রত্যেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে। দেশ সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’

জাতীয় কমিটির সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কাজী জাফরউল্যাহ, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানসহ জাতীয় কমিটি ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্যরা।

প্রসঙ্গত, প্রত্যেক সাংগঠনিক জেলা থেকে একজন করে প্রতিনিধি, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, দলের সভাপতি মনোনীত ২১ জন সদস্য ও উপর্যুক্তভাবে নির্বাচিত ও মনোনীত সদস্যদের নিয়ে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি গঠিত। জাতীয় কমিটির সদস্যের সংখ্যা ১৮০ জন। এরমধ্যে ৮১ জন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ সদস্য, ৭৮ জন সাংগঠনিক জেলা থেকে মনোনীত এবং বাকি ২১ জন দলের সভাপতি মনোনীত।