খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতে যেতে পারে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক :
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর পূর্ণ হবে। গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা পেয়ে তাকে জেলে যেতে হয়। দিনটিকে কেন্দ্র করে সারাদেশে কর্মসূচি দেবে বিএনপি। এর পাশাপাশি এদিন খালেদা জিয়ার সঙ্গে জেলখানায় সাক্ষাৎ করতে পারেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এ মাসের শেষের দিকে ড. কামাল হোসেন দেশে ফিরে এলে খালেদা জিয়ার সঙ্গে সম্ভাব্য সাক্ষাতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে ৫ দলীয় এই রাজনৈতিক জোট। ফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এ বিষয়ে তাদের ইতিবাচক মনোভাবের আভাস পাওয়া গেছে।
বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার কারাবাসের বছরপূর্তিতে অবশ্যই কর্মসূচি থাকবে। এ কর্মসূচির স্থায়িত্ব হতে পারে ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত। কর্মসূচির মধ্যে থাকবে বিক্ষোভ, অনশন, দোয়া মাহফিল এবং জেলখানায় গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করা। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি আইনজীবীদেরও বৈঠক হবে। ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হবে কী ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সাজাভোগ করছেন বেগম জিয়া। তার কারাবরণের এক বছর উপলক্ষে কী কর্মসূচি দেবো, তা এখনও ঠিক হয় নাই। বৃহস্পতিবার আমাদের বৈঠক আছে, সেখানে ঠিক হবে।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জানিয়েছেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশের সময় যে ৭ দফা দেওয়া হয়েছিল, সেখানে খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ছিল। সেদিক থেকে খালেদা জিয়ার কারাবাসের এক বছর উপলক্ষে তাকে দেখতে যাওয়া স্বাভাবিক। ড. কামাল হোসেন সিঙ্গাপুর থাকায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। তবে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা নিজেদের মধ্যে আলোচনায় ইতিবাচক মনোভাবের কথা জানিয়েছেন।
ঐক্যফ্রন্টের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা  জানান, সরকার বাধ না সাধলে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা নিশ্চয়ই খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থাও বেশি ভালো না। শরীর ভালো থাকলে কামাল হোসেন নিজেও দেখা করতে যেতে পারেন।
গণফোরামের একজন নেতা জানান, গত বছরের ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশে কামাল হোসেন বলেছিলেন ‘বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়ার কথা না, এটা তো হওয়ার কথা। ওর মুক্তি অবশ্যই হোক।’ এছাড়া তিনি খালেদা জিয়ার মামলায় হাইকোর্টে জামিন হওয়ার পর বিবৃতিও দিয়েছেন।
ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক বৈঠকে তো এ বিষয়টি কেউ তোলেননি। তবে পরস্পরের মধ্যে আলোচনা চলছে। বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়টি ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফার অন্যতম। অনুমতি মিললে তাকে দেখতে যেতে বাধা কোথায়? বসাবসি হচ্ছে না, বৈঠক হলেই বিষয়গুলো উঠে আসবে।’
স্টিয়ারিং কমিটির আরেক সদস্য জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন  বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে হয়তো নেতাদের মধ্যে আলোচনা চলছে। আমরা এখনও বসতেই পারিনি। কামাল হোসেন দেশে ফিরে এলে ঐক্যফ্রন্ট কী করবে, এটা নিয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত হবে।’
অসুস্থ থাকায় এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেননি গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘ম্যাডামের কারাবরণের এক বছর উপলক্ষে আমরা যাবো। ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও নিশ্চয়ই যাবেন। আমরা তো নীতিগতভাবে এ বিষয়ে একমত।’
খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘ম্যাডামের শারীরিক অবস্থা বেশি ভালো না। হাঁটুর ব্যথা আছে। তার মামলাগুলোর বিষয়ে আমরা বসেছি। বৃহস্পতিবার আবারও বৈঠক হবে।’