কোষাগারে ৩০,০০০ কোটি নেয়ার আশা সরকারের

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত ইত্যাদি সংস্থার তহবিলের একাংশ সরকারি কোষাগারে নিয়ে যাওয়ার যে আইন গত বছরের সেপ্টেম্বরে মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছিল, গত মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে তা বিল আকারে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিলে ৬১টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে এ কথা জানা গেছে।

সূত্রগুলো জানায়, অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে আইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। এই আইন নিয়ে কিছু বলার থাকলে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে তা সংসদকে জানাতেও বলা হয়েছে। সংসদ পাস করলে আইনটি হয়ে যাবে।

আইন হওয়ার পর সংস্থাগুলো সরকারি কোষাগারে টাকা জমা দিতে বাধ্য হবে। গত জুন পর্যন্ত সংস্থাগুলোর কাছে ২ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা জমা রয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংক অর্থ বিভাগকে জানিয়েছিল। অর্থ বিভাগ প্রাথমিকভাবে আশা করছে, এসব সংস্থা থেকে সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকা নিজের কোষাগারে নিতে পারবে। সংসদে বিল আকারে পাঠানোর আগে খসড়া তৈরি, মন্ত্রিসভার অনুমোদন, আইন মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষা (ভেটিং) এবং রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের অনুমোদনও করিয়ে এনেছে অর্থ বিভাগ।

প্রস্তাবিত আইনটির নাম ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহের তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান আইন, ২০১৯’। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত সারসংক্ষেপে বলা হয়েছিল, আইনটি প্রণয়ন করা হলে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ও সুদ পরিশোধ ব্যয় কমবে।

যেকোনো আইনের খসড়া তৈরির আগে আন্তমন্ত্রণালয়ের বৈঠক ডাকা হলেও এ ক্ষেত্রে তা হয়নি বলে বিশেষজ্ঞরা সমালোচনা করছেন। ব্যাংকাররাও বলছেন, এই আইন কার্যকর হলে ব্যাংক খাতে সংকট বাড়বে। কারণ, তখন ব্যাংক থেকে টাকা চলে যাবে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে। অন্যদিকে ব্যাংক খাত তারল্যসংকটে ভুগলে তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে পুঁজিবাজারেও।

তবে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার বলেন, অর্থমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে সংস্থার নেওয়া তহবিলের অন্তত অর্ধেক বেসরকারি ব্যাংকে স্বল্প সুদে রাখা হবে। এটা হলে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেওয়া সহজ হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, গত জুন পর্যন্ত সাতটি খাতের সংস্থাগুলোর কাছে ২ লাখ ১৮ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকা রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি অ-আর্থিক যেমন বিপিসির মতো ৭১টি সংস্থার জমা ১ লাখ ৩৩ হাজার ১৫৫ কোটি; রাজউক, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো ১২৮টি স্বায়ত্তশাসিত ও আধা স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার ৪১ হাজার ৫২৯ কোটি এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, খাদ্য অধিদপ্তর ইত্যাদি ৫১টি দপ্তরের জমা আছে ২৪ হাজার ৬৫৪ কোটি টাকা।

এ ছাড়া স্থানীয় কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ ইত্যাদি সংস্থার ৬ হাজার ৮৯৬ কোটি; জীবন বীমা করপোরেশনের মতো আরও কয়েকটি সংস্থার ৬ হাজার ৩১৪ কোটি; হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশনের মতো কয়েকটি সংস্থার ৪ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা জমা আছে।