কোরআনের অনুবাদ গ্রন্থগুলোর ‘ভুল’ সংশোধনের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

কোরআনের বাংলা অনুবাদ গ্রন্থগুলোর ভুল সংশোধন ও ব্যাখ্যার ভিন্নতা পরিহার করে অভিন্ন রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এই নির্দেশ অনুযায়ী ইতোমধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সংশোধনের কাজ শুরু করেছে। শনিবার (২৮ এপ্রিল) দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল এ তথ্য জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক বলেন, ‘কোরআনের অনুবাদ যতটুকু সম্ভব নিয়মের মধ্যে আনা যায়, তাতে গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। আমরা প্রায়  ৮০টির মতো অনুবাদ গ্রন্থ সংগ্রহ করেছি।’

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রসঙ্গে সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, ‘‘গত ১৭ মার্চ টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজার জিয়ারত করতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই  সময় তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লাইব্রেরিতে গিয়েছিলেন। সেখানে কোরআনের অনুবাদ দেখে তিনি টুঙ্গিপাড়ায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের লাইব্রেরিতে দায়িত্বে থাকা একজন উপ-পরিচালককে বলেছেন, তার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে কোরআনের অনেক অনুবাদ গ্রন্থ আছে। সেসব গ্রন্থের অনেক  জায়গায় একই আয়াতের বিভিন্ন রকমের ব্যাখ্যা আছে। এগুলো প্রধানমন্ত্রী সব জমিয়ে রেখেছেন। তিনি ওই উপ পরিচালকে বলেছেন, ‘আপনি মহাপরিচালককে বলবেন, আমাদের দেশের অনুবাদের যদি ভুল-ত্রুটি থাকে, এটা ঠিক না।’’ এটা কিভাবে সিসটেমের মধ্যে আনা যায়, আলেমদের নিয়ে যেন সেই সংশোধনের কাজটিও আমি করি, সে বিষয়েও তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন।’’

আলেমরা বলেন, পবিত্র কোরআনের বাংলায় অনুবাদগ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ১৫টি। বিভিন্ন জনের অনুবাদ করা এসব গ্রন্থের অন্তত তিন ধরনের ভুল থাকার আশঙ্কা রয়েছে।

সোলাকিয়া ঈদগাহের খতিব মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে কোরআনের বাংলা অনুবাদগ্রন্থ প্রায় ১৫টি আছে। এগুলো তাফসির ছাড়া।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোরআনের অনুবাদগ্রন্থে দুই ধরনের ত্রুটি থাকতে পারে। একটি হচ্ছে, সত্যিকার অর্থেই ত্রুটি। যেমন, আলহামদুলিল্লাহ। এর অর্থ সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। এখানেই কেউ ভুল করলে, সেটা সংশোধন করতে হবে।’

ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ বলেন, ‘আরেকটি ত্রুটি হচ্ছে, মুদ্রণজনিত ত্রুটি। ছাপাখানায় ভুল হয়েছে। এগুলোও সংশোধন করতে হবে।’

বিশিষ্ট এই ইসলামী চিন্তাবিদ বলেন, ‘এই দুই ধরনের ত্রুটির বাইরে আরেকটি হচ্ছে উপলব্ধিগত পার্থক্য। একজন লেখক হয়তো একভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, আরেকজন অন্যভাবে। সেক্ষেত্রে এই উপলব্ধিগত পরিবর্তনের বিষয়ে অবশ্যই লেখকের অনুমতি নিয়ে পরিবর্তন করা যেতে পারে। কিন্তু লেখকের অনুবাদ বদলানো যাবে না।’

ইফাবাসূত্র জানায়, ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর তৎপরতা শুরু করেছে। প্রায় মাসখানেক ধরেই এ কাজটি চলছে প্রতিষ্ঠানটির অনুবাদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে। এরপর অনুবাদ বিষয়ে অভিজ্ঞদের কাজে লাগানো হবে এই ত্রুটি সারানোর কার্যক্রমে।

এ বিষয়ে সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশের  আলোকে যারা অনুবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের নিয়ে কাজটি শুরু করেছি একমাস আগে থেকেই। তাদের সংশোধনী পাওয়ার পর সিনিয়রদের একটি গ্রুপ করে  আবার যাচাই-বাছাই করবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি নির্দেশ ছিল,  এই অনুবাদ যেন ভবিষতে যতটুকু সম্ভব ত্রুটিমুক্ত থাকে, সেজন্য নিয়ন্ত্রণ-প্ল্যাটফর্ম করা যায়, রেগুলেটরি করা যায়। তবে এটি করতে সময় লাগবে।  কারণ এদেশের আলেমদের মধ্যে বিষয়টির ওপর বার্তা দিতে হবে। এই কাজটি পরে করবো, আপাতত ভুল সংশোধন নিয়ে কাজ হবে।’