কৃষিপণ্য পরিবহনে টোল আদায়ে ৩ সংস্থা!

পার্বত্য সংবাদদাতা: খাগড়াছড়িতে কৃষিপণ্য পরিবহনের পর জেলা থেকে বের হওয়ার আগে টোল দিতে হয় তিন ধাপে। সমতলের জেলাগুলোতে কোথাও কোথাও পৌরসভা এ ধরনের ট্যাক্স বা টোল আদায় করে থাকলেও সেখানে প্রতি গাড়ি ফল ফসল পার করতে তিনবার তিন ধরনের টোল কর্তৃপক্ষের মুখোমুখি হতে হচ্ছে খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলার কৃষকদের।
পার্বত্য জেলায় পার্বত্য জেলা পরিষদ, পৌরসভা ও বাজার ফান্ড (পার্বত্য জেলায় বাজার ব্যবস্থাপনা করার কাজে দায়িত্ব প্রাপ্ত) নামক তিনটি পৃথক সংস্থা এসব টোল আদায় করছে। এর ফলে কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে, বাজারে প্রতিযোগিতামূলক দামে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ছেন তারা।

দীর্ঘদিনের এই সমস্যাটির ওপর এবার নজর দিয়েছে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন। অতিরিক্ত টোল আদায়ের নামে কৃষকদের হয়রানি কমাতে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোসহ সমস্যাটি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হয়েছে। এছাড়াও পরিচালিত হচ্ছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। পৌরসভা ও জেলা পরিষদের বিভিন্ন টোল কেন্দ্রে সরাসরি অথবা ছদ্মবেশে গিয়ে কৃষকদের অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় গত তিন-চার দিনে প্রায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

পৌরসভা ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অতিরিক্ত ট্যাক্স-টোল আদায়ের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে চিঠি পাঠানোর কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট মহল জানায়, সমতল জেলাতে শুধুমাত্র পৌরসভাকে ট্যাক্স-টোল দিতে হলেও পার্বত্য জেলায় পার্বত্য জেলা পরিষদসহ তিনটি পৃথক সংস্থাকে টোল দিতে হয় যা অগ্রহণযোগ্য। এ কারণে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই এ বিষয়ের উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি এবং এই বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা চেয়েছি।

কৃষকরা জানান, খাগড়াছড়ি হতে বাইরের জেলাগুলোতে যাওয়া প্রতি ট্রাক ফলের গাড়িতে পৌরসভাকে তিন থেকে ৬ হাজার টাকা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদকে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা এবং বাজার ফান্ডকে দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ট্যাক্স-টোল দিতে হয়। আবার অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংস্থাগুলো আদায়কৃত ট্যাক্স-টোলের বিপরীতে রশিদ দেয় না। প্রথমদিকে প্রশাসনসহ নানা কর্তৃপক্ষ আমাদের অভিযোগগুলো আমলে না নিলেও তারা বিভিন্নভাবে খোঁজ খবর নিয়ে এর সত্যতা পেয়েছেন। এখন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরিমানাও করছেন। এতে কৃষকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে।

জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি পার্বত্য জেলার কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। পৌরসভা ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদকে কৃষিপণ্যের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত টোল মওকুফ অথবা নামমাত্র টোল নির্ধারণ করে পণ্যের অবাধ পরিবহন নিশ্চিত করতে খাগড়াছড়ি পৌরসভাকে চিঠি দিয়েছেন কৃষি বিপণন অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউছুফ।

ওই চিঠিতে মহাপরিচালক আরও উল্লেখ করেন, খাগড়াছড়ি পৌরসভা ফলমূলসহ কৃষিপণ্য পরিবহনে ট্রাক প্রতি ৩ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত টোল আদায় করছে। এতে বিপণন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় একদিকে কৃষকেরা যেমন নায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি ভোক্তারা বেশি দামে আমসহ কৃষিপণ্য ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছে। পাশাপাশি অন্য জেলার ব্যবসায়ীরাও ফলমূল ও কৃষিপণ্য ক্রয়ে নিরুৎসাহিত হচ্ছে যা প্রকারান্তরে ফলচাষীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে।