কুরবানির পশু কেনাবেচা দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার কাছে সাভারেই একটি খামার। সেই খামারে ঈদ-উল-আযহার জন্য পশু লালন পালন করা হয়। এবারের ঈদ-উল-আযহার জন্য ১৮টি গরু বিক্রি করার টার্গেট নিয়েছিলেন খামারী।

কিন্তু সরকার আরোপিত লকডাউন তার মধ্যে গভীর দুশ্চিন্তা তৈরি করেছিল। লকডাউন প্রত্যাহার করে পশুর হাট বাসার অনুমতি দেয়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে তার মনে।
“খামারে রেখে যে কুরবানির গরু বিক্রি করবো সেটা হয়নি। আমরা সারা বছর গরু লালন-পালন করি লাভের জন্য। আমাদের অনেক বিনিয়োগ থাকে। এখন লকডাউন উঠে যাওয়াতে আশা করি আমাদের আশা পূরণ হবে,” বলেন তিনি।

সরকার কিছুদিনের জন্য লকডাউন প্রত্যাহার করে বলেছে, ঈদ-উল-আযহায় পশু কেনা-বেচা বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি খুঁটি।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (খামার) জিনাত হুদা বলেন, প্রতি বছর কুরবানির পশু থেকে গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার কোটি টাকার মতো বেচা-বিক্রি হয়। যদি বিক্রি কম হয়, তাহলে তো অর্থনীতির উপর এটি বিরূপ প্রভাব পড়বেই।”

বাংলাদেশ প্রাণী সম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট-এর মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ব্রাহমা জাতের গরুর মাধ্যমে গোশত উৎপাদনে পদক্ষেপ এবং গরু মোটাতাজা করণ প্রযুক্তির মাধ্যমে সংকট সামাল দিয়েছে বাংলাদেশ।

পারভীন মোস্তারী বলেন, আমরা গরু মোটাতাজাকরণ প্রযুক্তির দিকে নজর দিয়েছিলাম। তিন থেকে চার মাস বয়সী গরুকে বিশেষ কিছু খাবার নিয়মমতো দিলে গরু দ্রুত মোটা তাজা হয়। এটা বিজ্ঞানসম্মত বিষয়। মানুষ আগে খুব অযতœ-অবহেলায় গরু লালন-পালন করতো। কিন্তু মোটা-তাজা করার প্রযুক্তি যখন ছড়িয়ে গেল তখন অনেক উদ্যোক্তা তৈরি হলো।”

কুরবানীতে গরু-ছাগল বিক্রি এটি এখন বাংলাদেশের গ্রামের অর্থনীতির অন্যতম ভিত হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইসমত আরা বেগম গ্রামীণ অর্থনীতি এবং ঈদ-উল-আযহার পশু বিক্রি নিয়ে গবেষণা করেছেন।
তিনি বলছেন, গবাদি পশু বিক্রি গ্রামের অধিকাংশ মানুষের হাতে নগদ টাকার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়।

অধ্যাপক ইসমত আরা বলেন, গরু বিক্রি থেকে খামারিরা একটা আয় পায়। সব খরচ বাদ দিয়েও একটি গরুতে অন্তত হাজার দশেক টাকা থাকে। গ্রামের একটি পরিবারের প্রতিদিনের যে প্রয়োজন সেটি অন্যান্য শস্যের মাধ্যমে পূরণ হয়। কুরবানির পশু বিক্রি থেকে তারা একটি থোক টাকা পায়। এর মাধ্যমে তারা সারা বছর নগদ টাকার চাহিদার কিছু অংশ পূরণ করে।

গবেষকরা বলছেন, ঈদ-উল-আযহার পশু বিক্রির জন্য যে যত বেশি বিনিয়োগ করবে সে তত বেশি লাভ পাবে। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এই বিনিয়োগ করা সম্ভব নয়। আবার ঝুঁকিও রয়েছে।

একজন খামারি বলেন , কুরবানির বাজারে যেসব গরু ৭০ থেকে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয় সেগুলো চার মাস আগে কেনে খামারিরা। প্রান্তিক খামারিরা চার মাস করে বছরে তিনটা সার্কেল করে। এটা নির্ভার করে আপনি কি ছোট গরু বিক্রি করবেন নাকি বড় গরু বিক্রি করবেন?

শুধু গবাদি পশু কেনা-বেচা নয়, ঈদ-উল-আযহাকে কেন্দ্র করে পশুর চামড়া ব্যবসাও অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।

চামড়া ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন বলছেন, বাংলাদেশে সারা বছর যত চামড়া বাজারে আসে তার ৬০ শতাংশই আসে এই ঈদের সময়। এই চামড়াকে কেন্দ্র করে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়।

ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলছেন, ঈদ-উল-আযহার সময় যেসব পশু কুরবানি দেয়া হয় সেগুলো খুব যতেœ লালন পালন করা হয়। সেজন্য দেখা যায়, চামড়ার মানও ভালো থাকে।

প্রাণী সম্পদ বিশেষজ্ঞ এবং অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ঈদ-উল-আযহার জন্য গড়ে উঠা পশুর খামারগুলো বাংলাদেশের গ্রামের অর্থনীতিতে গতি এনেছে।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করে বের হয়ে অনেকে এখন এসব খামারের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রেও এ খাত বড় ভূমিকা রেখেছে বলে বলছেন অর্থনীতিবিদরা।