কাশ্মীর ব্যর্থতার জন্য সৌদি আরব ও ওআইসিকে কেন দায়ী করছে পাকিস্তান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতীয় আগ্রাসনের মুখে ইসলামাবাদ চাচ্ছে কাশ্মীরী মুসলিমদের দুর্দশা মোচনে মুসলিম দেশগুলো আরো কিছু করুক। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পাকিস্তানের নিজের সাড়াই পর্যাপ্ত নয়।

ভারতীয় উপমহাদেশে ৫ আগস্ট ছিল উত্তেজনাকর দিন। হিন্দু ধর্মীয় উগ্র স্লোগানের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অযোধ্যা নগরীতে বিরোধপূর্ণ পবিত্র স্থানে একটি মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে।

ভিডিও ফুটেজ ও ফটোগ্রাফে মোদিকে মাটিতে তার মাথা ঠেকাতে ও অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায়। একসময় ষোড়শ শতকের বাবরি মসজিদের স্থানে এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হচ্ছে।

হিন্দু চরমপন্থীরা ১৯৯২ সালে মসজিদটি ধ্বংস করেছিল। এর ফলে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় শত শত লোক, প্রধানমত মুসলিম, নিহত হয়। ভারতীয় মুসলিমরা এর বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে অংশ নেয়। গত বছর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এটি হিন্দুদের হাতে তুলে দেয়।

কেবল রামের নামে নির্মাণাধীন এই মন্দিরের কারণেই ৫ আগস্ট আলোচিত নয়। এই দিনটি ছিল ভারত শাসিত কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিলের প্রথম বর্ষপূর্তি।

করাচিভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ ড. শায়েস্তা তাবাসসুম বলেন, মূলত ঘটনা দুটি মিলে গেছে। ভারত এটা বোঝাতে চাইছে যে তারা আর কাউকে ভয় পায় না। পাকিস্তানের সাড়া প্রদানে ঘাটতি থাকার প্রেক্ষাপটে এমনটা ঘটছে। এমনকি কাশ্মীর ইস্যু মোকাবেলা করার জন্য পাকিস্তানের সুনির্দিষ্ট নীতি আছে কিনা তাও জানি না।

ভ্রাতৃত্ববোধ আর নেই

এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরে মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রশ্নে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) ও সৌদি আরবের প্রতিক্রিয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন।

তিনি একটি টিভি টকশোতে উর্দুতে বলেন, আমি শ্রদ্ধার সাথে ওআইসিকে বলছি যে পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের একটি সভা আয়োজন আমাদের প্রত্যাশা। আপনি যদি তা ডাকতে না পারেন তবে আমি আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে বলব ইসলামি দেশগুলোর একটি সম্মেলন ডাকার জন্য, যাতে আমরা কাশ্মীর ইস্যুতে আমাদের অবস্থান এবং নির্যাতিত কাশ্মীরীদের সমর্থনে আমরা বলতে পারি।

টকশোয়ের সঞ্চালক যখন বলেন যে এর মানে এই যে সৌদি আরবকে ছাড়াই এগিয়ে যেতে চাইছেন, এর জবাবে কোরেশি বলেন, ইসলামাবাদ তার তেল-সমৃদ্ধ আরব পৃষ্ঠপোষককে ‘নিয়ে বা তাকে ছাড়াই’ এগিয়ে যাবে।

পরের দিন পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর মন্ত্রীর বক্তব্য সমর্থন করে বলে যে, এতে পাকিস্তানি জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে।

পাকিস্তান কয়েক মাস ধরে জেদ্দাভিত্তিক ৫৭ জাতির ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলন আয়োজনের আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু সৌদি আরব তা আটকে দিচ্ছে।

কোরেশির মন্তব্যের সময়েই পাকিস্তান রিয়াদকে এক বিলিয়ন ডলার ঋণ নির্ধারিত সময়ের আগেই শোধ করে দিয়েছে। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি পূরণের জন্য কয়েক বিলিয়ন ডলার দিয়েছিল সৌদি আরব।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষজ্ঞ রুপার্ট স্টোন বলেন, পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে ওআইসি কাঠামোর বাইরেও সভার আয়োজন করতে পারে। তিনি বলেন, গত বছর মালয়েশিয়ায় মুসলিম নেতাদের বৈঠকটি হতে পারে একটি বিকল্প প্রয়াসের উদাহরণ।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ইমরান খান কুয়ালামপুরে মুসলিম নেতাদের নিয়ে আয়োজিত বৈঠকে সৌদি আরবের চাপে সরে গিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছিলেন ইমরান খান।

ওই বৈঠকে ইরান, মালয়েশিয়া, কাতার ও তুরস্কের নেতারা সমবেত হয়েছিলেন কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের প্রতি প্রকাশ্যে সমর্থন দিতে।

একই সময় সৌদি আরব ও আমিরাত মোদি সরকারের সাথে তাদের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছিল।

গত বছর কাশ্মীরের মর্যাদা পরিবর্তনের পর সৌদিরা নীরবতা পালন করেছিল, আর আমিরাত ভারতের অবস্থান সমর্থন করে বলেছিল, এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।

আবু ধাবির ক্রাউন প্রিন্স জায়েদ আর নাহিয়ান এর মাত্র কয়েক দিন আগে মোদিকে ওই দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পদকে ভূষিত করেন।

স্টোন বলেন, কুয়ালামপুর সম্মেলন দৃশ্যত কাশ্মীর প্রশ্নে আরো সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য ওআইসির প্রতি চাপ সৃষ্টি করেছিল।

পাকিস্তানের নিজের দায়িত্ব

চলতি সপ্তাহে ইমরান খান পাকিস্তানের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করেছেন। এতে ভারত-অধিকৃত কাশ্মীরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ তাবাসসুম বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, পাকিস্তানের কেন এত সময় লাগল তার সীমানার বিষয়টি প্রকাশ করতে।

তিনি বলেন, গত বছর জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে বক্তৃতার সময়ই ইমরান খান এটি বিশ্বকে দেখাতে পারতেন।

তিনি বলেন, ভারত আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের জন্য সংগ্রামরত কাশ্মীরীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত তার পক্ষে নিয়ে নিতে পেরেছে। এখন পাকিস্তান যাই করছে না কেন, সেটাকে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

ইসলামাবাদভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক  অব পলিসি স্টাডিজের নির্বাহী সভাপতি খালিদ রহমান বলেন, কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের আরো আগ্রাসী অবস্থাইনস্টিটিউটন গ্রহণ করা উচিত।

তিনি বলেন, কাশ্মীরীরা নিজেরাই ভারতীয় শাসন গ্রহণ করতে রাজি না থাকায় পাকিস্তানের শক্ত অবস্থান আছে। পাকিস্তানের উচিত হবে বিশ্বকে দেখানো যে তাদের হাতে সব বিকল্পই আছে।