কাশ্মীরে ‘ইসরাইল মডেল’ প্রস্তাব, ভারতের সমালোচনা পাকিস্তানের

জম্মু-কাশ্মীরে, নতুন প্রশাসনিক অঞ্চল গড়ার নীল নকশা আঁকছে ভারত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: কাশ্মীরে ‘ইসরাইল মডেল’ প্রয়োগ করা নিয়ে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তার তীব্র সমালোচনা করেছেন পাকিস্তানি কর্মকর্তা ও কাশ্মীরীরা। তারা বলেছেন, এই মন্তব্য কাশ্মীরে ভারতের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলোর আসল প্রকৃতিই উন্মোচন করে দিচ্ছে।

পাকিস্তান সরকার নিউ ইয়র্কে ভারতের কনসাল জেনারেলের মন্তব্যের কঠোর সমলোচনা করেছে। তিনি সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন যে ইসরাইল যেভাবে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন করছে, ভারতের উচিত হবে সেভাবে কাশ্মীরে হিন্দু বসতি স্থাপন করানো।

গত সপ্তাহান্তে কাশ্মীরী হিন্দুস (পণ্ডিত নামেও পরিচিত) আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে কনসাল জেনারেল সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে এমনটা ঘটেছে। ইসরাইলি জনগণ যদি তা পারে, তবে আমাদেরও তা পারা উচিত।

তুরস্কে নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ সাইরাজ সাজ্জাদ কাজি টিআরডি ওয়ার্ল্ডকে বলেন, এসব মন্তব্য কষ্টকর, তবে মোটেই বিস্ময়কর নয়।

তিনি বলেন, অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের ইসরাইলি বসতি স্থাপন প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অক্ষমতার কারণেই দৃশ্যত ভারত একই উপনিবেশিক কৌশল অনুসরণ করছে।

গত আগস্টে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করার পর থেকেই এই ভূখণ্ড নিয়ে অনেক খবর প্রকাশিত হচ্ছে। ভারত সরকার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটির বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে একে দুটি অংশ ভাগ করেছে এবং দুটি অংশকেই কেন্দ্র শাসিত এলাকা বলে ঘোষণা করেছে।

ভারত সেখানে নিরাপত্তা সদস্যদের উপস্থিতিও ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছে। এছাড়া সেখানে কারফিউ জারি করা হয়েছে, যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।

কূটনীতিকের মন্তব্যের জবাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান টুইটে বলেছেন, এটি ভারত সরকারের আরএসএস মতাদর্শের ফ্যাসিবাদী মানসিকতাই ফুটে ওঠেছে।

ইমরান খান ইতোপূর্বে ভারত সরকারকে নাৎসিদের সাথে তুলনা করেছিলেন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে অ্যাডলফ হিটলার হিসেবে অভিহিত করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন যে মোদি চান ভারতের মুসলিমদের শেষ করার মাধ্যমে কাশ্মীরের ‘চূড়ান্ত সমাধান।’

এদিকে কাশ্মীরভিত্তিক সাংবাদিক হিলাল মির টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে বলেন, কনসান জেনারেলের মন্তব্য কেবল কাশ্মীরী মুসলিমদের ওই আশঙ্কাই সত্য বলে প্রতিপন্ন করছে যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা বাতিলের আসল উদ্দেশ্য হলো জনসংখ্যার পরিবর্তন করা।

ভারতের কট্টরপন্থী হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপি সরকারের ইচ্ছা হলো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যে দুই থেকে তিন লাখ কাশ্মীরী পণ্ডিতকে আবার বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করা। তারা কাশ্মীরী বিদ্রোহের কারণে কয়েক দশক আগে পালিয়ে গিয়েছিল।

চলতি বছরের প্রথম দিকে বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক (কাশ্মীরের দায়িত্বপ্রাপ্ত) রাম মাধব বলেছিলেন, ভারত সরকারের ইচ্ছা হলো বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটিতে হিন্দু বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করা।

ম্যাসাচুসেটস কলেজ অব লিবারেল আটর্সের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জুনায়েদের মতে, ভারতীয় কর্মকর্তাদের নতুন পাগলামিতে একটি উপনিবেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার এজেন্ডাই ফুটে ওঠেছে। তারা চাচ্ছে কাশ্মীরের জনসংখ্যায় পরিবর্তন আনতে।

রাষ্ট্রদূত কাজির মতে, ভারত ও ইসরাইল উভয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ঘোষিত আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ঘটাচ্ছে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নীবরতার সুযোগেই ভারত তার উপনিবেশ গর্বকে উৎসাহিত করছে।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে কাশ্মীরী ও ফিলিস্তিনিরা একই ধরনের দুর্দশায় পতিত হয়েছে।

-সাউথ এশিয়ান মনিটর