কাশ্মীরকে এখন আর অগ্রাহ্য করতে পারে না জাতিসংঘ

কাশ্মীরকে এখন আর অগ্রাহ্য করতে পারে না জাতিসংঘ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :  জাতিসংঘে উদ্দেশ্য হাসিলে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত সপ্তাহে কাশ্মীর থেকে অবরোধ তুলে নিতে ভারতকে রাজি করাতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি সনির্বন্ধ বলেছে ।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দেয়া বক্তৃতায় তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, তা করতে ব্যর্থ হলে কাশ্মীরীরা সেখানে মোতায়েন হাজার হাজার ভারতীয় সৈন্যের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠলে দুই প্রতিবেশীর মধ্যে যুদ্ধও লেগে যেতে পারে।

হিন্দু জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৫ আগস্ট মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটির মর্যাদা বাতিল করার পাশাপাশি কারফিউ জারি করেছেন, প্রায় ৪০০০ লোককে গ্রেফতার করেছেন। নির্যাতন ও প্রহার করার মারাত্মক অভিযোগও রয়েছে। ভারত ফোন ও ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করার ফলে লোকজন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

মোদি জাতিসংঘে তার বক্তৃতায় ইস্যুটি নিয়ে কথা না বললেও এর কয়েক দিন আগে হিউস্টনে দেয়া এক বক্তৃতায় বলেছিল যে জনগণকে সমান অধিকার দিতেই সে ওই মর্যাদা বাতিল করেছে।

ইমরান খান তার ওই বক্তৃতার আগে দি টাইমস সম্পাদকীয় বোর্ডকে বলেন, জাতিসংঘ যদি কথা না বলে, তবে কে এ ব্যাপারে কথা বলবে?

তার সম্ভবত ভুল করা এড়িয়ে যেতে হবে। গত কয়েক দশকে বিরোধ মীমাংসায় জাতিসংঘ যে দৃষ্টিভঙ্গি অনুসরণ করেছে, তা বিবেচনা করা হলে বিশ্ব সংস্থার ওপর কোনো আস্থা স্থাপন করা দৃশ্যত ব্যর্থ হবে।

একসময় কাশ্মীরে শান্তি রক্ষার প্রয়াস চালিয়েছিল জাতিসংঘ। নিরাপত্তা পরিষদ ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভ ও বিভক্তির কয়েক মাস পর দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে চেষ্টা করেছিল।

কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন প্রশ্নে জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষক গ্রুপ থাকলেও ১৯৭০-এর দশকে দেশ দুটি যুদ্ধে গেলে তারা পেছনে হটে আসে। ওই সময় দেশ দুটি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতের মতপার্থক্য নিরসন করতে একমত হয়।

কাশ্মীরে বাইরের হস্তক্ষেপ প্রতিরোধ করে আসা ভারতের চাপের কারণে আগস্ট পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর এজেন্ডা উত্থাপিত হয়নি। তবে এবার চীনা সমর্থনপুষ্ট পাকিস্তানের অনুরোধের পর মোদির নিয়ন্ত্রণ দখল নিয়ে আলোচনা হয়। মিডিয়া ও জনসাধারণের আড়ালে হওয়া ওই আলোচনায় অবশ্য অর্জন হয়েছে সামান্যই। পরিষদ এমনকি একটি অভিন্ন বার্তা প্রকাশের ব্যাপারেও একমত হতে পারেনি।

আমেরিকান নেতৃত্বের পতন এবং বিশ্ব শক্তিগুলোর মধ্যে বিভাজন বাড়তে থাকায় জাতিসংঘের দৃঢ়তা গ্রহণ করতে না পারাটা আন্তর্জাতিক কূটনীতির অকার্যকারিতার একটি খারাপ ইঙ্গিত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মধ্যস্ততা করার প্রস্তাব দিলেও স্বৈরতান্ত্রিক মোদির সাথে তার ক্রমবর্ধমান উষ্ণ সম্পর্ক (হিউস্টনে ফ্যান ফেস্টে ট্রাম্প উপস্থিতও হয়েছিলেন) তাকে বলতে গেলে কোনোভাবেই সৎ মধ্যস্ততাকারীতে পরিণত করবে না।

দেশগুলো মোদিকে ছাড়িয়ে গিয়ে ভারতের বিশাল বাজার হারানোর ঝুঁকি নিতে আগ্রহী নয়। পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। ভারতীয় সৈন্যদের ওপর হামলাকারী ও কয়েক দশক ধরে কাশ্মীরকে অস্থির করে রাখা জঙ্গি গ্রুপগুলোকে সমর্থন করে কাশ্মীর প্রশ্নে পাকিস্তান তার অবস্থান নাজুক করে ফেলেছে।

মোদি দাবি করেছে তার দমন অভিযানের ফলে সঙ্ঘাতের অবসান ঘটবে, স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে, কাশ্মীরের উন্নয়ন হবে। কিন্তু মনে হচ্ছে, এতে করে উত্তেজনাই কেবল বাড়বে, কাশ্মীরীদের জীবনে দুর্ভোগ বৃদ্ধি পাবে।

সে অবরোধ তুলে নিয়ে, কাশ্মীর অঞ্চলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার বিভক্তি রেখায় শিথিলতা প্রতিষ্ঠা করে, রাজবন্দিদের মুক্তি দিয়ে, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিপর্যয় এড়াতে পারে। এমনকি ভারতের সুপ্রিম কোর্টও স্বায়ত্তশাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য তাকে নির্দেশ দিতে পারে।

ওইসব আশা প্রায় নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হচ্ছে।

নিরাপত্তা পরিষদের উচিত হবে স্পষ্টভাবে কাশ্মীরে ভারতের নিয়ন্ত্রণ জোরালো করার মোদির নৃশংসতার বিরোধিতা করা। মোদি হয়তো মনে করতে পারে যে তিনি তার নিজের মতো করে এই উত্তপ্ত সঙ্ঘাত নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, কিন্তু নিশ্চিতভাবে তা হবে না।