করোনায় চাকরি হারিয়েছেন ১ কোটি মার্কিন, গত সপ্তাহেই ৬৬ লাখ

যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে আরও ১৮৪৯ মৃত্যু

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনাভাইরাসের কারণে এখন সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। করোনাভাইরাস আঘাত হানার পর এত দ্রুত দেশটিতে ছড়িয়ে পড়েছে, যা কল্পনার চেয়েও অনেক বেশি। মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে দেশটিতে ২ লাখেরও বেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ৫ হাজারেরও বেশি।

তবে, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। ‘পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে’। করোনার কারণে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় আঘাতটি এসেছে তাদের অর্থনীতিতে।

ব্যাপকহারে করোনা ছড়িয়ে পড়ার ফলে পুরো দেশ এখন লকডাউন। এর ফলে দেশটিতে চাকরিহীন কিংবা কর্মহীন হয়ে পড়েছে ১ কোটিরও বেশি মানুষ। বৃটিশ দৈনিক দ্য ডেইলি মেইলের অনলাইন ভার্সনে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে জানানো হচ্ছে, দলে দলে মানুষ চাকরি হারাচ্ছে কিংবা কর্মহীন হয়ে পড়ছে।

সবচেয়ে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, চাকরিহীন কিংবা কর্মহীন হওয়ার হার গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। ২১ মার্চ পর্যন্ত শেষ হওয়া সপ্তাহের হিসেব প্রকাশ করে ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব লেবার। সেখানে দেখা যাচ্ছে ৩.৩ মিলিয়ন (৩৩ লাখ) মানুষ চাকরিহীন অবস্থায় সহযোগিতার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জমা দিয়েছে।

কিন্তু পরের সপ্তাহেই সেই আবেদনের পরিমাণ বেড়েছে দ্বিগুন। অর্থ্যাৎ ২৮ মার্চ শেষ হওয়া সপ্তাহের হিসেবে দেখা যাচ্ছে- মাত্র সাতদিনের ব্যবধানে এই আবেদনকারীর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬.৬ মিলিয়ন তথা ৬৬ লাখ মানুষ। সব মিলিয়ে দুই সপ্তাহেই চাকরিহীন কিংবা কর্মহীন হয়েছে প্রায় ১ কোটি।

অথচ, করোনাভাইরাস পূর্ববর্তী সময়টায় আমেরিকার অর্থনীতি ছিল সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে শক্তিশালী। কর্মহীন হওয়ার পরিমাণও ছিল তাদের গত ৬০ বছরের মধ্যে সর্বমিন্ম; কিন্তু বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে, এখন বিপর্যস্ত অর্থনীতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সামরিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশটি।

মাত্র এক বছর আগে ঠিক মার্চের এই সপ্তাহেই সবচেয়ে বেশি ২ লাখ ১১ হাজার মানুষ চাকরিহীন হওয়ার কারণে সরকারি সুবিধা পেতে সাহায্যের আবেদন করেছিল। এক বছরের মাথায় করোনার ধাক্কায় এক সপ্তাহেই সেটার পরিমাণ দাঁড়ালো ৬৬ লাখে, দুই সপ্তাহে এক কোটিতে।

করোনাভাইরাসে সবচেয় বেশি ক্ষতিগ্রস্থ নিউইয়র্ক। শহরটি পুরোপুরি স্তব্ধ। লকডাউন চলছে প্রথম থেকেই। আক্রান্ত এবং মৃত- দুটোই বেশি এখানে। যার ফলে স্বল্প আয়ের মানুষ যারা, কিংবা বাহারি পণ্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী যারা ছিল তাদের রোজগারের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে।

পুরো আমেরিকায় ৮০ ভাগেরও বেশি মানুষ এখন লকডাউনে ঘরের মধ্যে বন্ধি। অথচ মাত্র এক-দেড় সপ্তাহ আগেও পরিমাণটা ছিল ৫০ ভাগেরও কম। এখনও পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে ২ লাখ ১৬ হাজার আক্রান্ত এবং মৃত্যু ঘটেছে ৫৩১৯ জনের।

যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের প্রতিটিই করোনা আক্রান্ত। প্রতিটি রাজ্যেই তাই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কর্মহীন মানুষের সারি। এর মধ্যে পেনসিলভানিয়ায় ৩ লাখ ৬২ হাজার ১২ জন, ওহিওতে ১ লাখ ৮৯ হাজার ২৬৩ জন, ম্যাসাচুসেটসে ১ লাখ ৪১ হাজার ৩ জন।

ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রায় ৯ লাখ মানুষ কর্মহীন হওয়ার কারণে সরকারী সুবিধা চেয়ে আবেদন করেছে। মিশিগানে নতুন করে আবেদন করেছে ৩ লাখ ১১ হাজার মানুষ, ফ্লোরিডায় আবেদন করেছে ২ লাখ ২৭ হাজার মানুষ। সবচেয়ে কম সম্ভবত- সাউথ ডাকোটায়। সেখানে আবেদন জমা পড়েছে ৬ হাজার ৬৪৫টি।