‘ওসি প্রদীপকে পরামর্শ দেয়ায় আমি অনুতপ্ত’

চট্টগ্রাম সংবাদদাতা: ‘মেজর (অব.) সিনহা হত্যাকাণ্ডের পর মামলা সাজাতে টেলিফোনে ওসি প্রদীপকে আইনি পরামর্শ দেয়া খুব খারাপ কাজ হয়েছে’— এমনটি মনে করছে সাবেক এসপি আল্লাহ বকশের পরিবার ও স্বজন। একই সঙ্গে নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে দুঃখও প্রকাশ করেছেন আল্লাহ বকশ।

মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি, চট্টগ্রাম শাখার প্যাডে গণমাধ্যমে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘গত ১ আগস্ট টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপের সঙ্গে ফোনালাপের বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর মিডিয়া ও সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবও এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন। অনেকে আমি খুব খারাপ কাজ করেছি বলে ধারণা করছেন।’

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তিনি আরও বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারদের সঙ্গে কর্মরত পুলিশ অফিসাররা বিভিন্ন সময় পরামর্শ চেয়ে থাকেন। ওইদিনও ওসি প্রদীপ তার মতো করে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আইনি পরামর্শ চেয়েছিলেন।’

ওসি প্রদীপ আসল ঘটনা গোপন করেছিলেন বলে উল্লেখ করে আল্লাহ বকশ বলেন, ‘ওইদিন ওসি প্রদীপ টেলিফোনে যা বলেছেন, তার পরিপ্রেক্ষিতেই পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। মূলত, প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা হয়েছিল।’

এছাড়া আইনি পরামর্শ দেয়ার সময় সেনাবাহিনীর প্রসঙ্গে তার ‘অবজ্ঞাসূচক’ মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার বাচনভঙ্গি বিকৃত হয়, যা আমার অনিচ্ছাকৃত স্লিপ অব টাং। এতে আমি অনুতপ্ত, মর্মাহত। আমার মাধ্যমে তাদের অবজ্ঞা করার প্রশ্নই আসে না।’

‘আমি এজন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি’— বলেন সাবেক এ পুলিশ কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, আল্লাহ বকশ চৌধুরী পুলিশ সুপার পদ থেকে ছয় বছর আগে অবসরে যান। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি, চট্টগ্রাম শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তার গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা লালানগর ইউনিয়নে। তার ছোট ভাই খোদা বকশ বিএনপি সরকারের সময় পুলিশের আইজিপি ছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দীর্ঘদিন কারাভোগ করে বর্তমানে জামিনে আছেন বলে জানা গেছে।

গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এরপর ৩ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ঘটনার তদন্তে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত দল গঠন করে।

৫ আগস্ট নিহত সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ বিচারিক হাকিমের আদালতে পুলিশের বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয়জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওইদিন রাতেই টেকনাফ থানায় মামলাটি নথিভুক্ত হয়।

৬ আগস্ট বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত ও ওসি প্রদীপসহ মামলার সাত আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। এতে র‌্যাব আদালতে প্রত্যেক আসামির বিরুদ্ধে ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করলে বিচারক লিয়াকত, প্রদীপ ও দুলালকে সাতদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর এবং চারজন আসামিকে দুদিন করে কারা ফটকে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন। এছাড়া অনুপস্থিত থাকা মামলার অপর দুই আসামিকে পলাতক দেখিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।

জেলা পুলিশের ভাষ্য, পলাতক এএসআই টুটুল ও কনস্টেবল মোস্তফা নামের কোনো পুলিশ সদস্য বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্র ও টেকনাফ থানায় কর্মরত ছিল না।