একটু হলেও দুদকে জনআস্থা বেড়েছে -দুদক চেয়ারম্যান

দুদকের মামলায় সাজার হার ৭৭%

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, আমরা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চাই। নিজেদের কাজের জবাবদিহিতাও চাই। তিনি বলেন, দুর্নীতি আগের চেয়ে কমেছে। তবে অভিযোগ বেড়েছে। দুদকের ব্যাপারে জনগণের আস্থা একটু হলেও বেড়েছে বিধায় দুদকে অভিযোগ বেড়েছে।

রোববার দুদক কার্যালয়ে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, গত অক্টোবর পর্যন্ত দুদকের সবকিছু ঊর্ধ্বমুখী। এটার কারণ জনআস্থা। দুদকে অভিযোগ করলে কিছু একটা ব্যবস্থা হলেও হতে পারে- এ ধারণা আমরা তৈরি করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, ফাঁদ মামলা বেড়েছে। যারা সরকারি কর্মকর্তা, জনগণের টাকায় বেতন পান কিন্তু কাঙ্খিত সেবাটা দিচ্ছেন না, দুর্নীতির প্রস্তাব গ্রহণ করছেন এবং ঘুষ নিচ্ছেন, তারা ফাঁদ মামলায় পড়ছেন। ঘুষ বন্ধ হয়নি, তবে ঘুষের মাত্রা কমেছে এ ফাঁদ মামলার কারণে।

গণশুনানি সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, অনেকগুলো গণশুনানি হয়েছে। গণশুনানিতে আমরা নিজস্ব রিসোর্স ব্যবহার করেছি। গণশুনানির কারণে জনগণের মধ্যে অভিযোগ করার যে অধিকার, ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়ার যে অধিকার সেটা বেড়েছে। আমরা মনে করি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা গণশুনানিতে অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যেও সচেতনতা তৈরি হয়েছে। জনগণের মধ্যে সেবা পৌঁছে দেয়ার বিষয়টিও তারা অনুধাবন করতে পারছেন। অনেক সমস্যার সমাধানও গণশুনানিতে আমরা নিষ্পত্তি করেছি।

তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত অভিযোগ পাচ্ছি, কাজ করছি। আগে সংবাদপত্রেই আমাদের নির্ভরতা ছিল। কিন্তু এখন ফেসবুক, ই-মেইল, চিঠি, পত্রিকার মাধ্যমেও অভিযোগ পাচ্ছি। সবকিছু মিলে সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের সক্ষমতাও বেড়েছে। দুর্বল শক্তিশালী সবমিলে মামলার সংখ্যাও বেড়েছে। যদিও মামলায় শাস্তির পরিমাণ না বাড়লেও কমেনি।

দুদক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত শেষ করতে কাজ করছে বলে জানান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, একান্তই যেসব মামলার ক্ষেত্রে পারছি না, সেখানে শুধু সময় নিচ্ছি। আমাদের জনবলের ঘাটতি রয়েছে। বিশেষ করে তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কম। আমরা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছেড়েছি। আশা করছি, দ্রুতই এ ঘাটতিও কাটাতে পারব।

জনবলের অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে নয়, বিদেশেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। জাতিসংঘের মাধ্যমে দেশেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। হংকং, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, জাপানসহ অনেকে দেশে আমাদের প্রশিক্ষণের টিম গেছে।

তিনি বলেন,‘আমরা স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা রাখিনি। অভিযোগ গ্রহণের বিষয়টি চলমান। ইচ্ছা করলেই কেউ অভিযোগ গ্রহণ করতে পারেন না, আবার ইচ্ছা করলেই ফেলে দিতে পারেন না। আগে এটা ছিল না। এমনও হয়েছে আগে অনেক অভিযোগেও হদিসও মিলত না। এখন সব হদিস পাবেন। তথ্যগত সহায়তাও আমরা দিচ্ছি যথাযথ প্রক্রিয়ায়।

তিনি আরও বলেন, সাক্ষীর সুরক্ষার বিষয়টিও দুদক গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কর্মকর্তাদের বলেছি, সুরক্ষা দিতে। মানি লন্ডারিং একটা বড় বিষয়। আমরা যথেষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আমরা ৩৪টি মামলার চার্জশিট দিয়েছি, শতভাগ শাস্তি হয়েছে। আইনের ভাষায় বা কমিশনের ভাষায় ‘দায়মুক্তি’ বলে কোনো শব্দ নেই। আমরা অভিযোগ অনুসন্ধানের পর্যায়ে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়, সে ব্যাপারে সজাগ রয়েছি। কারণ, অভিযোগ প্রমাণসাপেক্ষ। তার আগে কারও সামাজিক সম্মান ক্ষুন্ন করা যায় না। আমরা ‘দায়মুক্তি’ না বলে ‘অভিযোগের সারবত্তা নাই’ বলাই ভালো” বলেন দুদক চেয়ারম্যান।