উইঘুর মুসলমানদের জন্ম নিয়ন্ত্রণে বাধ্য করছে চীন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনে যুগ যুগ ধরে নির্যাতিত মুসলিম জনগোষ্ঠী উইঘুরদের জন্মহার নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে কট্টর মুসলিমবিদ্বেষী চীন সরকার। নতুন এক তদন্তে দেখা গেছে, মুসলমান জনসংখ্যা সীমিত রাখতে উইঘুর মুসলিম নারীদের বিস্তৃত ও কাঠামোগতভাবে জন্মনিয়ন্ত্রণে বাধ্য করা হচ্ছে। এমনকি গর্ভপাতে বাধ্য করা হচ্ছে হাজার হাজার মুসলিম নারীদের।
সরকারি পরিসংখ্যান, রাষ্ট্রীয় নথি, সাবেক বন্দি, পরিবারের সদস্য এবং ডিটেনশন ক্যাম্পের সাবেক পরামর্শকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে এই অনুসন্ধান চালিয়েছে মার্কিন বার্তা সংস্থা এপি।

উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক রাখায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার মধ্যে রয়েছে চীন। ধারণা করা হয়, পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় দশ লাখ উইঘুর ও অন্য গোত্রের মুসলিমদের এসব ক্যাম্পে আটক রেখেছে চীন। বেইজিং কর্তৃপক্ষ এগুলোকে ‘পুনঃশিক্ষা কেন্দ্র’ আখ্যা দিয়ে থাকে। তবে এসব ক্যাম্পে নিপীড়নের বহু অভিযোগ রয়েছে।

এপি’র অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চীন নিয়মিতভাবে মুসলিম নারীদের গর্ভ পরীক্ষা এবং বন্ধ্যাত্বে বাধ্য করেছে। বহু মানুষকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানোর অন্যতম কারণ বেশি সন্তান থাকা। তিন বা তার বেশি সন্তান থাকলে বিপুল পরিমাণ জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে বাবা-মায়েদের ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। আবার লুকিয়ে রাখা সন্তান খুঁজে বের করতে পুলিশ বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালায়, বাবা-মাকে ভয়ও দেখায়।

এপি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে চীনা বংশোদ্ভূত কাজাখ নারী গুলনার ওমিরজাখ জানিয়েছে, তার তৃতীয় সন্তান জন্মের পর চীন সরকার তাকে আইইউডি প্লান্ট (জন্মনিয়ন্ত্রণের স্থায়ী পদ্ধতি) গ্রহণের নির্দেশ দেয়। দুই বছর পর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে সামরিক পোশাকের চার কর্মকর্তা তার বাড়িতে হাজির হয়। তারা সবজি বিক্রেতার স্ত্রী ওমিরজাখকে দুই সন্তানের বেশি থাকায় তিন দিনের মধ্যে দুই হাজার ৬৮৫ ডলার জরিমানা পরিশোধের নির্দেশ দেয়। না দিতে পারলে তাকে তার স্বামীর সঙ্গে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়।

চীন সরকারের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেখা গেছে, উইঘুর অধ্যুষিত হোতান ও কাসগার অঞ্চলে জন্মহার ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে ৬০ শতাংশ কমে গেছে। জিনজিয়াং প্রদেশজুড়ে গত বছরই জন্মহার কমেছে ২৪ শতাংশ। আর এগুলো সবই কৃত্রিমভাবে কমছে।