সৌদি আরবের হিংসাত্মক যুদ্ধের শিকার ইয়েমেনের ইসলামী শিল্প, ঐতিহ্য ও ইতিহাস

নিউজ নাইন২৪, ডেস্ক: আরব বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু হলো ইয়েমেন। আবার একই সঙ্গে দেশটি স্বয়ংসম্পূর্ণও। ইসলামী চেতনায় উজ্জীবিত দেশটির জনগনের মধ্যে ধনী-গরিবের সৌহার্দপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা বেশ প্রশংসনীয়। ইমেনের স্থাপনা শিল্প বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়ার মতো। তবে এই স্থাপনা শিল্প আজকের নয়, হাজার বছরের ঐতিহ্য। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে ইয়েমেন স্থাপনা শিল্পের নিদর্শন, প্রাকৃতি সৌন্দর্যের দেশ ও শান্তিপূর্ণ মুসলিম দেশ হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।

দেখে নিন ইয়েমেনের হাজার বছরের ঐতিহ্যমাখা স্থাপনা শিল্পের কিছু ছবি-

53528f12eedc45e58d4bf520a62659fb alalam_635698210375273442_25f_4x3 e30e4bb1fdb72e1393705a90812e2d91

এই ইয়েমেনেই কিনা প্রতিবেশী দেশ সৌদি আরব হুতি বিদ্রোহী দমন নামে যুদ্ধ চালিয়েছে দীর্ঘ ছয়মাস। যুদ্ধের ছয় মাসে দেশটির উপরে বিমান হামলা চালিয়েছে ভ্রান্ত ওহাবী মতবাদের অনুসারি দেশ সৌদি আরব। যদিও সৌদি আরবের নিজস্ব কোন সেনাবাহিনী নেই, তারা মার্কিন ও ইসরাইলের সেনাবাহিনীকে অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করে। মার্কিন-ইসরাইলের সহযোগীতায় বিমান হামলা শুরু হয় বিদ্রোহী হুতিরা রাজধানী সানা দখল করে নেয়ার পর। ছক অনুযায়ী বিদ্রোহীরা সানা দখল করে নিলে রাষ্ট্রপতি আব্দু রাবু মানসুর হাদী বন্দর নগরী এডেনে পালিয়ে যান। সেখান থেকে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে গিয়ে আশ্রয় নেন।

গত ৯ মে সৌদি যুদ্ধ বিমান সাদাহ শহরের ইমাম আল হাদি মসজিদকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করে। এই অঞ্চলে হুতিদের শক্ত অবস্থান রয়েছে। ইয়েমেনের পুরোনো মসজিদগুলোর মধ্যে এটির অবস্থান তৃতীয়। ১২০০ বছর আগে এটি নির্মিত হয়েছিল।

ছবি: ১২শ বছর পূর্বে নির্মিত ইমাম আল হাদি মসজিদ
ছবি: ১২শ বছর পূর্বে নির্মিত ইমাম আল হাদি মসজিদ
সৌদি আরবের বোমা হামলার পরে বিক্ষত ইমাম আল হাদি মসজিদ
সৌদি আরবের বোমা হামলার পরে বিক্ষত ইমাম আল হাদি মসজিদ

২৫ মার্চ থেকে বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর শেষ পর্যন্ত ১০ হাজারেরও বিশ শান্তিপ্রিয় মানুষ নিহত হয়েছেন। যুদ্ধের কারণে ঘরবাড়ি হারিয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি ইয়েমেনি। তাছাড়া দেশটির ২১.১ মিলিয়ন মানুষের (মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ) মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আর এসব পরিসংখ্যান উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক সংস্থা ইউএনওসিএইচএ-র সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে।

২৫ মে সৌদি হামলায় ধামার আঞ্চলিক জাদুঘর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়। এতে হিমিওরাইট সভ্যতার হাজার হাজার শিল্পকর্ম ধ্বংস হয়ে যায়।

ধামার জাদুঘর

ধামার জাদুঘরে হিমিওরাইট সভ্যতার ১০ হাজারের বেশি শিল্পকর্ম ছিল। এটার অবস্থান জাফর অঞ্চলের পাশে। সৌদি মিসাইল সেটা ধ্বংস করে দিয়েছে।

ইয়েমেনে প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল মারেব বাঁধ। এটি প্রাচীন বিশ্বের বিস্ময়কর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নিদর্শন, যা আমাদের মনে করিয়ে দেয় রাণী শেবা’র শাসনকালকে। গত জুন মাসে সৌদি বিমান হামলায় এটি ধ্বংস হয়ে যায়। বাঁধটি প্রথম নির্মিত হয় খ্রীষ্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে, মারিব শহরে। শহরটি রাণী শেবা’র রাজধানী ছিল।

সৌদি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ইয়েমেনের সাংস্কৃতিক সম্পদগুলো। হুদাইদা প্রদেশের বাজেল শহরের প্রাচীন আল-শারীফ দুর্গের ছবি। সৌদিরা তিনগুণের বেশি আক্রমণ চালিয়েছে।

সৌদি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ইয়েমেনের সাংস্কৃতিক সম্পদগুলো। হুদাইদা প্রদেশের বাজেল শহরের প্রাচীন আল-শারীফ দুর্গের ছবি। সৌদিরা তিনগুণের বেশি আক্রমণ চালিয়েছে।

মে মাসের ২৪ তারিখে হুদাইদা প্রদেশের বাজেল শহরের প্রাচীন আল-শারীফ দুর্গ দু’বার সৌদি বিমান হামলার শিকার হয়।

তায়েজ শহরের আল-কাহেরা দুর্গ
হামলার আগে ও পরে: ৮০০ বছরের পুরোনো আল-কাহেরা দুর্গ।

তায়েজ শহরের আল-কাহেরা দুর্গটি ছিল দেখার মতো। সেখানে দাঁড়িয়ে শহরের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যেত। ৫ জুন সৌদি বিমান হামলায় সেটাও ধ্বংস হয়ে যায়। হুতি বাহিনী এবং ক্ষমতাচ্যুত রাষ্ট্রপতি আলী আবদুল্লাহ সালেহ দুর্গটিকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতেন। এখান থেকেই তারা শহরে অবস্থানকারী প্রতিদ্বন্দ্বীদের ওপর গোলা নিক্ষেপ করতেন।

ইয়েমেন পোস্ট নিউজপেপার দুর্গটি ধ্বংস হওয়ার আগে ও পরের ছবি পোস্ট করেছে। ছবিতে ফুটে উঠেছে সৌদি হামলায় দুর্গটির কী হাল হয়েছে।

4bk1443f8591122c5r_620C350
মুসলিম দেশ ইয়েমেনে ইহুদীপন্থী সৌদির হামলা

 

Smoke rises during an air strike on an army weapons depot on a mountain overlooking Yemen's capital Sanaa, April 20, 2015. REUTERS/Khaled Abdullah
Smoke rises during an air strike on an army weapons depot on a mountain overlooking Yemen’s capital Sanaa, April 20, 2015. REUTERS/Khaled Abdullah
মুসলিম দেশ ইয়েমেনে ইহুদীপন্থী সৌদির হামলা
মুসলিম দেশ ইয়েমেনে ইহুদীপন্থী সৌদির হামলা

sanaa-old-city

Old City of Sana’a, a UNESCO world heritage site: the remains of vegetable merchant Haifthallah Al-Aynis’ home which was hit by a Saudi Arabia-led coalition airstrike in late September 2015. Haifthallah, his wife and their children were killed whilst eating their last meal of the day.
Old City of Sana’a, a UNESCO world heritage site: the remains of vegetable merchant Haifthallah Al-Aynis’ home which was hit by a Saudi Arabia-led coalition airstrike in late September 2015. Haifthallah, his wife and their children were killed whilst eating their last meal of the day.
A man walks past houses damaged by Saudi-led airstrikes in Yemen's northwestern city of Saada May 26, 2015. Picture taken May 26, 2015. REUTERS/Stringer
A man walks past houses damaged by Saudi-led airstrikes in Yemen’s northwestern city of Saada May 26, 2015. Picture taken May 26, 2015. REUTERS/Stringer
SANAA, YEMEN - JULY 4: Destroyed buildings in Bab al-Yemen which are declared as World Heritage Site by the United Nations, are seen after Saudi-led coalition launches airstrikes in Yemens capital, Sanaa, on July 4, 2015. (Photo by Mohammed Hamoud/Anadolu Agency/Getty Images) Yemen airstrike saudi-led coalition Yemen s capital Sanaa World Heritage Site
SANAA, YEMEN – JULY 4: Destroyed buildings in Bab al-Yemen which are declared as World Heritage Site by the United Nations, are seen after Saudi-led coalition launches airstrikes in Yemens capital, Sanaa, on July 4, 2015. (Photo by Mohammed Hamoud/Anadolu Agency/Getty Images)

সৌদির বিমান হামলার পর বিদ্ধস্ত ইমেনের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন নগরি

সৌদি হামলায় ইয়েমেনজুড়ে যে ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস হচ্ছে তা ১২ জুনের সকালের আগ পর্যন্ত বিশ্ববাসী কেউই জানতোই না। ওইদিন সকালে পুরোনো সানায় ইউনেস্কোর তালিকাভুর্ক্ত স্থাপনায় সৌদি মিসাইল আঘাত হানে। এতে ৯ হাজার মাটির ঘর ধ্বংস হয়। এগুলো ১১ শতকের পূর্বে নির্মিত হয়েছিল। সৌদি বিমান হামলায় ৩ হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্যগুলো ধ্বংস হওয়ার খবরে বিশ্ববাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে। তাছাড়া বেশিরভাগ ইয়েমেনি তাদের গর্বের স্থাপনাগুলো ধ্বংস হওয়ায় বিচলিত বোধ করেন।

শুধু দেশটির মানুষজনই যুদ্ধের ভয়াবহতার শিকার হননি। দেশটির ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক স্থাপনাগুলোও ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। ভ্রান্তমতবাদ ওহাবীপন্থী সৌদির আগ্রাসন নিরপরাধ  ইয়েমেনি জনগণকে হত্যা আর মুসলিম ঐতিহ্য ধ্বংস করা ছাড়া আর কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি।

ইউনেস্কো প্রাচনী নগরী সানা নিয়ে একটি ভিডিও করেছে, যেখানে পুরোনো সানা’র ঐতিহ্যগুলো উঠে এসেছে: