ইন্টারনেট ডাটা মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে এনটিএমসি

ইন্টারনেট ডাটা মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে এনটিএমসি

নিউজ ডেস্ক: ইন্টারনেট ডাটা মনিটরিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)। এতদিন শুধু ভয়েস কল মনিটরিং করার সুযোগ থাকলেও এবার ইন্টারনেট ডাটার মাধ্যমে ব্যবহৃত বেশির ভাগ যোগাযোগ মাধ্যমও নিবিড়ভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হবে। জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে। দেশে বর্তমানে ১১ কোটিরও বেশি ইন্টারনেট গ্রাহক রয়েছেন। এদিকে দেশের প্রযুক্তিবিদদের দাবি এরইমধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ওই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বেশ কয়েক মাস ধরেই ইন্টারনেট ডাটা দিয়ে গ্রাহকরা যেসব যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন তার বেশির ভাগই মনিটরিং করা হচ্ছে। তারা জানিয়েছেন, ওই প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন অ্যাপসের সাহায্যে করা চ্যাট, ই-মেইল খুব সহজেই নজরদারি করা সম্ভব হচ্ছে।

এর ফলে শ্বাসরুদ্ধকর জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইন্টারনেট ব্যবহারকে। সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ নিয়ে প্রতিবেদনটি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব (প্রশাসন-১ অধিশাখা) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম মজুমদার। প্রতিবেদনে ইন্টারনেট ডাটা মনিটরিং প্রসঙ্গে বলা হয়েছে- জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় অর্পিত দায়িত্ব পালনে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, তদন্তকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থাসমূহকে নিরবচ্ছিন্ন আইনানুগ ইন্টারসেপশন সুবিধা প্রদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি শক্তিশালী ইন্টারসেপশন প্ল্যাটফরম প্রতিষ্ঠা করার জন্য নতুন ইন্টাগ্রেটেড ল’ফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেম (আইএলআইএস) প্রযুক্তি স্থাপনের প্রকল্প কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে।

নতুন এই আইএলআইএস প্রকল্পের কার্যপরিধিতে ইন্টারনেট ডাটা মনিটরিংয়ের সুবিধাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা পূর্বে স্থাপিত এমসিএনজি এলআই সিস্টেম-এর মাধ্যমে পরিচালিত মনিটরিংয়ের আওতার বাইরে ছিল। ইন্টারনেট ডাটা মনিটরিংয়ের কারণে উল্লেখযোগ্য সুবিধা পাওয়া যাবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব সুবিধার মধ্যে রয়েছে-দেশের সকল টেলিযোগাযোগ মাধ্যমসমূহকে কেন্দ্রীয় কমান্ড, কন্ট্রোল অ্যান্ড মনিটরিং সিস্টেমের মাধ্যমে সকল যোগাযোগ কার্যক্রম (ভয়েস এবং ডাটা) পর্যালোচনা ও মনিটরিং করে জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত হবে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে-বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নির্দেশিত ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিটি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তাদের অপারেশনাল কাজের সহায়তা প্রদানের জন্য এনটিএমসি’র এই ইন্টেলিজেন্স প্ল্যাটফরম সুবিধা প্রদান করবে। বর্তমানে মোবাইল অথবা পিএসটিএন ফোন কল এবং ডাটা মনিটরিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্য-উপাত্তের মধ্যে কো-রিলেশন করার জন্য জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনে অত্র সংস্থা দেশের সকল প্রকার ডাটাবেজ-এর সঙ্গে সংযোগ প্রাপ্তির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে দেশের সকল ডাটাবেজে সংরক্ষিত ডাটা বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি ন্যাশনাল প্ল্যাটফরম হিসেবে এনটিএমসি-তে বসেই অপরাধী অথবা অপরাধীচক্রের কাজের বিভিন্ন প্যাটার্ন বা ধরন বের করা দ্রুত সম্ভব হবে। উক্ত যুগান্তকারী পদক্ষেপ দেশে ভবিষ্যতে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি করবে। প্রতিবেদনে ওই প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়-ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সাইবার নিরাপত্তা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

বাংলাদেশ তথা বিশ্বব্যাপী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইন্টারনেটের উন্মুক্ত মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে রাষ্ট্রবিরোধী গুজব ছড়িয়ে অপরাধীরা কিংবা বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে পর্নোগ্রাফিসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদানসমূহ ছড়িয়ে পড়ছে যা রাষ্ট্রের জনগণের নৈতিকতার অবক্ষয় তথা জাতীয় নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করছে। আর তাই ইন্টারনেট মাধ্যমগুলোকে সাইবার অপরাধমুক্ত ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে এনটিএমসিতে কন্টেন্ট ফিল্টারিং অ্যান্ড ব্লকিং ব্যবস্থা চালুর প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে যা বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এদিকে দেশের প্রযুক্তিবিদদের দাবি এনটিএমসি যে প্রকল্পের কথা বলছে তা ইতিমধ্যেই চালু করা হয়েছে। গ্রাহকদের ইন্টারনেট ডাটা নিবিড়ভাবে মনিটরিং করছেন তারা। এ প্রসঙ্গে প্রযুক্তিবিদ ও ফাইবার অ্যাট হোমের চিফ স্ট্রাটেজিক কর্মকর্তা সুমন আহমেদ সাব্বির মানবজমিনকে বলেন, শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই ইন্টারনেট ডাটা মনিটরিং করা হয়। আগে আমাদের দেশে ভয়েস কল মনিটরিং করা হতো। সম্প্রতি যোগ হয়েছে ইন্টারনেট ডাটাও। এর ফলে অনেক কন্টেন্ট গ্রাহকরা দেখতে পারেন না। এর কারণও তারা জানেন না। মনিটরিং করতে গিয়ে ভুলবশত অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে ওইসব কন্টেন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। কিন্তু এসব বিষয়ে গ্রাহকদের বিন্দুমাত্র অবহিত করা হয় না। তবে এটা করা উচিত। তিনি বলেন, ইন্টারনেট ডাটা মনিটরিংয়ের কারণে আমাদের প্রাইভেসি নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করি। আসলে আমরা শ্বাসরুদ্ধকর জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি ইন্টারনেট ব্যবহারকে।